৪ অক্টোবর ২০১৭, বুধবার, ৮:৪৬

প্রধান বিচারপতির ছুটি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা

তিনি গৃহবন্দী এটা মিথ্যা : অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা এক মাসের ছুটি নেয়ার বিষয়টি গতকাল ছিল ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গন থেকে শুরু করে দেশের নাগরিক সমাজে এটিই ছিল আলোচনার বিষয়। গতকাল মঙ্গলবার থেকে প্রধান বিচারপতির ছুটি কার্যকর হয়েছে। এ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নিয়েছেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে চাপ প্রয়োগ করে ছুুটিতে পাঠানোর অভিযোগ করেছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তার সাথে গতকাল পর্যন্ত কারো সাক্ষাতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সুপ্রিম কোর্ট বারের নেতারা বলেছেন, তারা বিচারপতি সিনহার সাথে সাক্ষাৎ করবেন কি না আজকের বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। আর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, প্রধান বিচারপতি কোথায় আছেন তা তার জানা নেই। তার সাথে গতকাল পর্যন্ত কোনো সাক্ষাৎ হয়নি।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায় বহাল এবং রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকারের সাথে প্রধান বিচারপতির বিরোধ চলছিল। এ রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগ মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং বর্তমান সংসদ নিয়ে নানা মন্তব্য করেন, যা বর্তমান সরকারকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদেও বিস্তর আলোচনা হয়। প্রধান বিচারপতিকে ‘শান্তি কমিটির’ নেতা পাকিস্তানের এজেন্ট আখ্যায়িত করে তার অপসারণও দাবি করেন সরকারের প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তিরা। এমন প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতির অসুস্থতাজনিত ছুটি নিয়ে বেশ তোলপাড় চলছে।
এ দিকে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছুটিতে যাওয়ার এক দিন পর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সভাপতিত্বে গতকাল সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বিচার বিভাগের ভাবমর্যাদা সমুন্নত রাখতে কাজ করে যেতে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের প্রতি আহ্বান জানান। গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
এ দিকে প্রধান বিচারপতির সাথে গতকাল আইনজীবীদের নির্ধারিত সৌজন্য সাক্ষতের কথা থাকলেও গত দুই দিন থেকে কেন তার সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না সে বিষয়ে আইনজীবীরা প্রশ্ন তুলেছেন। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের দক্ষিণ হলে সাধারণ আইনজীবীদের এক সভায় আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি কোথায় কি অবস্থায় আছেন তা জানতে চান। এ ছাড়া সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে সভা শেষে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, আজ দল মত নির্বিশেষে সবাই জানতে চায় প্রধান বিচারপতি কেন হঠাৎ করে ছুটি নিলেন। তার সাথে আমরা কেউ যোগাযোগ করতে পারছি না।
এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান বিচারপতিকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তবে প্রধান বিচারপতির সাথে যোগাযোগ আছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন হলো তার সাথে আমার যোগাযোগ নেই। তিনি কোথায় আছেন তাও আমি জানি না। উনি ছুটিতে আছেন। আমরা জানি যে, উনি ক্যান্সারের প্যাশেন্ট (রোগী)।’
অন্য দিকে গতকাল বেলা সোয়া ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যথাসময়ে এজলাসে বসতে বিচারপতিদের পরামর্শ দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। এ সময় বিচারপতিদের সাথে কুশলাদি বিনিময় করেন তিনি। সভায় প্রয়োজন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ পুনর্গঠনের কথাও বলেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। ফুলকোর্ট সভায় বিচারকদের উদ্দেশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, সময় মতো কোর্টে আসবেন এবং এজলাসে বসবেন। বিচার বিভাগের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হয় এমন কাজ করবেন না। এ ছাড়া দ্রুত রায় লেখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের নিয়ে ফুল কোর্ট সভা ডাকেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। গতকাল সকালে সুপ্রিম কোর্টের এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই সভার বিষয়টি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বেলা সোয়া ২টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের মাননীয় বিচারপতিদের অংশগ্রহণে জাজেস লাউঞ্জে ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হবে।
অন্য দিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে গতকাল সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এক ঘণ্টা বসে কার্যতালিকার প্রায় ২০টির মতো মামলা নিষ্পত্তি করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেনÑ বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। এর আগে গতকাল সকাল ৯টায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে বসে আপিল বিভাগ। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিচারকরা আজ আদালতের এজলাসে বসছেন না। আপলি বিভাগ এ পর্যন্ত মুলতবি। তিনি বলেন, আইনজীবী ও বিচারপতিদের একটি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান থাকায় মামলা আজকের মতো পরিচালনা করবে না।
দীর্ঘ অবকাশকালীন ছুটি শেষে গতকাল আইনজীবীদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হওয়ার কথা ছিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার। কিন্তু সোমবার বিকেলে হঠাৎ এক মাসের ছুটি নেন প্রধান বিচারপতি এবং ছুটি নেয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি পাঠান। অপর দিকে সোমবার রাতেই আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো: আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাকে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি করে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়।
অন্য দিকে গতকাল ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতির সাথে আইনজীবীরা সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। সুপ্রিম কোর্ট গার্ডেনে বেলা সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে এ সৌজন্য সাক্ষাৎ চলে ১টা পর্যন্ত। এতে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি ও আইনজীবীরা অংশ নেন।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/256956