১৩ অক্টোবর ২০১৭, শুক্রবার, ৩:৩০

জ্বালাও-পোড়াও ছাড়া ভিন্ন মাত্রার হরতাল

হরতাল আর জ্বালাও পোড়াও ছিল আগে একে অপরের সাথে সর্ম্পকিত। কিন্তু এবার দেখা গেলো ভিন্ন চিত্র। কোন ধরনের জ্বালাও পোড়াও ছাড়াই জনগণের স্বতঃস্ফূর্ততায় হয়ে গেলো সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। জামায়াতে ইসলামীর ডাকে এই হরতালে ছিল না কোন ভীতিকর পরিস্থিতিও। হরতালের প্রতি জনগণের নিরব সমর্থন।
হরতালের সেদিন : রাজপথে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও-এও অগ্রণী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় এগিয়ে থাকে আওয়ামী লীগ। সরকারি দল কিংবা বিরোধী দল যেখানেই থাকে, সব সময়ই মাঠে থাকে আওয়ামী লীগ। এককভাবে অগ্রণী ছিল '৯৬-এর কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন কিংবা চারদলীয় জোট সরকারের সময় সহিংস আন্দোলনে এবং সে সহিংসতার পথ ধরেই আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। '৯০-এর পরবর্তী বিএনপি সরকারের সময় রাজপথে আন্দোলন চলাকালে অফিসগামী কর্মকর্তাকে দিগম্বর করা, দাড়িটুপি পরিহিত ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা, ক্লিনিকে বোমাবর্ষণ, রাজনৈতিক দলের অফিসে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এমনকি রাজনৈতিক দলের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে।
অফিসগামী কর্মকর্তাকে দিগম্বর: রেহাই পায়নি দাড়িটুপি পরিহিত বৃদ্ধও; ১৯৯৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ৭২ ঘণ্টা হরতাল চলাকালে পিকেটিং-এর অংশ হিসেবে অফিসগামী দুই ব্যক্তিকে রাস্তায় প্রকাশ্যে দিগম্বর করে ছাত্রলীগ। ২০ সেপ্টেম্বর রাজপথে লাঞ্ছিত বিবস্ত্র শাহজাহান ও অনিল কুমার দেবনাথ ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দী দেয়। সেনাকল্যাণ ভবনে ইন্টারগ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশনের সহকারী হিসাবরক্ষক শাহজাহানকে দোয়েল চত্বর এলাকায় দিগম্বর করা হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের টাইপিস্ট অনিল কুমার দেবনাথকে জগন্নাথ হলের পিছনে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনায় ঢাবির গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ আলমকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করে। আলম ১৬৪ এ দেয়া জবানবন্দীতে ঘটনার কথা স্বীকার করেন।
শাহজাহান ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি শনিবার সকাল ৮টার দিকে দোয়েল চত্বর এলাকা দিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা পথ আগলে দিগম্বর করে। তিনি তাদের হাতে পায়ে ধরে অনেক অনুনয় করেন। জোর করে কাপড় খুলে ফেললে তিনি প্রায় দেড় মিনিট দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে তার কাপড় ফেরত দেয়া হয়। জাতীয় দৈনিকগুলোতে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। ছাত্রলীগের হাত থেকে দাড়িটুপি পরিহিত ব্যক্তিরাও রেহাই পায়নি।
বাংলা একাডেমি এবং ৩ রাজনৈতিক অফিসে হামলা: ১৯৯৪ সালের ৩০ জুলাই হরতাল চলাকালে বাংলা একাডেমি ও ৩ রাজনৈতিক দলের অফিসে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ। সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে পুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপে এক কনস্টেবল গুরুতর আহত হয়। হাসিনাপন্থী ছাত্রলীগ (ম-ই) ও জাসদ (ইনু) ছাত্রলীগ এই হামলা চালায়। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), জাগপা ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের পুরানা পল্টনস্থ অফিসে এ হামলা হয়। দুপুর ২টার পর ৩০-৪০ জন একযোগে হামলা চালায়। ব্যাপক ভাংচুর, মারধরের ঘটনা ঘটে।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে বাংলা একাডেমিতে হামলা চালায় ছাত্রলীগের কর্মীরা। তারা আগুন জ্বালাও আগুন জ্বালাও শ্লোগান দিয়ে একাডেমিতে প্রবেশ করে ভাংচুর করে, কর্মচারীদের মারধর করে, দরজা জানালা ভেঙ্গে ফেলে।
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ভাঙচুর: ১৯৯০ সালের ১৬ অক্টোবর বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, ব্যাপক ভাংচুর, বোমাবাজি, জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ, ৪টি রেল ইঞ্জিনসহ শতাধিক গাড়ি ভাংচুর, খুলনা ও সিলেটে সরকারি অফিস ভাংচুর, ময়মনসিংহে রেল স্টেশনে অগ্নিসংযোগ, সড়ক ও রেলপথে বেরিকেড, দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে চলাচলকারী ৩৫টি ট্রেন গতিরোধের মধ্যদিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হয়েছে। রাজশাহীতে ২৬ জন পুলিশ আহত হয়। ৮ দল, ৭ দল, ৫ দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ হরতালের আহবান করে। দৈনিক বাংলার বাণীতে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়।
দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ১৯৮৯ সালের ৯ জানুয়ারি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ৩১টি ট্রাক ভাংচুর, বোমা সংঘর্ষে ৬০ জন আহত হয়। তারপর দিন দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, চট্টগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের হরতালের সময় সাড়ে ১১টায় পাথরঘাটায় হাত বোমায় উত্তম বিশ্বাস নামে এক কিশোর আহত হয়।
আওয়ামী লীগের অসহযোগ আন্দোলন ছিল সহিংস: কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলের অসহযোগ আন্দোলন ছিল সহিংস। প্রায় প্রতিদিনই গাড়িতে আগুন, বোমাবাজি, সরকারি অফিস ও পুলিশের ওপর হামলা, থানা ঘেরাও, ট্রেন লাইন উপড়ে ফেলা, আগুন দিয়ে বগি জ্বালিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। সহিংসতার এক পর্যায়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী পর্যন্ত নামানো হয়েছিল। কিন্তু টহলরত সেনা ও বিডিআরের বহরেও হামলা ও বোমাবাজির মতো ঘটনা ঘটে।

