৩ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:১২

‘সেপ্টেম্বরে ১২৪ নারী শিশু ধর্ষণের শিকার’

৬-৭ মাস আগে খিলগাঁও সিপাহীবাগ এলাকায় প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। সমপ্রতি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত মাসের ১২ তারিখে তাকে ঢামেক হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। এরপর ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হয়। আর এ অভিযোগ ওঠে একই এলাকার ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ হারুনের বিরুদ্ধে। গত মাসের ৬ তারিখে চকরিয়ায় আবাসিক হোটেলে আটকে রেখে পঞ্চম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে একই এলাকার এক যুবকের বিরুদ্ধে। কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলার কাছারিপাড়া গ্রামে গত ৫ই সেপ্টেম্বর বিকালে একাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে একটি বাসায় আটকে রেখে গণধর্ষণ করা হয়। এভাবে প্রতিদিনই ঘটছে একাধিক ধর্ষণের ঘটনা। ধর্ষকের হিংস্র থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বৃদ্ধ, যুবতী, প্রতিবন্ধী থেকে শুরু করে দুধের শিশুও। দিনদিন এ ঘটনা বেড়েই চলছে। পরিসংখ্যান বলছে, আগস্ট মাসের চেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে অন্তত ২২টি ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটেছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার দেয়া তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর মাসে ১২৪ নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন ৪টিরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এর আগের মাসে অর্থাৎ আগস্ট মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ১০২ জন নারী ও শিশু। সংস্থাটি ধর্ষণ ছাড়াও গত এক মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা শাখার মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলছে, পারিবারিক ও সামাজিক নৃৃশংসতার বিষয়টি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যা উদ্বেগজনক। ধর্ষণের পাশাপাশি শিশু হত্যা, পারিবারিক ও সামাজিক কোন্দলে আহত ও নিহত, নারী নির্যাতন, রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনাগুলিও ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা (বিএমবিএস) এর তথ্য মতে সেপ্টেম্বর মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১২৪ জন নারী-শিশু। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই ৬১ জন। বাকি ৪৫ জন নারী। যার মধ্যে ১৫ জন নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে আর ৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। বিভাগ ওয়ারি ধর্ষণের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে। এর আগে আগস্টে ধর্ষণের শিকার হয় ১০২ জন নারী ও শিশু। এদের মধ্যে শিশু ৪০ জন ও ৪৩ জন নারী। বিএমবিএস বলছে, সেপ্টেম্বরে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে ৬৮ জন। এদের মধ্যে ২৩ জন পুরুষ ও ৪৫ জন নারী। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় খারাপ ফলের কারণে এ সব আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা বিভাগে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ঢাকা, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জে আত্মহত্যার হার বেশি। সেপ্টেম্বর মাসে ২৩ শিশু নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। পারিবারিক কলহে সেপ্টেম্বর মাসে নিহত হয়েছে ৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ জন, নারী ৩৮ জন। এদের মধ্যে স্বামীর হাতে নিহত হয়েছেন ২৭ নারী। আর স্ত্রীর হাতে নিহত হন ৪ জন স্বামী। পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, রাগ, পরকীয়াসহ বিভিন্ন পারিবারিক কারণে এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে বিএমবিএস-এর বিশ্লিষণে ওঠে এসেছে। সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এ মাসে নিহত হয়েছেন ৯ জন। আহত হয়েছেন ৪৯০ জন। সামাজিক সহিংসতায় আহত ও নিহতের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সন্ত্রাসী কর্তৃক নিহত হন ৭২ জন। গত মাসের অন্যান্য সহিংসতার ঘটনাগুলোর মধ্যে ছিল মাদকের প্রভাবে বিভিন্নভাবে নিহত ৩ জন, আহত ১ জন। পানিতে ডুবে, অসাবধানতাবশত, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, বজ্রপাতে মারা গেছে ৯৫ জন। গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ৮ জন। সংস্থাটির দেয়া তথ্যমতে, গত মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২০৫ জন, আহত হয়েছে আরো ৪৩৪ জন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মারা গেছে ৬ জন। রাজনৈতিক সহিংসতায় আহত হয় ২৬ জন যার অধিকাংশ ঘটনা সরকারি দলের আন্তঃকলহের জেরে। এছাড়া অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার হয়েছে ২০টি। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী দমন অভিযানে গণগ্রেপ্তার করা হয় ৩১৪ জনকে। সংস্থাটি বলছে, দেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=85688