১৬ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ৭:১৪

সবজির বাজার পাইকারি খুচরায় দ্বিগুণ ফারাক

রাজধানীর বাজারগুলোতে নানা অজুহাতে গত এক মাসে প্রায় সব ধরনের শাক-সবজির দাম দুই থেকে তিনগুণ বেড়েছে। বিশেষ করে খুচরা বাজারে কাঁচামরিচের কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ এসব সবজির দাম পাইকারি বাজারে অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে। অর্থাৎ সবজির পাইকারি বাজারে যে দরে বিক্রি হচ্ছে তার দ্বিগুণের বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।

পাইকারি ও খুচরা বাজারে দরের এ ব্যবধানের জন্য পরিবহন ব্যয়, দোকান ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কারণকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কাঁচা পণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কাওরান বাজার। গতকাল এ বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকা। পটোল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ও ধুন্দুল ৪০, পেঁপে কেজিপ্রতি ১২, কচুরমুখি কেজিপ্রতি ৯, করলা কেজিপ্রতি ২৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মেহেরপুর থেকে কাওরান বাজারে দুটি ট্রাকভর্তি ফুলকপি ও বাঁধাকপি নিয়ে এসেছেন আজম মিয়া। তিনি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে প্রতি পিস ফুলকপি মানভেদে বিক্রি করছেন ২০ থেকে ২৫ টাকায়। আজম মিয়া বলেন, আমরা ১০ টাকায় কিনে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করছি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। খুচরা বিক্রেতারাও ২০ টাকায় নিয়ে বিক্রি করবেন দ্বিগুণ দামে। পারলে এর চেয়ে বেশি দামেও বিক্রি করবেন।

দরের এ ব্যবধান সম্পর্কে এই ব্যবসায়ী বলেন, পরিবহন ব্যয়, দোকান ভাড়া, বিভিন্ন ধরনের চাঁদা দেয়ার পর সামান্যই লাভ হয়। তবে পাইকারি ও খুচরা বাজারের মধ্যে কিছু পণ্যের দামের ব্যবধান বেশি। যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি সেসব পণ্যে এমনটি হয় বলে জানান তিনি।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, খুচরা বিক্রেতাদের অনেকেই সবজি ক্রয় করতে আসেন কাওরান বাজারে। এখানে পাইকারি বাজারের মাত্র ১০০ গজ দূরে অবস্থিত সিটি করপোরেশনের কাওরান বাজার সুপার মার্কেট। আশেপাশের হাজার হাজার ক্রেতা প্রতিদিন কাঁচাবাজার করতে আসেন এখানে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, পাইকারি বাজার থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে এলেই প্রতি কেজি সবজি বিক্রি হয় পাইকারির দ্বিগুণ দামে।
কাওরান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আড়তে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা দরে। ১০০ গজ দূরে খুচরা বাজারে একই বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। পাইকারি বাজারে যে আলু ১০ থেকে ১৮ টাকা কেজিদরে বিক্রি করা হচ্ছে, একই আলু খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৬ টাকা। অর্থাৎ দ্বিগুণেরও বেশি।

কাওরান বাজার পাইকারি বাজারে ঢেঁড়শ কেজিপ্রতি ৪০ টাকা, টমেটো কেজিপ্রতি ৮০, বটবটি কেজিপ্রতি ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা, লম্বা কচু প্রতি পিস ১৫, কাঁচা কলা হালিপ্রতি ১০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। এছাড়া পুঁইশাক আঁটি প্রতি ২০, লালশাক ও পালং শাক ১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতি কেজি ধনিয়া ১৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। অথচ ১০ গজ দূরত্বে এনে খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছেন ঢেঁড়স ৬০-৬৫ টাকা, গাজর ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ১১০ থেকে ১২০ টাকা এবং শিম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া কাকরোল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ঝিঙ্গা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, পেঁপে ৩৫ থেকে ৪০ থেকে টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কয়েকজন জানান, লাভের আশায় একটু বেশি দামে বিক্রি করা হয়। আবার খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে একটু বেশি লাভ করে।
তাছাড়া সবজির দাম ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার পেছনে পণ্য সরবরাহের ঘাটতি আছে কিনা জানতে চাইলে যশোরের পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল খালেক বলেন, কয়েক মাস আগে বন্যার কারণে কিছুটা কাঁচা সবজির উৎপাদনে ঘাটতি হয়েছিল। তবে ইতিমধ্যে শীতকালীন পণ্য উৎপাদন হওয়ায় সরবরাহে তেমন সমস্যা নেই বলে জানান তিনি। এদিকে কুষ্টিয়ার কাঁচা পণ্যের ব্যবসায়ী হযরত আলী বলেন, সবাই কম দামে কিনে কিছু কিছু লাভ করতে চায়। এতেই সবজির দাম বেড়ে যায় বলে স্বীকার করেন এ ব্যবসায়ী।
এমন অস্বাভাবিক মুনাফা করার কারণ জানতে চাইলে কাওরান বাজার সিটি করপোরেশন কাঁচাবাজারের বিক্রেতা সোলায়মান বলেন, পাইকারি বাজার থেকে এখানে আনতে পরিবহন খরচ নেই- এ কথা সত্যি। কিন্তু আমাদের তো খরচ অনেক বেশি। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, পানি-বিদ্যুতের অত্যধিক মূল্য এবং বিভিন্ন ধরনের চাঁদা পরিশোধ করতে গিয়ে পণ্য বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=87725