অসহযোগের প্রথম দিনেই হাঙ্গামা: ১৯৯৬ সালের ৯ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে বরিশালে বিএনপির সাথে তিন দলের কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। এসময় দুই শতাধিক হাত বোমা, শতাধিক রাউন্ড গুলী ও প্রচুর ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। দৈনিক ইত্তেফাক লিখে, ‘পৌরসভার চেয়ারম্যান ও শহর বিএনপির সভাপতি আহসান হাবিব কামালের ওপর শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের মিছিল হইতে হামলা ও গাড়ি ভস্মীভূত করার ঘটনার জের হিসাবে গতকালের সহিংস ঘটনা ঘটে।'
থানায় হামলা ভাংচুর: ১১ মার্চ ৩য় দিনে মিরপুরে সংঘর্ষে ২ জন সুবেদার এবং ১৭ জন পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। এদিন পুরো মিরপুর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকায় লেখা হয়, মিরপুর ১০ নং গোল চক্কর এলাকায় যাত্রী ছাউনির নিচে থাকা পুলিশের ওপর প্রথম হামলা হয়। এসময় পুলিশের একজন এসআই ও একজন কনস্টেবল গুরুতর আহত হয়। এসময় ২ জন এসআই ও এক কনস্টেবলকে একটি বাসায় আটকে রাখা হয়। এসময় মিরপুর থানায় হামলা হয়। ওসি এসি লাঞ্ছিত হয়। দৈনিক বাংলা এর সংবাদ শিরোনাম ছিল, ‘মিরপুর থানায় আবার হামলা ও গুলী বোমা ১৭ পুলিশ আহত'।
১০ মার্চ রংপুরের তারাগঞ্জে বিডিআর টহল বন্ধ হয়ে যায়। তারাগঞ্জের টিএনও থানায় আশ্রয় নেয়। থানা ঘিরে রেখে কাউকে বের হতে দেয়া হয় না বলে দৈনিক সংবাদে এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
পুলিশের ওপর হামলা মন্ত্রী লাঞ্ছিত: ১৩ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ৫ম দিনে রাজধানীতে ৩ জন নিহত ও আহত শতাধিক। এদিন পিকেটারদের হাতে শ্রম মন্ত্রী লে. জেনারেল (অব.) মীর শওকত আলী লাঞ্ছিত হন। দৈনিক সংবাদ এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। ১২ মার্চ ৪র্থ দিনে সংঘর্ষ, বোমাবাজি। ইত্তেফাকের রিপোর্টের শুরুটা ছিল, ‘বিরোধী দল আহূত লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের চতুর্থ দিনেও গতকাল (মঙ্গলবার) নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এ সকল হাঙ্গামায় এবং বাসে বোমা নিক্ষেপে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়।' রিপোর্টে বলা হয়, এদিন সড়ক যোগাযোগ ও রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ফার্মগেটে বিআরটিসি বাসে আগুন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে একটি যাত্রীবাহী বাসে বোমায় চালকসহ ১৫ জন আহত। মহাখালীতে বিডিআর বহনকারী বাসে ভাংচুর হয়।

