৮ অক্টোবর ২০১৭, রবিবার, ১০:৪৫

স্মার্টকার্ড পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা আড়াই কোটি ভোটারের

প্রায় আড়াই কোটি ভোটারের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র (স্মার্টকার্ড) পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ওবার্থ কোম্পানির ব্যর্থতায় স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রমটি মুখ থুবড়ে পড়ে। সঙ্কটে অনেকটা দিশেহারা নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এ দিকে পরিচয়পত্র না পাওয়া নাগরিকেরা সেবা পেতে পদে পদে হোঁচট খাচ্ছেন। এনআইডির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে আইরিশ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার সঙ্কটে স্মার্টকার্ড বিতরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এসব যন্ত্রাংশ সংগ্রহের পর সিটি করপোরেশন এলাকায় কার্ড বিতরণ বেশ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ প্রকৃত চিত্র অনুযায়ী ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে আড়াই কোটির স্মার্টকার্ড পেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই বছর।

ইসি সূত্র জানায়, চুক্তি বাতিল হওয়া ফ্রান্সের ওবার্থ কোম্পানি ৯ কোটি কার্ডের মধ্যে সরবরাহ করেছে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ব্লাংক কার্ড। যার মধ্যে এক কোটি ২৪ লাখ স্মার্টকার্ড পারসোনালাইজেশন সম্পন্ন হয়েছে; বাকি কার্ড ব্লাংক। এগুলোই পারসোনালাইজেশন করে ভোটার হওয়া নাগরিকদের সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া সবাইকে স্মার্টকার্ড দেবে কমিশন এ উদ্যোগে ২০১৩ সালের পর এখন পর্যন্ত নিবন্ধন হওয়া সোয়া কোটির বেশি নাগরিককে দেয়া হয়নি সাধারণ পরিচয়পত্র।
জানা যায়, সঙ্কট উত্তরণে নানামুখী চিন্তা শুরু করেন এনআইডির বর্তমান ডিজি। ৩১ ডিসেম্বরের পর সরকারি অর্থায়নে স্মার্টকার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর জন্য অর্থের অপচয় ঠেকাতে ব্যয় সঙ্কোচন নীতির পথে হাঁটছেন তারা। তবু নাগরিকদের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৯ কোটি ভোটারকে স্মার্টকার্ড দেয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ ওবার্থের সরবরাহ কার্ড পারসোনালাইজেশন করার পরও দুই কোটি ৪৫ লাখ নাগরিক থাকবেন ওই প্রযুক্তির বাইরে।

সম্প্রতি কমিশন উদ্ভূত সঙ্কট থেকে উত্তরণে নানামুখী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে বিকল্প কিছু পন্থা বের করেছে। কমিশন বৈঠকের জন্য তৈরি কার্যপত্রে দেখা যায়, ২০১২ সালের পর নতুন নিবন্ধিত নাগরিকদের স্মার্টকার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। বিদ্যমান সঙ্কটকালে আগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে সারা দেশে অল্পসংখ্যক নাগরিকের স্মার্টকার্ড বিতরণে যে পরিমাণ আইরিশ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার লাগবে তার ন্যূনতম মজুদ নেই। ফলে এ কার্যক্রমটি গ্রহণ ইসির জন্য বেশ জটিল ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।
তবে আইডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে এক কোটি পেপার লেমিনেটেড কার্ড মুদ্রণের জন্য ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় বরাদ্দে সম্মতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, যা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। আইডিয়া প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কার্ড না পাওয়া এসব নাগরিককে আইরিশ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার ডিভাইসের নির্ভরশীলতা ছাড়াই অন্তত একটি কার্ড দেয়া সম্ভব। এটা পেলে সংশ্লিষ্টরা নাগরিক সেবা প্রাপ্তির বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পাবেন।

কার্যপত্রে আরো বলা হয়, বর্তমানে মজুদ সাত কোটি ৭৩ লাখ কার্ড বিতরণ শেষ হওয়ার সময়কালে পরবর্তী আড়াই কোটি ভোটারের স্মার্টকার্ড প্রদান সম্ভব না হলেও ২০১২ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত ভোটার নাগরিকেরা কার্ড পাননি এমনটি হবে না। এ ছাড়া পেপার লেমিনেটেড কার্ড দিলে এটিতে তথ্যগত ভুল থাকলে স্মার্টকার্ড পাওয়ার আগেই সংশোধনের সুযোগ পাবেন। ফলে দ্বিতীয়বার ব্যয়বহুল স্মার্টকার্ড মুদ্রণ বাবদ সরকারি অর্থের অপচয় হবে না। এমনকি ভোটার পরিচয়পত্র না পাওয়া নাগরিকেরা বর্তমানে চাকরি, পাসপোর্ট তৈরি, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন, বিদেশ ভ্রমণ, ট্যাক্স, ব্যাংক, বীমা, ব্যবসায়বাণিজ্য ইত্যাদি কাজে ব্যক্তি শনাক্তকরণে সমস্যায় পড়ছেন, তারাও হয়রানি থেকে বাঁচবেন।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/257698