১৪ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ১১:৫২

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাই ওভার

উদ্বোধনের দিনক্ষণ নিয়ে অনিশ্চয়তা

দীর্ঘ জনদুর্ভোগের পর অবশেষে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনো যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়নি। আগামী ১৫ অক্টোবর উদ্বোধনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হলেও প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে এ দিন উদ্বোধন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে ফ্লাইওভার নির্মাণসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ভুঁইয়া মানিক গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। গাড়ি চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে এ ফ্লাইওভার। তিনি জানান, ১৫ অক্টোবর ফ্লাইওভার উদ্বোধনের জন্য প্রাথমিকভাবে দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। কবে এটি উদ্বোধন করা হতে পারে সে ব্যাপারে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলেই উদ্বোধন করা হবে বলে জানান মানিক।

প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী সুশান্ত কুমার পাল গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় ১৫ অক্টোবর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার উদ্বোধন করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০ তারিখের পর যেকোনো দিন এটি হতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি জানান, ফ্লাইওভারের মূল অবকাঠামো অনেক আগেই নির্মাণ শেষ হয়েছে। ১৫ অক্টোবরকে টার্গেট করে ১৪ অক্টোবরের মধ্যে অন্যান্য কাজ শেষ করার টার্গেট নেয়া হয়। সে কাজও শেষ হয়ে গেছে। এখন ফ্লাইওভারটি যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করলেই গাড়ি চলতে শুরু করবে। গত ২৮ আগস্ট এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী কোরবানির ঈদের আগে সময় দিতে পারছেন না। ঈদের পরপরই সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি উদ্বোধন করবেন। এরপর সে ফ্লাইওভার দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে। কিন্তু গত ২ সেপ্টেম্বর ঈদের পর এক মাস পার হয়ে গেলেও এটি উদ্বোধন করা সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ফ্লাইওভারের উদ্বোধনের তারিখ ১৫ অক্টোবর নির্ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রী জাতিসঙ্ঘ অধিবেশন থেকে দেশে ফিরে এ বিষয়ে সম্মতি দিলেই উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঘোষণা করার টার্গেট নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে একটি মেজর অপারেশন করায় তিনি বর্তমানে অসুস্থ রয়েছেন বলে জানা গেছে। চিকিৎসকেরা তাকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প অনুমোদন পায় ২০১১ সালে। এরপর দেশী-বিদেশী অর্থায়নে ২০১২ সালে নির্মাণকাজ শুরু করার কথা থাকলেও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয় ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। এ কারণে ফ্লাইওভার নির্মাণে ২০১৪ সালের সময়সীমাও বেড়ে যায় অর্থাৎ ২০১৫ সালের মধ্যে শেষ করার নতুন টার্গেট দেয়া হয়। তবে ঠিকাদার ও তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার কারণে সেটিও সম্ভব হয়নি। তিন দফায় সময় বাড়ানোর পর ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু সেটাও সম্ভব হয়নি। ফলে বছরের পর বছর সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীসহ পুরো নগরবাসীকেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মেয়াদ বাড়ার সমান্তরালে প্রকল্পের ব্যয়ও বাড়িয়ে এক হাজার ২১৯ কোটি টাকায় উন্নীত করে সরকার। প্রকল্পে নির্মাণ ত্রুটিও আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মগবাজার চৌরাস্তা থেকে ওয়্যারলেস মোড়ে আসার কোনো উপায় ছিল না। পরে কোনো রকমে জোড়াতালি দিয়ে একটি সরু রাস্তা করে সে সঙ্কট দূর করা হয়। এ ছাড়া ফ্লাইওভার নির্মাণকালেই এফডিসির সামনে দৈর্ঘ্য বাড়ানো হয়েছে। আগে রেললাইনের সামনে গাড়ি নামার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। এতে যানজট বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলে পরে এটির দৈর্ঘ্য বাড়ানো হয়। ফলে ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটারের ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ কিলোমিটার। সর্বশেষ মালিবাগ এবং মৌচাক মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে সিগন্যাল বাতি। রাজধানীর অন্য ফ্লাইওভারে গাড়ি ক্রস করতে না হলেও এ ফ্লাইওভারের মৌচাক ও মালিবাগে গাড়ি ক্রস করতে হবে। এ জন্য গাড়ি থামাতে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়েছে। এ দু’টি জায়গায় গাড়ির দীর্ঘ সারি পড়ে যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। প্রকল্পের পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল এ ব্যাপারে নয়া দিগন্তকে বলেন, এটি করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। মালিবাগ-মৌচাকের মতো জায়গায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করাই অনেক কঠিন কাজ ছিল। এ ছাড়া একাধিক প্রান্ত থেকে গাড়ি আসার কারণে এ অপশন রাখতে হয়েছে। এতে দু’টি স্থানে গাড়ি কিছুটা দাঁড়াতে হতে পারে।

তিন ভাগে বিভক্ত এ ফ্লাইওভারের একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। এটি নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। গত বছরের ৩০ মার্চ এ অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। একই বছর ১৫ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটন থেকে ওয়ারলেস মোড় পর্যন্ত এক দিকের অংশ খুলে দেয়া হয়। এ অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন। তৃতীয় অংশ এফডিসি মোড় থেকে কাওরানবাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় চলতি বছরের ১৭ মে। এ অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। সর্বশেষ মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশ খুলে দেয়ার মাধ্যমে পুরো ফ্লাইওভারটি চালু হয়ে যাবে। এ অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে এ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এরপর তা বেড়ে ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা হয়। পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা দিয়েছে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)। দেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারটি দৈর্ঘ্যে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/259825