বাসে পেট্রোল বোমা ভস্মীভূত মানুষ: ১৭ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ৯ম দিনে রাজধানীতে বাসে পেট্রোল বোমায় ২ জন নিহত, চট্টগ্রাম ও সিরাজগঞ্জে আরো ২ জন নিহত হয়েছে। রাজধানীর কলেজগেট এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে বোমায় এই ২ জন মারা যায়। এদিন মহাখালী, কলেজগেট, প্রেস ক্লাব, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া ও গুলীবর্ষণের ঘটনা ঘটে। বোমার আঘাত ও গুলীতে এদিন ৬২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়।
৯টায় কলেজগেট এলাকায় মিনিবাসে পরপর বোমা নিক্ষেপ করা হলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে হেলপার তোফাজ্জল (৪০) চাকায় পিষ্ট ও একজন যাত্রী বোমার আঘাতে মারা যায়। প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্রলীগ মিছিল করে, গাড়ি ভাংচুর করে, বোমা নিক্ষেপ করে। দৈনিক ইত্তেফাকে এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
দৈনিক সংবাদ লিখে, এদিন চাঁদপুরে ডিসি অফিস ও ময়মনসিংহের জিআরপি থানায় বোমা হামলা হয়। দৈনিক সংগ্রাম লিখে, এদিন মহাখালীতে একটি ও সায়দাবাদে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। চট্টগ্রামে বোমা হামলায় ১ জন নিহত হয়।
প্রকাশ্য গুলী বোমা আগুন: ১৯ মার্চ নারায়ণগঞ্জে বিএনপির জনসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে সহস্রাধিক বোমা ও শত শত গুলী বর্ষিত হয়। এসময় পুরো শহর আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ মিছিল করে বিএনপির সমাবেশ স্থলে হামলা করে। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলী করে, সাংবাদিকদের ছবি না তোলার হুমকি দেয়। সাংবাদিকদের সামনেই শাহেদের বুকে গুলী লাগে, রানা নামে এক কিশোর মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বলে দৈনিক ইত্তেফাকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এদিন পান্থপথে একটি এ্যাম্বুলেন্স, বাংলামোটরে ১টি প্রাইভেট কার ও ২টি বেবিটেক্সি পোড়ানো হয়। মতিঝিলে একটি পেট্রোল পাম্পে আগুন লাগানো হয়।

ট্রেন চলাচলে অচলাবস্থা: ২১ মার্চ দেশের ট্রেন চলাচলে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। সারা দেশে চলাচলকারী ৩ শতাধিক ট্রেনের মধ্যে মাত্র ১১টি ছাড়া হয়, তার মধ্যে সবগুলো সময় মতো পৌঁছতে পারেনি। সীতাকুন্ড স্টেশনে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকা অবস্থায়ই রাত ১০টার দিকে বারৈয়ারডালা স্টেশনের কন্ট্রোল প্যানেল, টেলিফোন সেট ও স্টেশনের দরজা জানালা ভাংচুর হয়। বিভিন্ন স্থানে ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলা হয়। নরসিংদী স্টেশনে ঢোকার মুখে ঢাকা হতে ভৈরব অভিমুখে ছেড়ে যাওয়া ঈশাখা এক্সপ্রেসে মিছিল করে প্রথমে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে চালক ও সহকারী চালক আহত হয়। পরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। স্টেশনে থানা সেনা সদস্যরা তাদের উদ্ধার করেন। দৈনিক ইত্তেফাকে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এদিন কিশোরগঞ্জে ও মাদারীপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে ভাংচুর হয়। বেলা পৌনে ১১টার দিকে মিরপুরে সনি সিনেমা হলের সামনে পুলিশের জিপে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুর ১০ নং গোল চক্কর এলাকায় সেনা বাহিনীর বহর লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। দৈনিক সংবাদে এ খবর প্রকাশিত হয়। এদিন রাজধানীতে ৪ ও নারায়ণগঞ্জে ৩ জন নিহত হয় বলে দৈনিক সংগ্রামে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
অব্যাহত সহিংসতার প্রেক্ষিতে ২০ মার্চ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ দিনও ঢাকায় নিহত হয় ১ জন হয়। মিরপুরে ৫/৬ ঘণ্টা পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয় বলে দৈনিক সংগ্রামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বাসে পেট্রোল বোমা, রেল সেতুতে আগুন: ১৯৯৬ সালের ২৩ মার্চ অসহযোগ আন্দোলনের ১৫ তম দিনে ঘোড়াশালের রেল ব্রিজে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়, নরসিংদী খানাবাড়ী এলাকায় দেড়শ ফুট রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়। এ ছাড়া ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জও পয়ারপুর-বিদ্যাখালীর মাঝেও রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়। ঝালকাঠিতে ডিসি অফিসসহ কয়েকটি সরকারি অফিস ভাংচুর করা হয়। এ সময় একজন পুলিশসহ ৭ জন আহত হয়। রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বাসে পেট্টোল বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে চালক, হেলপারসহ যাত্রীরা আহত হয়। এসময় পুলিশ বিডিআরের পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল। বরিশালেরও পৌরসভা অফিস, থানা ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। দৈনিক সংবাদে এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।

