৭ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ২:৩৮

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান প্রসঙ্গে

আত্মপক্ষ

এবনে গোলাম সামাদ
১৯৪৫ সালে ২৪ অক্টোবর জাতিসঙ্ঘের (UNO) জন্ম হয়। এ সময় রাজশাহী ছিল একটি খুবই ছোট শহর। আমি পড়তাম স্কুলে। কিন্তু এই ছোট শহরে একটি বিতর্কসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, বিশ্ব শান্তি রক্ষায় জাতিসঙ্ঘ কতটা সফল হতে পারবে সেটা নিয়ে। শ্রোতা হিসেবে আমি সে সভায় উপস্থিত ছিলাম। অনেক বক্তাকেই বলতে শুনেছিলাম, জাতিসঙ্ঘ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বিশেষ কোনো ইতিবাচক অবদান রাখতে পারবে না। কেননা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স ও চীনের থাকছে ভেটো প্রদানের ক্ষমতা। অর্থাৎ এই পাঁচটি শক্তির কোনো একটি শক্তি যদি কোনো প্রস্তাবের বিরোধিতা করে, তবে তা পাস হবে না। আজ আমি এখন বৃদ্ধ বয়সে নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি, যারা বলেছিলেন জাতিসঙ্ঘ বিশ্ব শান্তিতে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে না, তারা ছিলেন যথেষ্ট সঠিক।

জাতিসঙ্ঘ আরাকানে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হচ্ছে, কেননা, চীন ও রাশিয়া করছে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিশেষ বিরোধিতা। মানছে না জাতিসঙ্ঘের অন্যান্য বেশির ভাগ সদস্য রাষ্ট্রের মতামতকে। রাশিয়া ও চীন রোহিঙ্গাদের পক্ষ কখনোই গ্রহণ করবে না। কেননা, রাশিয়া ও চীনের আছে মুসলমানদের নিয়ে বিশেষ সমস্যা। আমাদের দেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতনামা এমিরেটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলছেন, পুঁজিবাদী স্বার্থেই রোহিঙ্গাদের পাশে নেই রাশিয়া ও চীন (বাংলাদেশ প্রতিদিন : ৫ অক্টোবর ২০১৭)। কিন্তু এখানে পুঁজিবাদকে টেনে আনার কি কোনো যুক্তি আছে? পুঁজিবাদী বেশির ভাগ রাষ্ট্রই যেখানে জানাচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহানুভূতি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়ার চেয়ে কম পুঁজিবাদী রাষ্ট্র নয়। কিন্তু তারা সহানুভূতি প্রকাশ করছে রোহিঙ্গা জনসমষ্টির পক্ষে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল ১৫টি রিপাবলিক নিয়ে গঠিত। যার মধ্যে ছয়টি ছিল মুসলিম অধ্যুষিত। এই ছয়টি মুসলিম অধ্যুষিত রিপাবলিক সবাই রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে। বিশেষ করে উজবেকিস্তান ও তাজাকিস্তান। অন্য দিকে আমরা দেখছি, চীন সে দেশের মুসলমানদের (উইঘুর এবং হুই) বাড়িতে কুরআন শরিফ রাখা পর্যন্ত করে দিয়েছে বেআইনি। এই যে মুসলিমবিদ্বেষ, এটা কি পুঁজিবাদী স্বার্থ দিয়ে ব্যাখ্যা করা চলে? আমাদের অনেক অধ্যাপক এখনো মার্কসবাদ, লেনিনবাদ দিয়ে যথেষ্ট প্রভাবিত। এরা বলছে, ছকবাঁধা কথা। এরা জানে না যে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় জার্মান বাহিনী যখন রাশিয়ার মধ্যে ঢুকছিল, তখন জোসেফ স্টালিন ঘোষণা করেছিলেন, রাশিয়াতে গির্জায় গির্জায় রাশিয়া যুদ্ধ জিতবে বলে প্রার্থনা করা যাবে। অর্থাৎ ধর্মকে তিনি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ জেতার জন্য। মনে করেছিলেন, ধর্ম রাশিয়ার মানুষের মনোবলকে রক্ষায় সক্ষম হবে। আমাদের সিরাজুল ইসলাম সাহেবরা মানবজীবনে ধর্মবিশ্বাসের কোনো প্রভাবকে মানতে রাজি নন। তাই বলতে পারছেন, পুঁজিবাদী স্বার্থেই রোহিঙ্গাদের পাশে নেই রাশিয়া ও চীন। রোহিঙ্গারা যদি মুসলমান না হতো, তবে চীন-রাশিয়া তাদের পক্ষ নিত সহজেই। ভারত রোহিঙ্গাদের পক্ষ গ্রহণ করছে না প্রায় একই রকম মুসলিমবিদ্বেষের কারণে। এটা আমাদের উপলব্ধিতে থাকতে হবে। না হলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাড়বে অনেক জটিলতা।

