১৬ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ৭:১১

ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার ১২ দিন পর এল বরাদ্দপত্র

* নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হতে ৭ দিন বাকি। এই সময়ের মধ্যে তালিকা করে চাল বিতরণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জেলেরা

* জেলেদের ২০ কেজি করে চাল দেওয়ার চিঠি পেয়েছেন জেলা প্রশাসকেরা
ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের (১ থেকে ২২ অক্টোবর) নিষেধাজ্ঞার ১২ দিন পার হওয়ার পর উপকূলের জেলেদের ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় ২০ কেজি করে চাল দেওয়ার চিঠি পেয়েছেন জেলা প্রশাসকেরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে গত বৃহস্পতিবার এই বরাদ্দপত্র (ডিও) সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়।

তবে জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার পর ১৫ দিন পেরিয়ে গেছে। এখন এই চাল বিতরণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা তালিকা করবেন। তারপর বিতরণ করতে করতে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এতে এই সহায়তা জেলেদের খুব একটা উপকারে আসবে না বলে জানান তাঁরা।

বরিশাল ও বরগুনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানাচ্ছে, বরাদ্দের এসব চাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মাধ্যমে জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হবে। উপকূলসহ দেশের ২৫টি জেলায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৬২ জন জেলে এই সহায়তা পাবেন।

সূত্র বলছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার দেশের ১১২টি উপজেলার জেলেদের সহায়তায় জন্য ৭ হাজার ৬৮৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠি পাওয়ার কথা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান ও বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. মোখলেসুর রহমান। তাঁরা বলেছেন, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে জেলেদের সহায়তার বরাদ্দপত্র (ডিও) পাওয়ার পর তা সংশ্লিষ্ট ইউএনওর কাছে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দুস্থ জেলেদের তালিকা করে এসব চাল যত দ্রুত সম্ভব বিতরণের উদ্যোগ নেবেন।

বিভাগীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, এবার বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৯৪৩ জন জেলে এই সহায়তা পাচ্ছেন।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা গত বছর থেকে ১৫ দিন বাড়িয়ে ২২ দিন নির্ধারণ করে সরকার। গত বছর ওই সময়ে জেলেদের দুর্দশা লাঘবে সরকার বিশেষ ভিজিএফ কর্মসূচির মাধ্যমে দুস্থ জেলেদের জনপ্রতি ২০ কেজি করে চাল বিতরণের কার্যক্রম হাতে নেয়।

বরগুনা ও বরিশালের কয়েকজন জেলে জানান, তাঁরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু ২২ দিন নদীতে জাল ফেলতে না পারায় তাঁরা পরিবার নিয়ে দুর্দশায় আছেন। বাধ্য হয়ে আইন ভঙ্গ করে নদীতে নামছেন। সহায়তার চাল পেতে বিলম্ব হওয়ায় এবার নিষেধাজ্ঞা কার্যকরে জেলেদের আগ্রহ কম ছিল। গেল বছরের অভিজ্ঞতায় এসব জেলে বলেন, সহায়তার চাল সংশ্লিষ্ট ইউপির জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের পছন্দের লোকদের দেওয়ায় প্রকৃত অনেক জেলে সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ে অনেক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়।

বঙ্গোপসাগর তীরের উপজেলা বরগুনার পাথরঘাটার মঠেরখাল গ্রামের জেলে জাফর হাওলাদার গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা) প্রায় শ্যাষ। এত দিন প্যাডে পাথর বাইন্ধা বউ-বাচ্চা লইয়্যা রইছি। এহন হুনি ২০ কেজি চাউল দেবে। কবে দেবে ঠিক অয় নায়। চাউল হাতে পাইতে পাইতে অবরোধ শ্যাষ অইয়্যা যাইবে।’

বরিশাল সদর উপজেলার চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের জেলে অরুণ সরদার বলেন, ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি জেলে কার্ড পেয়েছেন। কিন্তু কোনো বছরেই তিনি কোনো সহায়তা পাননি। এবারও পাবেন কি না, তা–ও অনিশ্চিত। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর গত ১৫ দিন ৭ সদস্যের পরিবার নিয়ে চরম অনটনের মধ্যে আছেন।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, মা ইলিশ ধরার অপরাধে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় দুই সপ্তাহে (১ থেকে ১৪ অক্টোবর) ৩৯৫ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিভাগীয় মৎস্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক আজিজুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1344556