১৪তম দিনে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল লাইনের সুতিয়াখালী-ফাতেমানগর স্টেশনের মধ্যবর্তী অংশের ফিশপ্লেট ভেঙ্গে ফেলা হয়, ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ রেল লাইনের মাঝামাঝি অংশে এবং গাজীপুরের কাছে ধীরাশ্রমে রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে। ভোর ৬টায় গোপীবাগে একটি বেবিটেক্সিকে ধাওয়া করলে একজন নিহত হয়। ৮টার দিকে আরামবাগে একটি বেকারী খোলা হলে জাতীয় পার্টির কর্মীরা বাধা দেয়, তারপরও খোলা রাখলে তারা তা তছনছ করে দেয়। মিরপুর বিআরটিসির দোতলা বাস সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ছাড়া হলে বোমাবাজি করে বন্ধ করে দেয়া হয়। দৈনিক সংবাদে এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এ দিন ২০ মার্চ সায়দাবাদে বোমাবাজির সময় বাস চাপায় আহত হাবিবুর রহমান (৪০) এ দিন মারা যায়। তিনি এজিবির কর্মকর্তা।
হরতালে বোমাবাজি: ১৯৯৬ সালের ৬ মার্চ হরতালের দিন ব্যাপক হাঙ্গামা বোমাবাজি আহত হয় অর্ধ শতাধিক। দৈনিক বাংলার সামনে বিএনপির মিছিলে গুলীবর্ষণ, বোমায় কয়েকজন আহত হয়। ৭৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী ময়মুন হককে গুলীবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডেমরার এমপি সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে ৭০টি ট্রাকের মিছিল যাত্রাবাড়ী অতিক্রম করার সময় ব্যাপক বোমা বর্ষণ হয়। বহর থেমে যায়। পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে বলে দৈনিক ইত্তেফাকে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্রের অফিসে হামলা: ১৯৯৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ৬০ ঘণ্টা হরতালে ব্যাপক সংঘর্ষ, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়া, বিরোধীদলের অফিসে হামলা, ৬ জন নিহত হয়। জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ রাজধানীতে ৩০ জন গুলীবিদ্ধ হন। এ দিন মগবাজারস্থ জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও দৈনিক সংগ্রাম অফিসে হামলা চালায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। ঢাকায় ছাত্রদল কর্মী নিহত সজল চৌধুরীর পিতা এডভোকেট শহিদুর রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে শেখ হাসিনার পেটোয়া বাহিনী হত্যা করেছে।'' সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় বিএনপির মিছিলে হাজী মকবুলের নেতৃত্বে শান্তি মিছিল থেকে গুলীতে সে মারা যায়।