পুরো মুসলিম বিশ্ব এসে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গাদের সমর্থনে। মুসলিম দেশ হিসেবেই তারা সমর্থন করছে, রোহিঙ্গাদের আরাকানে থাকার অধিকার। না হলে তারা এভাবে রোহিঙ্গাদের সমর্থনে এগিয়ে আসত না। রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের সাথে কিছুটা মিল পাওয়া যাচ্ছে খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তখনকার স্পেন থেকে মোর মুসলিম বিতাড়নের। বিতাড়িত মোর মুসলিমেরা এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল উত্তর আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে। তারা আর ফিরতে পারেনি অথবা ফিরতে চায়নি স্পেনে।
ধর্ম মানব ইতিহাসে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। এই উপমহাদেশে মুসলিম জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সৃষ্টি হতে পেরেছিল পাকিস্তান আন্দোলন। পাকিস্তান একটি রাষ্ট্ররূপে হতে পেরেছিল আবির্ভূত। সাবেক পাকিস্তান ১৯৭১ সালে বিভক্ত হলেও বাংলাদেশে বিরাজ করছে একটা মুসলিম স্বাতন্ত্র্য চেতনা। যাকে বলা চলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি। বাংলাদেশে আরাকান থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানরা পালিয়ে আসছে, তার কারণ বাংলাদেশ একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এটা আমাদের উপলব্ধিতে না থাকলে বড় রকমের ভুল করাই হবে।

রোহিঙ্গা সমস্যা কোনো পুঁজিবাদসংশ্লিষ্ট সমস্যা নয়। আরাকানকে এবং সেই সাথে মিয়ানমারকে (মিয়ানমা) পুঁজিবাদী রাষ্ট্র বলা চলে না। সেসব রাষ্ট্রই পুঁজিবাদী, যার অর্থনীতিতে জটিল যন্ত্র পালন করছে বিশেষ ভূমিকা। আর এই জটিল যন্ত্র পরিচালিত হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ দিয়ে। কিন্তু মিয়ানমার এখনো হয়ে আছে কৃষিজীবী মানুষের দেশ। আর কৃষিতে এখনো ঘটেনি পুঁজিবাদী দেশগুলোর মতো জটিল যন্ত্রের প্রয়োগ। মিয়ানমার এখনো একটি কৃষি অর্থনীতিভিত্তিক দেশ। আমাদের মতোই তার এই কৃষি অর্থনীতি এখনো হয়ে আছে প্রধানত মওসুমি বায়ুনির্ভর। মিয়ানমারের বহু জমি জনশক্তির অভাবে পড়ে থাকে অকর্ষিত। মিয়ানমার ইচ্ছা করলে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি গ্রহণ করে বহুগুণে বাড়াতে পারে তার ধানের আবাদ। কিন্তু সে সেটা করতে ইচ্ছুক নয়। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের কোনো অর্থনৈতিক বিরোধ নেই। বিরোধ দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গা-মুসলিম উদ্বাস্তু নিয়ে। আর এই সমস্যা সৃষ্টির মূল কারণ হলো রোহিঙ্গারা ধর্মে মুসলমান। আর ভাষার দিক থেকেও তারা ম্রনমা নয়। আরাকানে থেরাবাদী বৌদ্ধরা ঠিক ম্রনমা ভাষায় কথা বলে না। তাদের ভাষাকে ভাষাতাত্ত্বিকেরা বলেন প্রাচীন ম্রনমা ভাষার একটি উপভাষা। অন্য দিকে রোহিঙ্গারা যে ভাষায় কথা বলে, সেটা হলো চট্টগ্রামের প্রচলিত বাংলাভাষা। আরাকানের উত্তর এবং পুবে এই ভাষা চলে। বৌদ্ধ আরাকানিরাও এই অঞ্চলে হাটবাজারে এই ভাষা বলে এবং বোঝে। মিয়ানমারের ভাষাতাত্ত্বিক ইতিহাস আর আরাকানের ভাষাতাত্ত্বিক ইতিহাস এক নয়। আরাকানের রাজসভায় একসময় বিশুদ্ধ বাংলাভাষা সাহিত্যের চর্চা হয়েছে। কেননা আরাকানের রাজারা বাংলাভাষা বুঝতেন। অর্থাৎ আরাকানের ভাষার ইতিহাস নানাভাবেই বাংলাদেশের সঙ্গে জড়িত। হঠাৎ করেই রোহিঙ্গাদের ভাষা বাংলা হয়ে গিয়েছে এমন নয়। কিন্তু এখন মিয়ানমারে প্রবল হয়ে উঠেছে ম্রনমা জাতীয়তাবাদ। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ভাবছে রোহিঙ্গারা ম্রনমা জাতীয়তাবাদের শত্রু। আর তাই ম্রনমা সেনারা রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করছে আরাকান থেকে। এর সঙ্গে পুঁজিবাদের কোনো যোগসূত্র নেই। এটা কোনো শ্রেণিসংগ্রামেরও ফল নয়। বর্তমান লেখকের মনে হয় মিয়ানমারের রাজনৈতিক ইতিহাস আমাদের অনেক অধ্যাপক আসলেই জানেন না। আর তাই হতে পারছে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে চিন্তা-বিভ্রাট।

