৯ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ১০:২১

নেতিবাচক ধারায় রেমিটেন্স প্রবাহ

প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ আবারও নেতিবাচক ধারায় পড়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন (মাস হিসাবে)। এর আগে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৯২ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। ব্যাংকারদের মতে, ঈদের পরে সাধারণত রেমিটেন্স পাঠানোর গতি কমে। গত সেপ্টেম্বর মাসেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রায় পুরো সময় ধরে পড়তির দিকে থাকা রেমিটেন্স চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) কিছুটা ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে ফের তা কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে কম হলেও জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪.৩৭ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স এসেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৩৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা পড়েছিল। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৪.৪৮ শতাংশ রেমিটেন্স কম আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছে ১১৫ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। দ্বিতীয় মাস আগস্টে ১৪১ কোটি ৮৬ লাখ ডলার পাঠান প্রবাসীরা। সেপ্টেম্বরে পাঠিয়েছেন ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার।
সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ (১৫.৩১ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসে। এরপর প্রতিবছরই রেমিটেন্স কমেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আড়াই শতাংশ কমে রেমিটেন্স আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে তা সাড়ে ১৪ শতাংশ কমে আসে ১ হাজার ২৭৭ কোটি ডলার, যা ছিল আগের ছয় অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিটেন্সের নিম্নগতিতে চিন্তায় পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে রেমিটেন্সের গতি বাড়াতে মাশুল না নেয়াসহ নানা ঘোষণাও দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তথ্য মতে, সেপ্টেম্বরে ৮৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার রেমিটেন্সের মধ্যে সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে আসে ৮৫ লাখ ডলার। ৩৯টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৬২ কোটি ৬ লাখ ডলার। আর নয়টি বিদেশি ব্যাংকের মাধামে আসে ৯৫ লাখ ডলার। রেমিটেন্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিদেশ থেকে অবৈধ পথে টাকা পাঠানোকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবের অর্থনীতির নাজুক অবস্থার কথা বলে আসছে আইএমএফ। দেশের রেমিটেন্সের অর্ধেকের বেশি আসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ- সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইন থেকে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=86558