১০ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১:৫৯

৭ ব্যাংককে জরিমানার জেরে পুুঁজিবাজারে দরপতন

ব্যাংক কোম্পানি আইন লঙ্ঘন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে পুঁজিবাজারে নির্ধারিত সীমার চেয়ে বাড়তি শেয়ার ধারণ করায় রোববার সাত ব্যাংককে জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল এ রিপোর্ট নয়া দিগন্তে প্রথম পাতায় প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাংক পাড়ায় তোলপাড় শুরু হয়। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। গতকাল সোমবার সকাল থেকেই ব্যাংক খাতের শেয়ারগুলোর দর পড়তে থাকে। তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংক কোম্পানির সবগুলোর দর দিন শেষে ৩ থেকে ৫ শতাংশ পড়ে যায়। ব্যাংকের শেয়ারের দরপতনের প্রভাবে বড় ধরনের ধস নেমেছে দেশের দুই পুঁজিবাজারে। 

ডিএসই ও সিএসই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গতকাল ডিএসইতে টাকার অঙ্কে মোট লেনদেন হয়েছে ৯৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। গত রোববার লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৫৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এক দিনের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৮৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। অন্য দিকে সিএসইতে মোট শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ৪৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। গত রোববার লেনদেন হয়েছিল ৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার। সিএসইতে এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। লেনদেনের পাশাপাশি সূচকও কমেছে ব্যাপক হারে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৬ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ১২৮ পয়েন্ট নেমেছে। আর সিএএসপিআই ২১১ পয়েন্ট কমে নেমেছে ১৯ হাজার ৬৬ পয়েন্টে।
এ দিকে নয়া দিগন্তে সাত ব্যাংককে জরিমানা করার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন শ্রেণীর গ্রাহক ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নয়া দিগন্তে ফোন আসতে থাকে। ব্যাংকগুলোর সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হয়। বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও তার প্রতিনিধিরা ছুটে যান বাংলাদেশ ব্যাংকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কয়েকটি ব্যাংক থেকে জরিমানা মওকুফের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ে দেনদরবার পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের অনড় অবস্থানের কথা সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে অনেকেই পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন।
এ দিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, তার ব্যাংক নতুন করে কোনো শেয়ার কেনেনি। কিন্তু বর্তমানে তাদের কাছে থাকা শেয়ারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মার্ক টু মার্কেট ভিত্তিতে মোটের ওপর দাম বেড়ে গেছে। এতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া সীমা অতিক্রম করেছে। এ কারণে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে তার ব্যাংকের জরিমানা পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করবেন বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
একই অপরাধে অপরাধী আরো আটটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সারা দিনই তৎপর থাকতে দেখা যায়। অফিস ছুটির পরও অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬টার পরও কাজ করতে দেখা যায়। একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকে রক্ষিত সাধারণের আমানত সুরক্ষা করতেই ব্যাংকগুলোকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না।
এ জন্য ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোর তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/258728