১৪ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ১১:৫৪

বগুড়ায় যুবলীগ ক্যাডার নিয়ে শতকোটি টাকার সম্পত্তি দখল

ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অবরুদ্ধ * আজ সকাল ১০টার মধ্যে দখলদারদের সরে যেতে প্রশাসনের নির্দেশ
মারোয়ারি ধর্মশালা কমিটির নামে বগুড়া শহরের সাতমাথায় শতকোটি টাকা মূল্যের ২৮ শতক জায়গা দখল করে নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যুবলীগ ক্যাডারদের সহায়তায় জমি দখল করা হয় বলে জানা গেছে। দখলের পর ওই জমির চারদিকে স্টিলশিট দিয়ে প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ওই এলাকায় রূপালী ব্যাংক জোনাল শাখা, শহর যুবদল অফিস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বেকার হয়ে পড়েছেন শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। জাতীয় পত্রিকার এজেন্টরা পত্রিকা বিক্রি করতে পারেননি। মারোয়ারী ধর্মশালা কমিটির দাবি, আদালতের রায়ে তারা এ সম্পত্তির মালিক। এদিকে জেলা প্রশাসন জমি দখলকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে আজ সকাল ১০টার মধ্যে তা সরিয়ে নিতে বলেছে। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর ২০-২২টি মোটরসাইকেলে যুবলীগ ক্যাডাররা শহরের সাতমাথার টেম্পল রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়। রাত ১টার পর স্টিলশিট এনে ওয়েল্ডিংয়ের মাধ্যমে ওই জায়গার সামনে প্রাচীর দেয়া হয়। এ সময় কাছেই পুলিশের গাড়ি ছিল। বগুড়া শহরের উত্তর চেলোপাড়ার গেঞ্জি ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ জানান, তিনি ২২ বছর ধরে সাতমাথার ওই জায়গায় ব্যবসা করে আসছেন। কয়েকদিন আগে যুবলীগ ক্যাডার মনির হোসেন তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে জায়গা খালি করতে নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেনাবেচা করে বাড়িতে ফিরে যান তিনি। শুক্রবার সকালে এসে দেখেন স্টিলের শিটের প্রাচীর দিয়ে জায়গা ঘেরা। ওপরে মারোয়ারি ধর্মশালা নামে সাইনবোর্ড। রূপালী ব্যাংক বগুড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম হাবিবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত তারা অফিস করেছেন। এ অফিসের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থানে তথ্য বিনিময় করা হয়। কোনো নোটিশ ছাড়াই অফিসের সামনে প্রাচীর দেয়া হয়েছে। জমি দখলের বিষয়ে মারোয়ারি ধর্মশালা কমিটির সভাপতি কল্যাণ প্রসাদ পোদ্দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালতের রায়ে তারা এ সম্পত্তির মালিক। ব্যস্ততম এলাকায় দিনে দখল নিলে সমস্যা হবে। তাই ডেভেলপার সংস্থা রাতে ঘিরে নিয়েছে। আর এ কাজে জেলা যুবলীগ সভাপতি ও জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সহসভাপতি শুভাশীষ পোদ্দার লিটন ও অন্যরা সহযোগিতা করেছেন।’ তবে যুবলীগ সভাপতি লিটন সেখানে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাবলু জানিয়েছেন, তার সংগঠন দখলদারিত্বের সঙ্গে জড়িত নয়। কেউ সেখানে গেলে তার দায়িত্ব সংগঠন নেবে না।

দখল অবৈধ, সরে যাওয়ার নির্দেশ : এদিকে বগুড়া জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সাতমাথায় মারোয়ারি ধর্মশালার নামে দখল করা জায়গাটি অর্পিত ‘ক’ তালিকাভুক্ত সম্পত্তি। সরকারি এ জায়গা দখল করা অবৈধ। জেলা প্রশাসন শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে দখল সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছে। অন্যথায় সাড়ে ১০টায় প্রশাসন দখল উচ্ছেদ করবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে দু’পক্ষের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই দখল থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাবিবুল হাসান রুমি। তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশ পাওয়ার পর উভয়পক্ষকে কাগজপত্রসহ তার কার্যালয়ে ডাকা হয়। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ সম্পত্তি নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। সম্পত্তিটি অর্পিত ‘ক’তালিকাভুক্ত। অর্থাৎ ওই জমি এখনও সরকারের।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

https://www.jugantor.com/news/2017/10/14/163152