১২ অক্টোবর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:৪০

জটিল রাজনীতি বুঝার আগেই বিদায় নিলো

‘জটিল রাজনীতি বুঝতে গিয়েই প্রাণ গেল তাঁর?’ এটি একটি খবরের শিরোনাম। ৭ অক্টোবর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, নিজের ফেসবুক পাতায় গত রোববার চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস লেখেন, ‘রাজনীতি বড়ই জটিল জিনিস...। এক সময়কার কথিত ডাস্টবিন এখন ফুলের বাগানের সৌরভ ছড়াচ্ছে’। এর তিনদিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। লেখেন, ‘অপেক্ষায় রইলাম।’ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপেক্ষার জবাব হয়ে ধরা দিল ‘মৃত্যু’। শুক্রবার সকালে তাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটিয়ে খুন করে দুর্বৃত্তরা। ছেলের চিৎকার শুনে মা গলির মুখে গিয়ে দেখেন, ছেলে রাস্তার পাশে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়। তার মাথায় গুরুতর আঘাত ছিল বলে জানান চিকিৎসকরা।

সুদীপ্ত হত্যার এই মর্মান্তিক ঘটনা খুবই দুঃখজনক। মানুষের সমাজে এমন ঘটনা চলতে দেয়া যায় না। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হলে হয়তো এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হতে পারে। তবে পুলিশ-প্রশাসন ও আইন-আদালত দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনে কতটা সক্ষম হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়। এদিকে সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় লক্ষ্য করা গেল আর এক তৎপরতা। ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী শুক্রবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে দু’টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া দু’টি বাসসহ বেশ কয়েকটি অটোরিকশা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পথচারী, যাত্রীসহ রাস্তায় কেনাকাটা করতে আসা লোকজন দিগি¦দিক ছুটতে থাকেন। পরে পুলিশ এসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এমন চিত্র যৌক্তিকভাবেই কিছু প্রশ্নের সৃষ্টি করে। সুদীপ্ত খুনের তো উপযুক্ত বিচার হওয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে তো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে। কিন্তু আলোচ্য ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আগুন লাগালো রাস্তায় চলমান বাসে। আতঙ্ক সৃষ্টি করলো আশেপাশে। ফলে মানুষকে জীবন বাঁচাতে ছুটে পালাতে হলো। আতঙ্ক সৃষ্টির এমন তৎপরতাকে সন্ত্রাসের তৎপরতা হিসেবেই অভিহিত করতে হয়। ফলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করতে হয় পুলিশকে। এমন ঘটনা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কিংবা সুদীপ্ত হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো সাহায্য করবে কী?

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে কিছুদিন আগে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন সুদীপ্ত। ওই নেতা নগরের লালখান বাজারে থাকেন। ফেসবুকে সুদীপ্ত এবং ওই নেতার অনুসারীরা পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করতেন। হত্যাকাণ্ডের পেছনে এই ঘটনা কাজ করতে পারে বলে তার ধারণা। বিষয়টি পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে বলেন তিনি। আমরা তো সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। তবে আফসোসের বিষয় হলো, ‘জটিল রাজনীতি’ বোঝার সুযোগ আর হলো না সুদীপ্ত বিশ্বাসের। তার আগেই তাকে বিদায় নিতে হলো পৃথিবী থেকে।
রাজনীতি জটিল বিষয় সে কথা আমরা জানি, কিন্তু শিক্ষাঙ্গন এতো জটিল হয়ে উঠবে কেন? ঢাকার বড় সাতটি কলেজের অধিভুক্তি নিয়ে গত আট মাসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বন্দ্ব কাটেনি। এই দ্বন্দ্বের কারণে খেসারত দিতে হচ্ছে এসব কলেজের দেড় লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে। উল্লেখ্য যে, ¯œাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ফল প্রকাশসহ পাঁচ দফা দাবিতে ৮ অক্টোবর রাজধানীর নীলক্ষেত নিউমার্কেট মোড়ে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে তীব্র যানজটে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসার পর এই সাত কলেজের পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ নিয়ে নানা জটিলতা তৈরি হয়। পরীক্ষার সময়সূচি না দেয়ায় গত জুলাই মাসে শিক্ষার্থীরা প্রথম দফায় আন্দোলনে নামেন। গত ২০ জুলাই পরীক্ষার রুটিনসহ পাঁচ দফা দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভের সময় পুলিশের ছোঁড়া কাঁদানে গ্যাসের সেলে চোখ হারান তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমান।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর একাধিক অধ্যক্ষ বলেছেন, এসব কলেজ হাতছাড়া হওয়ার ক্ষোভে শুরু থেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে অসহযোগিতা করে আসছে। এছাড়া এই মুহূর্তে বিপুলসংখ্যক কলেজ শিক্ষার্থীর ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত জনবলও নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। আর এসব জটিলতা তৈরির পেছনে কাজ করছে দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘অসম্মানবোধের সমস্যা’। এমন তথ্য ছাড়াও পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদের প্রকট দ্বন্দ্ব জটিলতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছে।
আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কোন সাধারণ মানুষ নন। তারা উচ্চশিক্ষিত এবং আলোকিত মানুষ। মানুষ আশা করে তাদের আলোয় আমাদের শিক্ষাঙ্গন আলোকিত হয়ে উঠবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এমন গুণবান মানুষদের ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব, অতি আত্মসম্মান ও ক্ষুদ্র স্বার্থের কারণে শিক্ষাঙ্গনে অন্ধকারের ছায়া পড়েছে। এই অন্ধকার যত দ্রুত দূর হবে ততই মঙ্গল। এ ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর ভূমিকা সময়ের দাবি।

http://www.dailysangram.com/post/303209