৭ অক্টোবর ২০১৭, শনিবার, ৭:৫৯

অদক্ষতার কারণে বিদেশীরা প্রতি বছর নিয়ে যাচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৫০০ কোটি ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে, বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশীরা। কারণ এই দেশের শ্রমশক্তিতে দক্ষতার অভাব রয়েছে। আর এই দক্ষতার কাজটি পূরণ করা হচ্ছে এসব বিদেশীকে দিয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এই জন্য ‘উদ্যেক্তা সৃষ্টি ও উন্নয়ন কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শ্রমশক্তির স্বল্প দতা উচ্চতর হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধান অন্তরায়। বাংলাদেশ শিল্পায়ন ও কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হলেও প্রবৃদ্ধি অনুয়ায়ী শ্রমশক্তির দতার মান সঙ্গতিপূর্ণ নয়। উচ্চতর পর্যায়ে দতার ঘাটতির কারণে প্রতি বছর দেশের মোট প্রবাসী আয়ের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশী শ্রমিকেরা। সার্বিকভাবে দতার উন্নয়ন ও ক্রমশ বিদেশী কর্মীদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ, উচ্চতর ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইনকিউবেটর’ বা ‘উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও উন্নয়ন কেন্দ্র’ স্থাপন এবং ‘বিশেষায়িত স্কিলস বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘দতা উন্নয়ন : উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের অগ্রাধিকার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। এতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধিতে দেশজ শিল্পের অবদান প্রায় ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে কম। দীর্ঘ দিন ধরে এ দেশে শিল্প খাতের অগ্রগতি দ জনশক্তির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা শিল্প কল-কারখানার চাহিদার উপযোগী নয়। প্রকৃত দতা চাহিদার সাথে দতা সরবরাহ ব্যবস্থায় অসামঞ্জস্যতা থাকায় বিদ্যমান ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না।’

‘শিল্প কারখানাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে দতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদান করলেও এতে সমন্বয়হীনতা থাকায় তা শিল্প খাতের চাহিদা মেটাতে সম হচ্ছে না’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের ৫ কোটি ৮৭ লাখ শ্রমশক্তি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। খাতওয়ারি হিসেবে কৃষি খাতে ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশ, সেবা খাতে ৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও শিল্প খাতে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ জনগোষ্ঠী কর্মরত রয়েছে।

বর্তমানে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী শ্রমিকের সংখ্যা আনুমানিক ৪৫ লাখের অধিক। এসব কর্মজীবীর মধ্যে ব্যবস্থাপক, টেকনিশিয়ান, সহায়ককর্মী, সেবা ও বিপণনকর্মী, কৃষি-বন ও মৎস্য খাতে দ কর্মী, কারু শিল্পে নিয়োজিত কর্মী, প্যান্ট ও মেশিন অপারেটর, যন্ত্রাংশ সংযোজনকারীসহ অন্যান্য প্রাথমিক স্তরের নিয়োজিত কর্মী রয়েছে। বর্তমানে দেশে যে বিশাল আকারের যুব জনগোষ্ঠী রয়েছে এদের গড় বয়স মাত্র ২৬ বছর। প্রতি বছর গড়ে ২০ লাখ নতুন কর্মী দেশের শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে ৭০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত এবং এরা প্রতি বছর গড়ে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠায়। এর বিপরীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২ লাখ বিদেশী কাজ করে। বেতনভাতা বাবদ এরা প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি ডলার নিয়ে যায়।

বাংলাদেশী শ্রমিকদের উচ্চতর পর্যায়ে দতার ঘাটতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এর প্রধান কারণগুলো হচ্ছেÑ শিল্প খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞের অভাব, কল-কারখানাগুলোতে দ শ্রমিক ও ব্যবস্থাপকের অভাব, নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ও উদ্ভাবিত প্রযুক্তির সাথে মানিয়ে নেয়ার দতা না থাকা, দ শ্রমশক্তি তৈরিতে প্রয়োজনীয় প্রশিণ প্রদানে কারখানাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ও উদ্যোগের অভাব এবং কমর্রত বিদেশী বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে জ্ঞান আহরণে আগ্রহের অভাব।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/257516