৭ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ৮:১০

ভারতীয় ঋণের বাস্তবায়ন হতাশাজনক

তিনদিনের ঢাকা সফর শেষে দেশে ফিরে গেছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আমন্ত্রণে গত মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের একটি বিশেষ বিমানে ঢাকায় আসেন অরুণ জেটলি। এ সফরের অংশ হিসেবে ভারতের অর্থমন্ত্রী গত বুধবার বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন। এরপর দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য পূর্বঘোষিত তৃতীয় দফায় ভারতের ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর অরুণ জেটলি পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ ও ভারতীয় হাই কমিশনের উদ্যোগে ‘ভারত সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্যোগ’ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।

ভারতের অর্থমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী যৌথভাবে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ‘ক্যাশলেস ভিসা সার্ভিস’ পরিচালনার নতুন সেবা এবং এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ঢাকা কার্যালয় উদ্বোধন করেন। এছাড়া ভারতীয় অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং ভারতের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফআইসিসিআই আয়োজিত বাণিজ্য আলোচনাসহ কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অরুণ জেটলির সঙ্গে ভারতের অর্থ সচিব সুভাষ চন্দ্র গর্গসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং দেশটির ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফআইসিসিআইয়ের ৩০ সদস্যের প্রতিনিধি দলও ছিলেন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় বাংলাদেশের জন্য ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঋণচুক্তিটির আওতায় বাংলাদেশের অগ্রাধিকার পাওয়া ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এদিকে স¤প্রতি ভারতের কাছ থেকে সাড়ে চার শত কোটি ডলার ঋণ পাবার আগে ভারত থেকে নেওয়া হয়েছিল সাড়ে তিন শত কোটি ডলারের ঋণ। তবে সেটির মধ্য থেকে মাত্র ৫০ কোটি ডলার ব্যবহার হয়েছে। বাকি টাকা এখনও কোন কাজে বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই নতুন এই ঋণকে বায়ার্স ক্রেডিট উল্লেখ করে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক না হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, ভারত প্রথম ক্রেডিট লাইনই এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ ছাড় করেনি। তাই তৃতীয় ক্রেডিট লাইনের চুক্তি করে দায় বাড়ানোর কোন মানে হয় না। অবশ্য ভারতীয় ঋণ চুক্তির অর্থ ছাড়ে ইতোমধ্যো অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আমি খুব একটা পক্ষপাতী না। এ চুক্তি করে আমাদের তেমন লাভ হবে না। পাইপলাইনে আটকেপড়া সহজ শর্তের প্রায় তিন হাজার ২০০ কোটি ডলার পড়ে আছে, আমরা ব্যবহার করতে পারি না। এসব সহজ শর্তের ছাড় করা গেলে এবং যথাযথভাবে ব্যয় করতে পারলে এ ধরনের ঋণ নেয়ার দরকার নেই। তাছাড়া ভারতের এটা তৃতীয় ঋণচুক্তি হতে যাচ্ছে। প্রথমটাই মনে হয় এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। দ্বিতীয়টাও খুব সামান্য ব্যবহার হয়েছে। কাজেই খামাখা একটার পর একটা চুক্তি করে দায়বদ্ধতা বাড়ানোর তো কোনো অর্থ হয় না।

সূত্র মতে, বাংলাদেশের প্রধান অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্যে নেওয়া এই ঋণের এতো ধীরগতির বাস্তবায়ন আসলেই হতাশাজনক। প্রকল্প নির্বাচন, সেটির অনুমোদন, ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর, দরপত্র মূল্য নির্ধারণ এবং ভূমি অধিগ্রহণ সহ বেশ কিছু জটিলতার কারণে এই বিলম্ব হচ্ছে। তবে সরকারের এই জটিলতার সমাধান করে এই প্রকল্পগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও এক অজানা রহস্যের কারণে কিছুই হয়ে উঠে না।

পূর্বের নেওয়া ঋণ এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা না হলেও ভারত থেকে আরও সাড়ে চারশ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হচ্ছে। তবে চিন্তার বিষয় এই যে, গত দুবারের ক্রেডিট লাইন (এলওসি) চুক্তির যেভাবে ধীরগতির বাস্তবায়ন হচ্ছে, তৃতীয় এলওসির ও কি একই পরিণতি হবে? সূত্র জানায়, ঢাকা-টঙ্গি-জয়দেবপুর দ্বৈত গেজ রেললাইন, খুলনা-মংলা রেললাইন এবং রূপসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ার ফলে পিছিয়ে যাচ্ছে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আরও বেশকিছু প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির দ্বারা অনুমোদন না পাওয়ার ফলে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। অবশ্য বিশেজ্ঞরা বলেছেন, দেশের প্রধান অবকাঠামো উন্নয়নের বিলম্বের আসল কারণগুলো প্রশাসনের একেবারেই নজনে নেই। এখনই সময় এসব সমস্যাগুলোর দ্রæত সমাধান করে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/98571/