এ ছাড়া হরতাল চলাকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিএনপির মিছিলে হরতাল বিরোধী মিছিল থেকে গুলীবর্ষণ করলে ছাত্রদল কর্মী ইউনুস (২০) গুলীবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এ দিন পল্টন মোড়ে জামায়াতের মিছিলে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বোমা মারার পরপরই পুলিশ গুলীবর্ষণ করে। এতে হামিদুর রহমান আজাদসহ কয়েকজন বুলেটবিদ্ধ হন।
এছাড়া ১৯৯৮ সালের ১৬ জুলাই হরতাল চলাকালে জামায়াতের তৎকালীন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবদুল কাদের মোল্লার নেতৃত্বে মগবাজারস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মিছিল বের হলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়।
বন্দুকের দোকান লুট, গুলীবর্ষণ: ২৭ জানুয়ারি যশোরে হরতাল চলাকালে আওয়ামী লীগের মিছিল থেকে বোমা হামলা হয়। বন্দুকের দোকান লুট, জাপা কর্মী রাজকুমার নিহত হয়। পুলিশ তার লাশ মাটি চাপা দেয়। দৈনিক জনতা এ রিপোর্ট প্রকাশ করে। ১৮ ঘণ্টা হরতাল চলাকালে সারাদেশে ৩ জন নিহত ও আহত হয়েছে সহস্রাধিক। এছাড়া হরতাল চলাকালে মগবাজারে চাষী কল্যাণ সমিতির অফিসে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। তারা এ সময় শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জীপ (ঢাকা-ভ-৪৮৯)সহ ৮টি গাড়ি ভাংচুর করে। আশপাশের দোকান খোলার চাপ দেয়। না হলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
বিরোধী দলের হরতালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস: ১৯৯৮ সালের ৯ নবেম্বর বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ ৭ বিরোধীদলের ডাকা ৪৮ ঘণ্টা হরতালের শুরুতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ব্যাপক সন্ত্রাস, ঢাকায় আওয়ামী লীগের বোমা ও গুলীতে ৪ জন নিহত। পুরান ঢাকার নাজিরা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ১১টার দিকে কোতয়ালী থানার বিএনপির মিছিল মেয়র হানিফের নাজিরা বাজার বাসা অতিক্রম করা কালে জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা ও গুলী করে। এখানে ২ জন নিহত হয়।
ধোলাইপাড়ে নিহত হয় দুলাল সর্দার, নাজিরা বাজারে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলীতে নিহত হয় সালাম ও উমর ফারুক, কুড়িলে শফিক নিহত হয়। দুই দিনের হরতালে ৬ জন মারা যায়। ১৮ অক্টোবর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ৭ দলের ডাকে হরতালে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের গুলীতে ২ জন মারা যায়। এসময় বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা ও গুলীবর্ষণ করে। এ সময় সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ শতাধিক নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়।

পেট্রোল ঢেলে ও বাসে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা: আওয়ামী লীগ রাজপথে সব সময়ই সোচ্চার ভূমিকা রেখেছে। সরকারি দলে কিংবা বিরোধী দলে, কোনো সময়ই সহিংসতা থেকে মুক্ত থাকেনি আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময় আন্দোলনকালে গাড়িতে আগুন দিয়ে চালককে পুড়িয়ে মারা, বোমা মেরে মানুষ ঝলসে দেয়া, বিআরটিসির দোতলা গাড়িতে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা, ট্রেনে আগুন, রেল স্টেশন জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
গাড়িতে আগুন, চালক অগ্নিদগ্ধ: ২০০৫ সালের ৩০ জানুয়ারি হরতালের দ্বিতীয় দিনে ব্যাপক সহিংসতা চালায় আওয়ামী লীগ। ঢাকায় ২০টি গাড়ি ভাংচুর ও ৪টিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধোলাইপারে হরতাল সমর্থকরা সিএনজি চালিত থ্রি হুইলারে (ঢাকা মেট্রো থ-১৬৪১) আগুন ধরিয়ে দিলে চালক সৌরভ অগ্নিদগ্ধ হয়। এ ছাড়া ২০০৪ সালের ২২ আগস্ট হরতাল চলাকালে খুলনায় কেসিসির ১৬টি গাড়িসহ ২৫টি গাড়ি, ৪টি ব্যাংক ভাংচুর করা হয়। মোড়ে মোড়ে সড়ক অবরোধ করে গাড়িগুলো ভাংচুর করা হয়।
ট্রেনে আগুন ॥ স্টেশনে হামলা: ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট হরতাল চলাকালে ভৈরবে আন্তঃনগর সুবর্ণ এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগ, ১২টি বগি ভস্মীভূত, রেলস্টেশন কন্ট্রোল রুম ভাংচুর হয়। সকাল ১১-৩০ মিনিটে ভৈরব রেল সেতুর অদূরে আওয়ামী লীগ ব্যারিকেড সৃষ্টি করে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ট্রেন গতিরোধ করে অগ্নিসংযোগ করে। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুমায়ুন কবীর ও ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান আহত হন। পুলিশ ও বিডিআর মোতায়েন করে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। এর ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটিরও বেশি বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানায়।
১৪ দলীয় জোটের আন্দোলনে গাড়িতে আগুন: ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারির পূর্ব পর্যন্ত দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট। এ সময় বঙ্গভবন ঘেরাও, ঢাকা অবরোধ, হরতালসহ নানা কর্মসূচিতে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, বোমা বিস্ফোরণ, পেট্রোল ঢেলে গাড়ি পোড়ানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। এ সময় সরকারি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পুলিশের ওপরও হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে ৩ জন পুলিশ সদস্য নিহত ও আহত হয়েছে অসংখ্য।

বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় শেষ বছরে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোট। এই আন্দোলনের সময়ই ২০০৬ সালে ৩০ আগস্ট পল্লবীতে আওয়ামী লীগের মারমুখী পিকেটারদের ইটের আঘাতে পুলিশের নায়েক নারায়নচন্দ্র বর্মন, ২ জুলাই রাজপথ, রেলপথ ও নৌ পথ অবরোধ চলাকালে সোনারগাঁও উপজেলার মোগড়াপাড়ায় ইটের আঘাতে এসআই আবুল বাশার এবং ২০০৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নলিতাবাড়ী উপজেলায় হরতাল চলাকালে আওয়ামী লীগারদের ইট ও লাঠির আঘাতে নালিতাবাড়ী থানার পুলিশ কনস্টেবল আশরাফ সিদ্দিকী মারা যায়। এছাড়া ২০০৫ সালের ২০ আগস্ট যুবলীগ নেত্রী সাবিনা আকতার তুহিনের নেতৃত্বে ধানমন্ডিতে মহিলা পুলিশকে গলাটিপে মারার চেষ্টাও চালানো হয় বলে পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ঢাকা অবরোধ; দুই ওসিসহ পুলিশ আহত : ২০০৭ সালের ৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি ছিল। তার আগে লাগাতার ৩ দিন ঢাকা অবরোধ চলে। এ দিন দৈনিক বাংলার মোড়, ইত্তেফাক মোড়, জয়কালী মন্দির, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান মোড় পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় অবরোধকারীরা হাতবোমা, ককটেল ও গুলী চালায়। এ সময় পুলিশসহ ১৫ জন আহত হয়।

৭ জানুয়ারি অবরোধ চলাকালে আদাবরে দুই ওসিসহ ১৫ পুলিশ আহত হয়। টঙ্গীতে পেট্টোল ঢেলে টেক্সিক্যাবে আগুন ধরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। আদাবরে দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ৫ জন পুলিশ, ৩ জন ফটো সাংবাদিকসহ ৫০ জন আহত হয়। এ ছাড়া চকবাজার, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ৩৪ নং ওয়ার্ড কমিশনার আবুল হাশেম হাসুর নেতৃত্বে মিছিল বের করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ দিন মগবাজারে একটি প্রাইভেট কার, ফার্মগেটে ট্যাক্সিক্যাবে অগ্নিসংযোগ করা হয়। রংপুরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ৮ পুলিশসহ ৭০ জন আহত হয়। খুলনায় ট্রেনে অগ্নিসংযোগ। সেনা মোতায়েনের পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
২০০৬ সালের ৩ ডিসেম্বর অবরোধ চলাকালে আওয়ামী লীগ কর্মীদের গুলীতে সিলেটের বিশ্বনাথে ছাত্রদল নেতা ফয়েজ আহমদ অনু নিহত হয়। আহত হয় অর্ধশতাধিক।

ট্রনে আগুন; গাড়িরও রেহায় নাই : ১২ নবেম্বর দিনাজপুরগামী আন্তঃনগর একতা এক্সপ্রেসে টঙ্গীতে আওয়ামী লীগ কর্মীরা অবরোধ করে ব্যাপক ভাংচুর চালায়, ২ বগিতে পেট্টোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী আবু হানিফ পিকেটারদের হামলায় নিহত হয়। এ সময় ব্যাপক ভাংচুর করা হয়।
২১ সেপ্টেম্বর তুমুল বৃষ্টিপাতের দিনেও আওয়ামী লীগের ভাংচুর, তান্ডব বন্ধ থাকেনি। এদিন মহিলা কর্মীরা গাড়ি ভাংচুর করে, পেট্টোল ঢেলে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পল্লবীতে ইলিয়াস মোল্লার নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। মিরপুরে মাজার রোডে কামাল আহমদ মজুমদারের নেতৃত্বে বিআরটিসির দ্বিতলা বাসসহ অনেকগুলো গাড়ি ভাংচুর করা হয়। তার আগের দিনও ব্যাপক ভাংচুর, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

