১৪ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ১১:৪৯

মরিচের ঝাল আর পেঁয়াজের ঝাঁজে নাকাল দেশবাসী

মরিচের ঝাল আর পেঁয়াজের ঝাঁজে দেশবাসীর অবস্থা নাকাল। সাথে চালের চাঙ্গাবস্থা এবং সবজির বাহার তো আছেই। মাছের গায়ে তো হাত দেয়াই দায়। তবে এত দুরবস্থার মধ্যেও রাজধানীর খামারবাড়ীতে গতকাল কিছু সময়ের জন্য সুবাতাসের পরশ বুলিয়েছিল ডিম। বাজারে ৮ টাকা হলেও বিশ্ব ডিম দিবসের অনুষ্ঠানের রঙ ছিটাতে বিক্রি হয় তিন টাকা দরে। রসুনের দামেও মিলছে সুবাতাস। যদিও সবচেয়ে কাম দামের সবজির খেতাব পাওয়া পেঁপে গতকাল এক লাফে দেড়গুণে পৌঁছে।
গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের প্রায় কাছাকাছি ২০০ থেকে ২৪০ টাকাদরে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। ভারত থেকে ট্রাকে ট্রাকে এলেও বাজারে তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না বিস্তারকারী এ পণ্যটি। নতুন করে ঝাঁজ বেড়েছে পেঁয়াজের। খুচরা বাজারে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ভারতীয় পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা। গত মাসের শুরুর দিকেও দুই লাফে এ পর্যায়ে গিয়েছিল পেঁয়াজের অবস্থান। তবে সরকারের কড়াকড়িতে দাম কিছুদিন নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানান বিক্রেতারা।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির উত্তাপ এখনো ধাউ ধাউ করছে। একটু মুখরোচক শাক-সবজি হলে তো কথাই নেই। প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকায়। টমেটোর কেজি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। ভালো মানের বাজারে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছে করলা, ঢেঁড়স, বেগুন, ঝিঙ্গাও। ধুন্দল, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা প্রভৃতির দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। অন্য সবজির গড়পড়তা দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। গত সপ্তাহে ২০ থেকে ২৫ টাকায় পাওয়া গেলেও সবচেয়ে কম দামি সবজি পেঁপের দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তবে আলু নামীয় যে সবজির দাম কৃষকের স্বার্থে বেশি হওয়া দরকার সেটির দাম কিন্তু অপরিবর্তিত রয়েছে।
খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুমুখী ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, প্রতি পিস বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকপি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, কলার হালি ৩০ থেকে ৩৬ টাকা, লেবুর হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাল শাকের আঁটি ২০ থেকে ২৫ টাকা, লাউ শাক ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পালং শাক ২০ থেকে ৩০ টাকা, মুলা শাক ২০ থেকে ২২ টাকা, ডাঁটা শাকের আঁটি ২০ থেকে ৩০ টাকা, কচুর শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, পালং শাক ১০ থেকে ২০ টাকা, পাটশাক ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, নিষিদ্ধ থাকায় বাজারে ইলিশ নেই বললেই চলে। তবে চাষের, নদীর এবং সামুদ্রিক মাছের ছড়াছড়ি। ইলিশ ধরা ও বিক্রি নিষিদ্ধ থাকার অজুহাতে দাম বেড়েছে বেশির ভাগ মাছের। এক কেজি গুঁড়া চিংড়ির দাম ৫৬০ টাকা। মাঝারি আকারের চিংড়ির কেজি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। গুলশা মাছের কেজি হাঁকা হচ্ছে ৭০০ টাকা। রূপচাঁদা, বাইম, বেলে, পাবদা, কোরাল প্রভৃতি তো কেবলই ধনীদের খাবার। চাষের রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। কমের মধ্যে পাঙ্গাশের কেজি ১৪০ থেকে ১৬০, মৃগেল ১৫০ থেকে ১৮০, তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২০০ এবং চাষের কৈ পাওয়া যাচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে।
মুদি দোকানে গতকাল প্রতি কেজি দেশী রসুন মানভেদে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, আমদানি করা রসুন মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, আদার কেজি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, চিনি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ছোলা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, মুগ ডাল ১১০ থেকে ১৩৫ টাকা, মাসকলাই ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, দেশী মসুর ডাল ১১০ থেকে ১৫০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ৫ লিটারের ভোজ্যতেলের বোতল ব্র্যান্ড-ভেদে ৫০০ থেকে ৫১০ টাকা, প্রতি লিটার ১০০ থেকে ১০৬ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। ডিমের হালি ৩২ থেকে ৩৫ টাকা।

চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়ার কারণে পাইকারিতে সবধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা কমলেও খুচরায় তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। খুচরা বিক্রেতারা এখনো মোটা চাল ৫০ থেকে ৫২ এবং সরু চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। চালের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে আটার দামও। প্রতি কেজি আটা এখন ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। ব্রাউন আটার কেজি ৬০ টাকা। এ ছাড়া ফার্মের মুরগি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা গরুর গোশত ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা, খাসির গোশত ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাজারের এই ঊর্ধ্বমুখীর কারণে সাধারণ মানুষের অত্যধিক কষ্ট হচ্ছে জানিয়ে রাজধানীর মালিবাগ বাজারের ক্রেতা আবু সুফিয়ান গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, আগাম বন্যায় ৮ লাখ টন চালের উৎপাদন কম হয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ৮০ লাখ টনের ওপর। বন্যায় উত্তরাঞ্চলে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তাই বলে ১০০ টাকা কেজি দরে সবজি খেতে হবে? সরকার চাইলে সবই স্বাভাবিক করতে পারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে পিলার ধরে একটু ঝাঁকি দেয়। আবার অজ্ঞাত কারণে চুপসে যায়। এভাবে চলতে থাকলে স্বল্প আয়ের মানুষকে না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/259844