আমি আমার একটা লেখায় বলেছি, ফারসিতে, পালি ভাষায় যাকে বলা হতো ব্রহ্মদেশ তাকে বলা হতে থাকে বারহামা। এই বারহামা থেকে ইংরেজি ভাষায় উদ্ভব হতে পেরেছিল বার্মা নামটির। ম্রনমা ভাষা একমাত্র চলত বার্মার মূল ভূখণ্ডে। বার্মার ইতিহাসে আমরা দেখি একপর্যায়ে বর্মি রাজারা বাইরের বিশ্বের সাথে চিঠিপত্র আদান-প্রদান করত ফারসি ভাষার মাধ্যমে। দক্ষিণ বার্মার রাজা বোদোপায়া (Bodawpaya) ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সব চিঠি লিখেছিলেন ফারসি ভাষায়; ম্রনমা ভাষায় নয়। বোদোপায়া আরাকান জয় করেন ১৭৮৫ খ্রিষ্টাব্দে। এ সময় নি¤œ-বার্মা থেকে আসা বোদোপায়ার সৈন্যরা আরাকানে ভয়ঙ্কর অত্যাচার ও লুটপাট করে। যার কারণে আরাকান থেকে পালিয়ে আসে চাকমা এবং মারমারা চট্টগ্রামের কক্সবাজার অঞ্চলে। এরপর চাকমা এবং মারমাদের মধ্যে শুরু হয় বিবাদ। চাকমারা মারমাদের সাথে সঙ্ঘাতে এঁটে উঠতে না পেরে ক্রমেই সরে যেতে থাকে রাঙ্গামাটির দিকে। চাকমা এবং মারমাদের এখন অনেকে বলছেন এই অঞ্চলের আদিবাসী (Aborigine) । কিন্তু এরা তা মোটেও নয়। আরাকান থেকে সমুদ্রপথে আর একদল মারমা পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় বর্তমান বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালীতে। এখন আরাকান থেকে ম্রনমা বাহিনীর অত্যাচারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের পালিয়ে আসতে হচ্ছে বাংলাদেশে। মিয়ানমার সরকার বলছে, রোহিঙ্গারা আসলে হলো চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া বাংলাভাষী মুসলমান। কিন্তু আমরা ইতঃপূর্বে বলেছি রোহিঙ্গা নামের উদ্ভব হয়েছে রোহং নাম থেকে। আরাকানের এক রাজা ব্রহ্মের এক রাজার কাছে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান গৌড়ে। গৌড়ের সুলতান জালাল-উদ-দীন মুহাম্মদ শাহ (হিজরি ৮২১-৩৬) তাকে প্রচুর সৈন্য দেন হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য। যার সাহায্যে আরাকানের এই রাজা মেং সোয়া-মউন তার হৃতরাজ্য পুনরুদ্ধারে সক্ষম হন। তিনি নতুন রাজধানী স্থাপন করেন, যার নাম দেন ম্র্ােহং অথবা রোহং। গৌড় থেকে যেসব সৈন্য আরাকানে যায় তারা মেং সোয়া-মউনের অনুরোধে রাজধানী রোহংয়ে থেকে যায়। এদের বংশধরদের বলা হতে থাকে রোহিঙ্গা। এরা হঠাৎ করেই আরাকানে যেয়ে উপস্থিত হয়নি। যদিও মিয়ানমার সরকার এখন সেটাই প্রমাণ করার চেষ্টা করছে।

