১৭ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৪৭

আমদানি ইস্যু তুলে পেঁয়াজ-নৈরাজ্য

দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটে না। মৌসুমে ফলন ভালো থাকলে আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদা থাকে না বললেই চলে।

তবে দেশি পেঁয়াজের ঘাটতি হলেই বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রচুর পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আমদানি বাড়িয়ে বা কমিয়ে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে।
রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, যা সপ্তাহখানেক আগেও ছিল ৪০ টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ১৩.৪০ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২১.২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

প্রায় ১০ দিন ধরে পেঁয়াজের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সংকট তৈরি হয়েছে। আমদানিও নেমে এসেছে অর্ধেকে। এর প্রভাবে দেশের বাজারে

করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ১৩.৪০ শতাংশ এবং আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ২১.২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।

প্রায় ১০ দিন ধরে পেঁয়াজের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সংকট তৈরি হয়েছে।

আমদানিও নেমে এসেছে অর্ধেকে। এর প্রভাবে দেশের বাজারে দাম বেড়ে গেছে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক হারুন-উর-রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের পাটনা, বিহার, কানপুর, ইন্দোর, রাজস্থান ও গুজরাট এলাকা থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। আগে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হলেও এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারণ ভারতের ওই সব প্রদেশে পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। বর্তমানে শুধু ভারতের নাসিক ও বেঙ্গালুরু থেকে পেঁয়াজ আসছে। নাসিক থেকে গত সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৭ রুপিতে কিনতে পারলেও এখন তা ৩০ রুপি হয়ে গেছে। একই ধরনের তথ্য দেন আরেক আমদানিকারক বাবলুর রহমান।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, দিনাজপুরের এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে নিয়মিত পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। তবে আগের তুলনায় কিছুটা কম। গত ৩ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত ৯ দিনে এই বন্দর দিয়ে মোট তিন হাজার ৬৩৮ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ১২ হাজার ৯৫৩ টন ও আগস্টে ১৫ হাজার ৬৯ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়।

রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে গতকাল সোমবার পাইকারি পেঁয়াজের বাজার ঘুরে ভারতীয় পেঁয়াজের ঘাটতির কথা জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। পরিমাণমতো পাওয়াও যাচ্ছে না। আনিস মিয়া নামের এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, পেঁয়াজ কম আসছে বলে অনেক দোকানই প্রায় খালি।

কারওয়ান বাজারেই পাইকারি বিক্রেতাদের মধ্যে যাঁরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তাঁদের দোকানে প্রচুর পেঁয়াজ দেখা গেছে। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এখন সিজন শেষ, তাই দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও কমে গেছে। কামাল হোসেন নামের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী বলেন, এখন তো সিজন শেষ, দাম বাড়বেই। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। মগবাজারের মুদি দোকানি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। ’

বাস্তবতা হলো, কোরবানির ঈদ ও পূজার আগের সময়টায়ও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা একই যুক্তি দেখিয়েছেন। অবশ্য তখন পর্যন্তও এসব পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কম ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে অন্যান্য সময়ের মতোই দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ দেখা গেছে। এর পরও ব্যবসায়ীরা আমদানি করা পেঁয়াজের ইস্যু তুলে কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়ত ব্যবসায়ী মো. ইদ্রিস কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ আগের মতোই আছে। তবে ভারতীয় পেঁয়াজের যে সংকট তার চাপ পড়েছে কিছুটা। আর আমাদের ব্যবসায়ীদের অতিলোভের মনোভাব তো আছেই। সে কারণে দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, আগেরবার যখন পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল তখন অনেক আমদানিকারকই ইরান ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ এনে লোকসান গুনেছে। যে কারণে তারা আর বিকল্প দেশ থেকে আমদানিতে উৎসাহিত হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একটির কারণে অন্যটির চাহিদা বাড়লে দামও বাড়বে। তবে যে পেঁয়াজের সংকট এর চেয়ে স্বাভাবিক সরবরাহের পেঁয়াজের দামে বেশি প্রভাব পড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। এটি কেবলই অতি মুনাফার পাঁয়তারা। আর দেশের ব্যবসায়ীদের বড় একটা অংশ এই অপতৎপরতা সব সময়ই চালিয়ে থাকে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/10/17/554558