১৩ অক্টোবর ২০১৭, শুক্রবার, ৩:৪৩

২৬ টাকার মরিচ ঢাকায় ২০০!

দেশে বন্যা, অতিবৃষ্টি ও মৌসুম বদলের কারণে কাঁচা মরিচের সংকট তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমদানিকারকরা ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে কাঁচা মরিচ আমদানি করছে।
যে কারণে ঢাকায় বিদেশি মরিচই বিক্রি হচ্ছে। তবে আমদানিকারকরা যে মরিচ আড়তদারদের কাছে মাত্র ২৬ টাকা কেজিতে পৌঁছে দিচ্ছে সেই মরিচই কিনা ক্রেতা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা বা তারও বেশি দামে।
জানা গেছে, প্রায় ১৫ দিন ধরে দেশে কাঁচা মরিচের বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। মাঝে প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। তবে গত দুই দিনে দাম একটু কমে রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ, আমদানিকারক, আড়তদার, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের রপ্তানি মূল্য ৩০ সেন্ট বা ২৪ টাকা ৬০ পয়সা। বেনাপোল কাস্টম কর্তৃপক্ষ শুল্কায়ন করার পর ২৫ টাকার কাছাকাছি দাম পড়ছে। এই মরিচ আমদানিকারকরা ঢাকার বিভিন্ন আড়তদারদের কাছে বিক্রি করছে ২৬ টাকা কেজিতে। যার মধ্যে বেনাপোল থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রাকভাড়ার খরচও যুক্ত রয়েছে।

যশোরের এক আমদানিকারক মোহম্মদ মহসিন ভারত থেকে মরিচ আমদানি করছেন নিয়মিতভাবে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি ঢাকার আড়তদারদের কাছে সর্বশেষ গত বুধবার ২৬ টাকায় কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি, যার মধ্যে ট্রাকভাড়ার খরচও রয়েছে। গত এক মাসে ২৬ টাকার বেশিতে আমি কখনো মরিচ বিক্রি করিনি। কারণ ভারতের বাজারে মরিচের দাম একই রকম রয়েছে। ’
আরো কয়েকজন আমদানিকারকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১ মাসে ভারতের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধি পায়নি।
গত এক সপ্তাহে বেনাপোল দিয়ে মোট ১১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কাঁচা মরিচ দেশে এসেছে বলে কালের কণ্ঠকে জানান বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মারুফুর রহমান। তিনি বলেন, মাসখানেকের মধ্যে আমদানি মূল্যের কোনো ওঠানামা নেই।
তথ্য মতে, সমস্যাটা মূলত তৈরি হয়েছে আড়তদারদের কাছ থেকেই। তারা সংকটের কথা বলে বলে এই ২৬ টাকার মরিচ পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে ১০০-১১০ টাকায়। পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে ১২০-১৪০ টাকায় কিনে নিচ্ছে খুচরা বিক্রেতারা। তারা আবার ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ আড়তদারদের হাতে মরিচ পৌঁছার পরই হু হু করে দাম বেড়ে যাচ্ছে। কেনা দামের চেয়ে তিন-চারগুণ পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করছে তারা। এরপর মাঝখানের ফরিয়া ও পাইকারি বিক্রেতারা আরেক দফা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। খুচরা বিক্রেতারাও কেজিতে ৬০-৮০ টাকা বেশি রাখছে। আর এর ঝালে হাঁসফাঁস ক্রেতাদের।

কয়েকজন আড়তদার জানান, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা ও শেরপুর থেকে কিছু মরিচ এলেও সেটা চাহিদার তুলনায় নিতান্তই কম। যে কারণে দেশে মরিচের সংকট তৈরি হয়েছে। এলসির মরিচ দিয়ে এই সংকট মোকাবেলা করা হচ্ছে। তবে এলসির মরিচে প্রতিদিনই দাম বড় ব্যবধানে ওঠানামা করছে। কারণ মরিচের গাড়ি যদি রাত ১১টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছে তাহলে সেটার দাম ঠিক থাকছে, আর যদি পৌঁছতে সকাল হয়ে যায় তখন মরিচে পচন ধরে যায়। আর দামও অনেক বেড়ে যায়।
কারওয়ান বাজারের গাউছিয়া সবজি ভাণ্ডারের আড়তদার কামাল মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণভাবে এখন মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকা পাল্লা (পাঁচ কেজি)। অর্থাৎ ১০০-১২০ টাকা কেজি। কোনো কোনো সময় পাল্লা ৪০০ টাকাতেও নেমে আসছে বলে জানান তিনি। তবে ২৬ টাকায় কেনা মরিচ ১০০ টাকার বেশিতে বিক্রি করাটা কতটা যৌক্তিক জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব খরচ হিসাব করে সামান্য লাভেই বিক্রি হচ্ছে।

জানা গেছে, মূল সমস্যা এই আড়তদারদের মধ্যেই। তারাই মূলত সিন্ডিকেট করে মরিচসহ সবজির দাম নিয়ন্ত্রণ করে। যে কারণে ২৬ টাকার মরিচ কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ২০০ টাকা।
১২০-১৪০ টাকায় কেনা মরিচ ২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে রাজধানীর খুচরা বিক্রেতাদের। জানতে চাইলে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা সুমন মিয়া জানান, বেশি দামে কিনতে হয় বলে বেশি দামে বিক্রি করছেন। তা ছাড়া মরিচ এক দিন থাকলেই পচন ধরে। বিক্রি না হলে সেটা ফেলে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই একটু বেশি দাম নিতে হয় বলে জানান তিনি।
বাজারে প্রকৃত মনিটরিংয়ের অভাবে এভাবেই ক্রেতাদের ঠকানো হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ক্যাবের (কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সভাপতি গোলাম রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, মনিটরিং না থাকায় তৈরি হচ্ছে সিন্ডিকেট। আর সিন্ডিকেট তৈরি হলে তারা প্রভাব বিস্তার করবেই।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/10/13/553090