আরাকানের আছে একটা পৃথক ইতিহাস। আরাকান একসময় ছিল একটা পৃথক রাজ্য, যাকে ফারসিতে বলা হতো আরাখং। এই আরাখং নাম থেকেই ইংরেজিতে পরে উদ্ভব হতে পেরেছে আরাকান নামটি। খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে আবুল ফজল তার বিখ্যাত আইন-ই আকবরী বইতে ফারসি ভাষায় যা লিখেছেন, তার ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলা করলে দাঁড়ায় : সুবে বাংলার দক্ষিণ-পূর্বে আরখং রাজ্য। এই রাজ্যে অনেক হাতি পাওয়া যায়। কিন্তু অশ্ব খুবই মহার্ঘ্য। গাধা এবং উট এখানে চড়া দামে বিক্রি হয়। এই রাজ্যে গরু এবং মহিষ দেখা যায় না। এখানে মানুষ গাভীজাতীয় একধরনের প্রাণীর দুগ্ধ পান করে। এই দেশে মানুষ না-হিন্দু, না-মুসলমান। যমজ ভ্রাতা-ভগ্নির মধ্যে এ দেশে বিবাহ প্রচলিত আছে। মাতা ও পুত্র ছাড়া আর সবার মধ্যেই বিবাহ সম্পন্ন হতে পারে। এই দেশে লোকে তাদের পুরোহিতের (ওয়ালির) সম্পূর্ণ আজ্ঞাবহ। এখানে রাজপ্রাসাদে স্ত্রীলোক প্রহরীর কাজ করে। এ দেশের অধিবাসীদের গায়ের রঙ কালো। পুরুষ মানুষের মুখে দাড়ি হয় না।

মিয়ানমার (মিয়ানমা) যার নাম ১৯৮৯ সালের ১৮ জুন পর্যন্ত ইংরেজিতে ছিল বার্মা (Burma) । তার রাজনৈতিক ইতিহাস পড়লে দেখি, ব্রিটিশ শাসনামলে অং সান সু চির পিতা অং সান তার সাথীদের নিয়ে বার্মায় গড়েছিলেন একটি রাজনৈতিক দল, দোবামা আসিওনে (আমাদের বার্মা) নামে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪১ সালে এই দল জাপানের সাথে হাত মেলায় এবং গড়ে একটি বর্মি জাতীয় সরকার। কিন্তু পরে ১৯৪৫ সালের শুরুতে হাত মেলায় গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে। ১৯৪৭ সালে দোবামা আসিওনে দলের মধ্যে সৃষ্টি হয় গভীর তাত্ত্বিক মতবিরোধ। দলের একটি অংশ হত্যা করে অং সান ও তার সাথীদের। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বার্মায় ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়। বার্মায় প্রধানমন্ত্রী হন উ-নু। তিনিই প্রথম বার্মায় প্রদান করেন বৌদ্ধবাদী সমাজতন্ত্রের ধারণা। তিনি এটা করেন বার্মায় মার্কসবাদী সমাজতন্ত্রের ধারণাকে খর্ব করার লক্ষ্যে। আর এক কথায় শ্রেণিসংগ্রামের নামে মারদাঙ্গার রাজনীতি বন্ধ করা ছিল তার উদ্দেশ্য। তিনি আসলে অনুসরণ করতে চান ব্রিটিশ গণতন্ত্রের ধারা। বৌদ্ধবাদী সমাজতন্ত্রের নামে তিনি গ্রহণ করতে চান বিলাতের লেবার পার্টির অনুসৃত কল্যাণব্রতী রাষ্ট্রের (Welfare State) ধারণাকে। ১৯৬২ সালে বার্মায় ঘটে সামরিক অভ্যুত্থান। উ নু বন্দী হন। ক্ষমতায় আসেন সেনাপতি নে উইন। ১৯৭৪ সালে নে উইন আরাকানের নাম বদলিয়ে রাখেন রাখাইন। আরাকানে ম্রনমা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করছে কেননা, রোহিঙ্গারা মুসলমান। রোহিঙ্গাদের ভাষা ম্রনমা নয় এবং তারা ম্রনমা ভাষাকে সেভাবে শিখতেও চাচ্ছে না।
রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। না হলে জটিলতা আরো বাড়বে। মিয়ানমার সরকার মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে। এই আশ্বাসে বিশ্বাস করা হবে বড় রকমের ভুল। কেননা, মিয়ানমারের সেনা শাসকেরা অনুসরণ করতে চাইবে উগ্র ম্রনমা জাতীয়তাবাদী নীতিকেই। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে শুধু বাংলাদেশের সুশিক্ষিত দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীই পাঞ্জা লড়তে পারে : বাংলাদেশের শৌখিন রাজনীতিবিদেরা নন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কখনোই হবে না।
লেখক : প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/257825