১৪ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ১১:৫৫

কাউন্সেলিং পাচ্ছে না ব্লু হোয়েল আসক্তরা

ডেথ গেম ব্লু হোয়েল সম্পর্কে অবহিত নন অনেক মনোরোগ চিকিৎসক। ফলে ব্লু হোয়েলে আসক্তরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পাচ্ছে না সঠিক চিকিৎসা। ক্ষেত্রবিশেষে ব্লু হোয়েলে আসক্তদের মৃত্যুর ফাঁদ থেকে ফেরানোর কাউন্সেলিংয়ের বদলে দেয়া হচ্ছে সাধারণ মানসিক রোগীর চিকিৎসা। ব্লু হোয়েলে আসক্ত কিশোর-কিশোরীদের মনোরোগ চিকিৎসকদের কাছ থেকে ফিরে এমন অভিযোগ তুলেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। মাস দেড়েক আগে ব্লু হোয়েলে আসক্ত হয় চৌদ্দ বছরের মেধাবী কিশোর তৌফিকুল ইসলাম সাদাফ। বিষয়টি জানার পর ছেলেকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেন তার মা ইতি ইসলাম। শঙ্কিত হয়ে পড়েন বাবা তানজিলুল ইসলামও। দু’জনই নানাভাবে কাউন্সেলিং করে ছেলেকে ফেরানোর চেষ্টা করেন ব্লু হোয়েল থেকে। শেষে উপায়হীন হয়ে তারা ছুটে যান মানসিক চিকিৎসকের কাছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের

মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ এসআই মল্লিকের ধানমন্ডির ল্যাবএইডের চেম্বারে নিয়ে যান সাদাফকে। গত ১৯শে সেপ্টেম্বর ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসকের চেম্বারে যাওয়ার পর অভিভাবক হিসেবে সাদাফের মা বারবার ছেলে ব্লু হোয়েল গেমে আসক্ত বলে জানান। তবে চিকিৎসক তা আমলে নেননি।
এ বিষয়ে ইতি ইসলাম বলেন, ব্লু হোয়েলের বিভিন্ন ধাপের সঙ্গে আমার ছেলের আচরণ মিলে যাচ্ছিলো। অন্ধকার ঘরে থাকা, তেমন কথা না বলা, ভোরে ঘর থেকে বের হয়ে ছাদে হাঁটা, রাস্তায় দীর্ঘ পথ হাঁটা, ভুতের সিনেমা দেখা, নীল তিমির লোগো আঁকা, ব্লেড দিয়ে হাত খুঁচিয়ে তা আঁকার চেষ্টা করা, হাত ধোয়া, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার ইচ্ছা ব্যক্ত করা। কিন্তু এসব কথা বলতে চাইলেও চিকিৎসক তা কানে না তুলে বলেন, তার কন্ট্রাক ডিজ অর্ডার হয়েছে। সে অনুযায়ী অনেকগুলো টেস্টও দেয়া হয়। রিপোর্ট নিয়ে তার কাছে যেতে বলা হয় গত ১২ই অক্টোবর। কিন্তু তার আগেই মঙ্গলবার রাতে সে ২৭টি ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

ইতি ইসলাম বলেন, চিকিৎসক তার চেম্বারে মাত্র ৫ মিনিটের মতো সময় দেন। তবে আমরা নিশ্চিত হলেও ব্লু হোয়েল আসক্তির কথা চিকিৎসক কানে না তোলায় আমাদের আতঙ্ক ঘোঁচেনি। তাই আমরা আমাদের ছেলেকে হাসিখুশিতে রাখার চেষ্টার পাশাপাশি প্রায় পুরোটা সময়ই পাহারা দিয়ে রাখতাম। এখন মনে হচ্ছে, চিকিৎসক আমার কথা আমলে নিলে হয়তো একটা কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারতেন। তাহলে আজ আর এমন পরিণতি হতো না!
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডে সাদাফের চিকিৎসা দিচ্ছেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন। তিনি সাদাফকে মানসিক রোগ বিভাগে দেখাতে বলেন। তার লেখা ব্যবস্থাপত্রেও সাদাফ ব্লু হোয়েলে আসক্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিকভাবে তাকে দেখেন ঢামেক হাসপাতালের মানসিক রোগ প্র্রধান অধ্যাপক (সিসি) ডা. আব্দুল্লাহ আল-মামুন। কিন্তু তিনিও সাদাফ ব্লু হোয়েলে আসক্ত কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে সাদাফের মা ইতি ইসলাম বলেন, মানসিক বিভাগের চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে আমার ছেলেকে দেখেছেন। কিন্তু সাদাফ ব্লু হোয়েলে আসক্ত কিনা- এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। অথচ আমরা দীর্ঘ দিন ধরে তার আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণ করে যা চোখে দেখেছি তা ব্লু হোয়েলের বিভিন্ন ধাপের সঙ্গে মিলে যায়। চোখে দেখা সত্যকে তো আর আমরা অস্বীকার করতে পারি না।

ইতি ইসলাম বলেন, সাদাফ নিজেও কথার ফাঁকে বহুবার ব্লু হোয়েল গেম খেলার কথা জানিয়েছে। তবে কিছুটা সুস্থ হয়ে সে ব্লু হোয়েলের কথা লুকাচ্ছে। এ অবস্থায় ছেলেকে কীভাবে কাউন্সেলিং করতে হবে- আমরা তা বুঝতে পারছি না।
এদিকে, গতকাল দুপুরে ঢামেক হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। দরজায় তালা। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ কোনো চিকিৎসককে পাওয়া না গেলেও দেখা মেলে রেসিডেন্স চিকিৎসক ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ ও ডা. আফরোজা আক্তারের। ব্লু হোয়েল গেমের আসক্তদের চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে টুম্পা বলেন, এই হাসপাতালে এখন পর্যন্ত ব্লু হোয়েলে আসক্ত কোন রোগী এসেছে- এমনটা শুনিনি। তাছাড়া বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের তেমন কোনো ধারণাও নেই। ফলে এ গেমে আসক্তদের চিকিৎসায় করণীয় কী হবে- তা আমরা বলতে পারছি না।
অবশ্য ডা. আফরোজা বলেন, এটা একটা নতুন সমস্যা। এজনই হয়তো মানসিক রোগের কোনো দিক বা ধরনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কী ধরনের চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং করতে হবে সেই ধারণা বা অভিজ্ঞতা এখনও আমাদের কাছে এসে পৌঁছেনি। একই বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ এস আই মল্লিকের খোঁজ নেয়া হলে তারা জানান, স্যার আমেরিকায় রয়েছেন। একই বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ঝুমু শামসুন নাহারও রয়েছেন কানাডায়।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=87420