১৬ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ৬:৫৭

বিশিষ্ট আইনজীবীদের অভিমতপ্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে নজিরবিহীন

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ১১ দফা অভিযোগ উত্থাপনকে সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন দেশের বিশিষ্ট আইনজীবীরা। তারা বলেন, বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনটিকে এভাবে কালিমা লিপ্ত করার ঘটনা দ্বিতীয়টি আছে বলে জানা নেই। তারা বলেন, প্রধান বিচারপতির ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য এ ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। এ অভিযোগ বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে ক্ষুণœ করবে।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আইনমন্ত্রী মিথ্যা বলেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধান বিচারপতি অসুস্থ যা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতির ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি বিব্রত। তিনি বলেন, এগুলো মিথ্যা, হাস্যকর অভিযোগ। প্রধান বিচারপতিকে হেয় করার নজির পৃথিবীর কোথাও নেই।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ অন্যান্য অভিযোগ তদন্তের পর ফলাফলের ওপর মামলার চার্জশিট দেয়া হলে তিনি আর প্রধান বিচারপতির আসনে বসতে পারবেন না। আমি মনে করি, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যে ১১টি অভিযোগ তা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত হওয়া উচিত। শুধু বিবৃতি দিলে হবে না, এ বিষয়ে তদন্ত করতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিবৃতি আসতে পারে। তিনি আরো বলেন, এখন সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সম্পার্কে শফিক আহমেদ বলেন, যেহেতু এ বিষয়ে রিভিউ হবে। বিষয়টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে আসবে কি না তা আলোচনার বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের অপেক্ষা করা উচিত ছিল কি পদ্ধতিতে আইনটি হবে।
এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, রাষ্ট্রপতি যখন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ সম্পর্কে আপিল বিভাগের বর্তমান পাঁচজন বিচারপতিকে দেখিয়েছেন এবং এই অভিযোগগুলো সবই নাকি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে। যদি তা-ই হয় আমি বুঝতে পারছি না কেন সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় সর্বসম্মত হয়ে থাকলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল হয়েছে বলে আমি মনে করি। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে অর্থাৎ ষোড়শ সংশোধনীর রায় যত দিন বলবত থাকবে তত দিন এটা সংবিধান সংশোধন হয়েছে বলে গণ্য হবে। এমন একটি ধারণা আমরা ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের মধ্যেই খুঁজে পাই। কাজেই আসার এই প্রশ্ন বা কৌতূহল রয়েই গেল।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের বিবৃতির বিষয়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমার জানা মতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে এ ধরনের কোনো বিবৃতি দেয়ার রেওয়াজ নেই। কারণ বর্তমান অবস্থার চেয়ে আরো বেশি সঙ্কটপূর্ণ অবস্থায়ও তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি বা তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এ রকম ব্যবস্থা থেকে বিরত ছিল। কজেই সেটা নজিরবিহীন। বর্তমান অবস্থা দেখে আমি শুধু বলব ‘no one should be condemned unheard’
সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, অতীতে সুপ্রিম কোর্টে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি যে প্রধান বিচারপতির দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এটা কেউ দেখেনি। বিচার বিভাগে যা ঘটছে, তা নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। দেশের মানুষ আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কোনো কিছুর জন্য এসব মঙ্গলজনক নয়।

জয়নুল আবেদীন বলেন, রাষ্ট্রপতিও সংবিধান ভায়োলেট (লঙ্ঘন) করেছেন। কেন করেছেন? তিনি (রাষ্ট্রপতি) প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে অন্য বিচারপতিদের ডেকে নিয়েছেন এবং তারপর তাদের বুঝিয়েছেন। এটা সংবিধানে নেই।
এ বিষয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে, এটা জাতির কাছে আরো বেশি সন্দেহপ্রবণ করে তুলেছে। তিনি দেশে থাকা অবস্থায় এ অভিযোগ দেশের মানুষ কেন শোনেনি। যদি তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থেকে থাকে তাহলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ নেয় যেতে পারে। তিনি বলেন, এ মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রমাণ বিএনপির চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে তিনটি আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, যা আইনগতভাবে পারে না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/260425