৪ অক্টোবর ২০১৭, বুধবার, ৮:৪২

ছয় হাজার কনটেইনারে ভুগছে চট্টগ্রাম বন্দর

বছর ঘুরলেও নিলাম হচ্ছে না * রাজস্ব ক্ষতি ১৫ হাজার কোটি টাকা * স্থান সংকটে বাড়ছে জট

কনটেইনারের পাহাড় জমেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে ছয় হাজার কনটেইনার এমন রয়েছে- যেগুলো মাসের পর মাস, এমনকি বছরেরও বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। নিয়ম অনুযায়ী, পণ্যবোঝাই এসব কনটেইনার নিলামে তোলার দায়িত্ব কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। কিন্তু প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে তা হচ্ছে না। এগুলো সরানোও যাচ্ছে না। এতে এসব কনটেইনার বিভিন্ন ইয়ার্ডে যেমন বড় অংশ দখল করে বন্দরে জট বাড়াচ্ছে, তেমনি স্থানাভাবে নতুন কনটেইনার রাখতে না পারায় প্রতি বছর বিশাল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থের হিসাবে ক্ষতি ১৫ হাজার কোটি টাকার কম নয়।


সূত্র জানায়, বন্দরে মঙ্গলবার নিলামের অপেক্ষায় থাকা কনটেইনার ছিল পাঁচ হাজার ৯৮৩ টিইইউএস (টুয়েন্টি ফিট ইকুইভিলেন্ট ইউনিটস), যা বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতার প্রায় ৬ ভাগের ১ ভাগ। এসব কনটেইনারের মধ্যে দেড় বছর আগের কনটেইনারও আছে, যা এখনও খালাস করেননি আমদানিকারকরা। এসব কনটেইনার বন্দরের যে পরিমাণ স্থান দখল করে রেখেছে সেই স্থানে যদি নতুন কনটেইনার রাখা যেত তাহলে কনটেইনার জট অনেকাংশেই কমে আসত। বর্তমানে বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইইউএস। মঙ্গলবার বন্দরে কনটেইনার ছিল ৩৯ হাজার ২২৭ টিইইউএস, যা ধারণক্ষমতার চেয়ে প্রায় তিন হাজার বেশি। কোনো কোনো দিন কনটেইনারের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় নতুন আসা কনটেইনার রাখতে গিয়ে স্থান সংকটে পড়ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সূত্রটি জানায়, আমদানি করা পণ্যবোঝাই কনটেইনার নির্ধারিত চার্জ পরিশোধ করে ৩০ দিন পর্যন্ত বন্দরের ইয়ার্ডে রাখা যায়। এ সময়ের মধ্যে যদি আমদানিকারক তার পণ্য খালাস না করেন তাহলে বন্দর কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট আমদানি কাগজপত্র তুলে দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হাতে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমদানিকারককে আরও ১৫ দিনের সময় দিয়ে এর মধ্যে খালাস করতে চিঠি দিয়ে থাকে। এ চিঠি পাওয়ার পরও কেউ যদি খালাস না করে, তাহলে তা বিক্রির জন্য নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমদানিকারকরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কনটেইনার খালাস না নেয়ায় বন্দরের অভ্যন্তরে বিপুল পরিমাণ কনটেইনার জমে গেছে। এগুলো নিয়ম অনুযায়ী নিলামে বিক্রি করে দিতে আমরা কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। বন্দরে বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার টিইইউএস কনটেইনার নিলামের অপেক্ষায় রয়েছে। এক থেকে দেড় বছর ধরে পড়ে রয়েছে এমন কনটেইনারও রয়েছে এর মধ্যে।’

জাফর আলম আরও বলেন, ‘খালাস না নেয়া এসব কনটেইনারের কারণে বন্দর প্রতি বছর ১৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কনটেইনারগুলো যদি যথাসময়ে খালাস করা হতো, তাহলে একদিকে বন্দর এগুলো থেকে রাজস্ব পেত, অন্যদিকে ফাঁকা স্থানে নতুন কনটেইনার রাখা যেত। সেখান থেকে আসত আরও রাজস্ব। তিনি জানান, নিলামে তোলা কনটেইনারের পণ্য বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যায় তার ২০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ বাবদ বন্দর পেয়ে থাকে। কিন্তু তা প্রকৃত ক্ষতির খুব সামান্য অংশ।

আমদানিকারকরা কেন পণ্য খালাস করেন না? জানতে চাইলে বন্দরের এ কর্মকর্তা জানান, কাগজপত্রে ত্রুটি ও পণ্য আমদানির নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে মেনে না চলায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্যের অনেক চালান আটকে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে মামলাও হয়। জরিমানাও হয়। জরিমানা দিয়ে পণ্য ছাড়িয়ে নিতে গেলে আমদানিকারকের অনেক খরচ পড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে আমদানিকারক পণ্য নিয়ে যেতে আগ্রহী হন না। নিলামের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার এফএম আবদুল্লাহ খান যুগান্তরকে বলেন, ‘লোকবল স্বল্পতার কারণে নিলাম প্রক্রিয়া এতদিন কিছুটা স্লথ ছিল। এখন নিলাম প্রক্রিয়া বেগবান করতে কাস্টমসের নিলাম শাখায় লোকবল বাড়ানো হয়েছে।’ আবদুল্লাহ খান আরও বলেন, ‘নিলাম প্রক্রিয়াটি আইনগত বিভিন্ন দিক মেনে করতে হয়। যেমন নিলামের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তারপরও আমরা এখন থেকে প্রতি মাসে অন্তত দুটি নিলাম ডাকার চেষ্টা করছি। কয়েক দিন আগে ২৯ কনটেইনার ফল ধ্বংস করা হয়েছে। আমদানিকারক খালাস না নেয়ায় এগুলো বন্দরে পড়ে ছিল।’

 

https://www.jugantor.com/last-page/2017/10/04/160472/