১০ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১:৫৮

জমির অনিশ্চয়তা : তবুও মাধ্যমিক স্কুল নির্মাণ

প্রতি একর জমির দাম ২০ কোটি টাকা; স্কুলপ্রতি পূর্তব্যয় ২১ কোটি ৯ লাখ টাকা

ঢাকা শহরের আশপাশে স্কুলের জন্য জমি পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি জেলা প্রশাসক অফিস। তবুও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য কবে নাগাদ জমি পাওয়া যাবে সে ব্যাপারে ঢাকা জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে দেয়া চিঠিতে কোনো কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। এখানে প্রকল্পে প্রতি একর জমির দর ধরা হয়েছে ২০ কোটি টাকা যা অত্যধিক বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণের ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর আশপাশের এলাকায় দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অপ্রতুল। জনসংখ্যার বিবেচনায় বিদ্যালয় বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা শহরের প্রান্তিক এলাকায় বা শহরের নিকটবর্তী এলাকার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাহিদার তুলনায় বৃদ্ধি পায়নি। ফলে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে একটা ব্যবধান রয়েই গেছে। ঢাকা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর চাপ প্রতি বছরই বাড়ছে। ঢাকা শহরের আশপাশের এলাকায় বা মহানগরীর প্রান্তিক এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে সরকারি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়নি। ফলে এসব শিক্ষার্থীর মাধ্যমিকপর্যায়ে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে।
চাহিদা বিবেচনায় ঢাকা শহরের ভেতরের পাশাপাশি শহরসংলগ্ন এলাকায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যার জন্য ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাবনা আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদনের জন্য পেশ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য মোট ২০ একর জমির প্রয়োজন। শুধু কেরানীগঞ্জ উপজেলায় দুই একর জমির বন্দোবস্তের প্রস্তাব সংগ্রহ করা হয়েছে বলে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এক চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। বাকি ৯টি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় জমি অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত আছে। কিন্তু ওই ১৮ একর জমি কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তার কোনো তথ্য ডিসি অফিস থেকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি। ঢাকার নবীনগর, ইপিজেট বা আশুলিয়া, ধামরাই, পূর্বাচল, হেমায়েতপুর, জোয়ারসাহারা, সাইনবোর্ড, চিটাগাংরোড, শাহজাদপুর বা নুরের চালা, ইকুরিয়া বা ঝিলমিলÑ এসব এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য এখন জমি খোঁজ করা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সম্পূর্ণ সরকারি ৬৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪০০ কোটি টাকা। প্রতি একর জমির দর ধরা হয়েছে গড়ে ২০ কোটি টাকা। প্রতিটি স্কুলের পূর্ত কাজের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ফলে পূর্ত খাতে ব্যয় হবে মোট ২১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ১০টি অ্যাকাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। ১০ তলা ভিতে ১০ তলা ভবন। দুই তলা ভিতে দুই তলা ১০টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এটা হবে প্রধান শিক্ষকের জন্য কোয়ার্টার বা আবাসিক ভবন।
পরিকল্পপনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। ওই সময়ের মধ্যে যদি জমি পাওয়া না যায় বা সম্প্রতি সময়ে জমি পাওয়া বিলম্বিত হলে প্রকল্পের ব্যয়ও বৃদ্ধি পেতে পারে। প্রকল্পটি কোনো ধপ্রণর সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া করা হয়েছে। ফলে বছর পেরুলেই ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়ার সুযোগ খুঁজবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা। অনেক ক্ষেত্রেই প্রকল্পের ক্রয় খাতে দর অনেক বেশি ধরা হয় যা বাস্তবতার সাথে মিলও পাওয়াও যায় না।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/258725