৪ অক্টোবর ২০১৭, বুধবার, ৮:৪৮

গণকবর থেকে রোহিঙ্গাদের লাশ সরাচ্ছে মগসেনারা

মগসেনা রোহিঙ্গাদের এখন তেমন একটা গুলী করে মারছে না। তবে শহরাঞ্চলে ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে মগবাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইনরা। শীঘ্রই ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তারা। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, কয়েকশ’ যুবককে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছি যারা এখনো ফিরে আসেনি। এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও তাদের এখনোও কোনো হদিস পাইনি। আমাদের সন্ধ্যার পর থেকে কোথাও যেতে দেওয়া হয় না। বাজারে যেতে পারি না। ঘরে খাবার নেই। উপোস পড়ে রয়েছি গত তিনচার দিন ধরে। এরপর থাকতে না পেরে বাংলাদেশের দিকে রওয়ানা দিয়েছি। গতকাল সোমবার ভোরে শাহপরীদ্বীপে এসে পৌঁছি। এভাবেই বাংলাদেশে প্রবেশ করার কারণগুলো বর্ণনা করছিলেন রোহিঙ্গা মুসলিম বুথিদংয়ের আলী হোছেন। বয়স ৪৫ হবে। ৬ সন্তানের পিতা তিনি। এখন রয়েছেন উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের লংবীচ স্কুলের বারান্দায়।
বর্মী প্রশাসনের নৃশংসতার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো থামেনি রোহিঙ্গাদের ঢল। শহরাঞ্চলের রোহিঙ্গারা হুমকির মুখে ঘরবাড়ি ছাড়ছে। বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের সংখ্যাও।
ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের দিকে রোহিঙ্গাদের ঢল থামেনি। প্রতিদিন বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। সদ্য আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে এখনো বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য হাজার রোহিঙ্গা অপেক্ষমাণ। মিলিটারি ও পুলিশের টহল এবং সীমান্তে স্থলমাইন বসানোর কারণে আটকা পড়েছে তারা। সুযোগ সময় বুঝে তারাও বাংলাদেশে পাড়ি জমাবেন। বাংলাদেশে গড়ে উঠা অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। গাদাগাদি করে কোনরকম মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে তারা।
শিশুরা যেখানে সেখানে মলমুত্র ত্যাগ করছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের অসুখে বিসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। এই বৃষ্টি এই রোদ, আবহাওয়া পরিবর্তন হওয়ায় রোহিঙ্গারা পানি এবং প্রচন্ড গরমের কারণে পানিশূন্যতাসহ ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
স্যানিটেশনের অভাবে বিপাকে পড়েছে কিশোরীরা। এক কিশোরীর সাথে কথা বললে কিশোরী জানায়, বাংলাদেশে আসার এক সপ্তাহ পর সে গোসল করেছে তাও গভীর রাতে। চামড়ায় গরমের কারণে ফুস্কা পড়েছে। রাতে মশার কামড় আর হাতির ভয়। ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে না পারার কারণে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে।
এক বৃদ্ধা বলেন, আল্লাহ্ আমাদের মৃত্যুর পর জাহান্নামে দিবেন না হয়তো। আমাদের সব গুনাহ এইবার মাফ করেছেন। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে শেষ হয়। কিন্তু রোহিঙ্গা মুসলমানদের মানবেতর জীবনের আর শেষ হচ্ছে না। আসলেই কি কখনো রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনের অবসান ঘটবে, এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট সকলের।
বুথিদং-এর গণকবর থেকে লাশ সরিয়ে নিচ্ছে প্রশাসন!
এদিকে বুথিদং-এর বিভিন্ন গণকবর থেকে রোহিঙ্গার মৃতদেহ সরিয়ে নিচ্ছে প্রশাসন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার সিন্দিপ্রাং পাহাড়ি এলাকায় গর্ত খনন করে লাশ সরিয়ে নিতে দেখেছে রোহিঙ্গারা। সূত্র জানিয়েছে, কয়েক প্লাটুন সেনা সদস্য শনিবার দুপুরে সিন্দিপ্রাং এর পাহাড়ী এলাকায় যায়। এ সময় কয়েকটি গর্ত খুঁড়ে শতাধিক লাশ উত্তোলন করে। পরে ভ্যানে করে তা নিয়ে যায় তারা।
এ ব্যাপারে বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা আরাকান পরিদর্শনের আগ্রহ প্রকাশ করছে। কিন্তু নিরাপত্তার অযুহাতে বিদেশী প্রতিনিধিদের আরাকানে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না বার্মা। কোন সময় আরাকানে বিদেশী প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষণ করলেও যাতে রোহিঙ্গাদের উপর চালানো গণহত্যার আলামত খুঁজে না পায়, সে লক্ষ্যে গণকবর থেকে লাশ সরিয়ে নিচ্ছে মগ প্রশাসন।

 

http://www.dailysangram.com/post/302082-