৯ অক্টোবর ২০১৭, সোমবার, ৯:৪৫

পাবিপ্রবিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম

ইতিহাস বিভাগে ভিন্ন ডিসিপ্লিনের প্রার্থীকে সুযোগ


পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিজ্ঞপ্তির শর্ত ভেঙে ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগে ইসলামের ইতিহাস থেকে পাস করা প্রার্থীদের সুযোগ দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ একজন কর্তাব্যক্তির পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে বিভাগের প্লানিং কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। আগামীকাল সোমবার সকালে ওই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা ও বিকাল ৩টায় ভাইভা অনুষ্ঠিত হবে।
এ ব্যাপারে পাবিপ্রবি প্রোভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলামের দাবি ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগে ইসলামের ইতিহাস থেকে পাস করা প্রার্থী নেয়া বৈধ। তিনি বলেন, ‘যেহেতু শুধু ইতিহাস নয়, এর সঙ্গে বাংলাদেশ স্টাডিজও আছে। তাই ইসলামের ইতিহাস আসতে পারে, এটা অবৈধ নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চে পাবিপ্রবির অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার দফতর থেকে ১১টি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এরমধ্যে ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগে দুটি প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়া হবে। ২০ এপ্রিল আবেদন প্রক্রিয়া শেষে মোট ৮০ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। পরে তাদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য চিঠি ইস্যু করা হয়। সেখানে ইসলামের ইতিহাস থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করা প্রার্থীদেরও সুযোগ দেয়া হয়। অথচ বিজ্ঞপ্তিতে দুটি প্রভাষক পদে আবেদন করতে প্রার্থীদের যোগ্যতার অংশে বলা হয়েছিল, ‘সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অর্থাৎ ইতিহাস বিভাগ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স পাস হতে হবে।’
এদিকে প্রার্থীদের পরীক্ষার নিয়ম জানিয়ে ইস্যু করা চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘প্রথমে ৫০ নম্বরের বিষয়ভিত্তিক লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তাতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ৩০ নম্বরের ভাইভা ও ২০ নম্বর ক্লাসে লেকচার দেয়ার ওপর ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হবে।’ বিষয়ভিত্তিক লিখিত পরীক্ষায়ও ইতিহাসসংশ্লিষ্ট প্রশ্ন করা হবে, তাহলে ইসলামের ইতিহাসের প্রার্থীরা কিভাবে সেখানে সুযোগ পাচ্ছে- তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞ ও সিনিয়র অধ্যাপকরা।

ইসলামের ইতিহাসের প্রার্থীকে সুযোগ দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পাবিপ্রবি ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘হ্যা, আমরা ইসলামে ইতিহাস বিভাগের প্রার্থীদেরও প্রাথমিক বাছাইয়ে রেখেছি। সেটা বিভাগের প্লানিং কমিটির সিদ্ধান্তে করা হয়েছে।’ তবে পছন্দের কোনো প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়ার উদ্দেশ্য নেই বলে দাবি করেন তিনি।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র অধ্যাপক আবুল কাশেম যুগান্তরকে বলেন, ইতিহাস এবং ইসলামের ইতিহাস বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন ডিসিপ্লিন। পাবিপ্রবিতে ইতিহাস বিভাগের নামকরণ করা হয়েছে- ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ। বাংলাদেশ স্টাডিজে মূলত বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইতিহাসসহ অন্যান্য বিষয়ে পড়ানো হয়। ফলে ইতিহাস কিংবা বাংলাদেশ স্টাডিজে কোনোভাবে ইসলামের ইতিহাসের প্রার্থী নিয়োগ হতে পারে না। যদি সেখানে এমনটি করা হয়, তবে সেটা হবে অবশ্যই বিভাগের প্লানিং কমিটির ‘চরম অযোগ্যতা’ কিংবা ‘অসৎ উদ্দেশ্য’।

নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আশা ইসলাম নাইম বলেন, ইতিহাস ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিষয় এবং ইসলামের ইতিহাস সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে ইসলামের ইতিহাসের প্রার্থী নেয়া হয় বলে জানা নেই। পাবিপ্রবির বিষয়টিও আমি জানি না, নিয়োগ বোর্ডে না গিয়ে এ বিষয়ে আগে কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
সার্বিক বিষয়ে জানতে পাবিপ্রবি অতিরিক্তি রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্মের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/10/08/161492