দুই পুলিশ সদস্য নিহত : ৩০ আগস্ট আওয়ামী লীগের মারমুখি পিকেটারদের ইটের আঘাতে পুলিশ নিহত। পল্লবীতে নায়েক নারায়ণচন্দ্র বর্মন নিহত হয়। ২ জুলাই রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ চলাকালে সোনারগাঁও উপজেলার মোগড়াপাড়ায় ইটের আঘাতে পুলিশের এসআই আবুল বাশার নিহত হয়। এ সময় মিছিলে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ নেতা কায়সার হাসনাত। এদিন ঢাকা ও আশপাশে ব্যাপক গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ১৪ দল।
মহিলা পুলিশকে গলাটিপে মারার চেষ্টা : হরতালের সময় মহিলা পুলিশকে গলাটিপে মারার ঘটনা সৃষ্টি হয় ২০০৫ সালের ২০ আগস্ট। এদিন যুব মহিলা লীগের কর্মীরা ধানমন্ডির রাফা প্লাজার সামনে পুলিশ সদস্যকে গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করে। প্রথমে তারা মহিলা পুলিশ সদস্যের হেলমেট ও লাঠি কেড়ে নেয়, তারপর এলোপাথাড়ি লাথি মারে, পরে গলা টিপে ধরে। যুবলীগ নেত্রী সাবিনা আকতার তুহিনের নেতৃত্বে এ হামলা হয়। এ সময় গাড়ি ভাংচুরের ঘটনাও ঘটে।
সিএনজি চালকের গায়ে পেট্টোল ঢেলে আগুন : ২০০৫ সালের ২১ মে হরতালের দিন খিলগাঁও থানার তিলপাপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সিএনজি চালক আমির হোসেন (৪০)-এর গায়ে পেট্টোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার ৫ দিন পর তিনি মারা যান। অনি ও ঋতুর বাবা, ববিতার স্বামী হারানোর কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি করে তোলে। তার বেবিট্যাক্সি নং (ঢাকা মেট্টো-থ-১৪-৩৯৪৮)।
মারা যাওয়ার আগে সে বলেছিল, ‘‘জীবনে কোন দিন আওয়ামী লীগকে ভোট দিমু না। তারা আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। কী অপরাধ ছিল আমার? গাড়ি চালানো কী আমার অপরাধ? দুটি মেয়ের লেখাপড়া শেষ হয়ে যাবে এখন। আমার ঘটনার ব্যাপারে কী আওয়ামী লীগ নেতারা কোন জবাব দিতে পারবেন?''
১৮ ও ২১ মে এইচএসসি ও আলিম, ফাজিল ও কামিল পরীক্ষার দিন হরতাল দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এই হরতালের শেষ দিনেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে সিএনজি চালক আমির হোসেনকে।

শেরপুরে পুলিশ হত্যা : ২০০৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার হরতাল চলাকালে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ইট ও লাঠির আঘাতে নালিতাবাড়ী থানার পুলিশ কনস্টেবল আশরাফ সিদ্দিকী মারা যায়। গুরুতর আহত হয় এসআই নূর ইসলাম, এস আই সিজানুর রহমান, কনস্টেবল মজিবুর রহমান। নালিতাবাড়ীর নকলা-নালিতাবাড়ী সড়কের যোগানিয়ার মোড়ে গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগ কর্মীরা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা লাঠি ও ইট দিয়ে আশরাফ সিদ্দিকীকে পিটিয়ে মারে। অন্যদের গুরুতর আহত করে।
ব্যবসায়ীর গায়ে আগুন : একই দিনে (২০০৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি) পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী হাজী বুলবুল (৩৫)-এর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুপুর ১২টার দিকে বংশালের মুকিম বাজার জামে মসজিদের সামনে হরতালকারীরা রিকশা আটকায়। এ সময় রিকশায় তাকেসহ কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।

http://www.dailysangram.com/post/303353