অযৌক্তিক শর্ত শিথিল করা হবে- এমন আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও এখনো কাটেনি বিনামূল্যে বই ছাপার জটিলতা। প্রাথমিক বই ছাপার ধীরগতি ও নবম দশম শ্রেণির সুখপাঠ্য বইয়ের দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করতে না পারায় নতুন করে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। এবারও সেই জটিলতার মূলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কিছু কর্মকর্তা। টেন্ডার প্রক্রিয়ার দেড় মাস পরও নবম দশম শ্রেণির সুখপাঠ্য বইয়ের এনসিটিবি’র অভ্যন্তরীণ অনুমোদন পর্যন্ত হয়নি। অন্যদিকে কাগজের ছাড়পত্রে ধীরগতির কারণে প্রাথমিক বই ছাপা প্রায় বন্ধ পর্যায়ে পৌঁছেছে। নানা বিতর্কের জন্ম দেয়া কালো তালিকাভুক্ত কন্টিনেন্টাল ইন্সপেকশন টিমকে এবারও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কাগজের ছাড়পত্র দেয়ায়। এতেই নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা বলছেন, আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি, সময়মতো ওয়ার্ক অর্ডার ও অন্যান্য প্রক্রিয়া সময়মতো শেষ করতে না পারার কারণে বই পৌঁছাতে দেরি হলে এর সব দায়দায়িত্ব এনসিটিবিকে নিতে হবে। এ ব্যাপারে এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা মানবজমিনকে বলেন, সুখপাঠ্য বই নিয়ে দরপত্রের ব্যাপারে একটু দেরি হয়েছে এটা সত্য। তবে আগামী সপ্তায় দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষ করে ক্রয় সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির কাছে পাঠানো হবে। আশা করি আগামী সপ্তাহে মুদ্রণকারীদের ওয়ার্ক অর্ডার দিতে পারবো। এরার তারা ৫৫ দিন সময় পাবেন। সেটাও ডিসেম্বরের মধ্যে কাভার হয়ে যাবে। আর প্রাইমারি কাগজের ছাড়পত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, যেসব অভিযোগ আসছে তা সঠিক নয়। নিম্নমানের কাগজসহ আরো অনেক প্রাসঙ্গিক বিষয় জড়িত রয়েছে এখানে। ইচ্ছে করলেই টনের পর টন কাগজের ছাড়পত্র দিয়ে দিতে পারবে না। তারপরও ইন্সপেকশন টিমকে বলেছি আরো দ্রুত ছাড়পত্র দেয়ার জন্য।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতাদের অভিযোগ, নবম দশম শ্রেণির সুখপাঠ্য বইয়ের দরপত্র হয়েছে গত ১৭ই আগস্ট। দেড় মাসের বেশি সময় পার হলেও গতকাল পর্যন্ত এনসিটিবি’র টেন্ডার কমিটির অনুমোদন হয়নি। এরপর সেটি যাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য। এরপর ক্রয় সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির অনুমোদনের পর কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানো হবে। সেখানে কয়েকদিন সময় লাগে। এই লম্বা প্রক্রিয়া কবে শেষ করে কবে ওয়ার্ক অর্ডার দেবে সেটি নিয়ে অন্ধকারে আছি। অন্যদিকে প্রাথমিকে বই নিয়ে ইন্সপেকশনের দায়িত্ব পাওয়া কন্টিনেন্টাল নতুন জটিলতা তৈরি করেছে। প্রেসে ১০০ টন কাগজ থাকার কথা থাকলেও এই প্রতিষ্ঠান কাউকে ১০ টন র্স্বোচ্চ ২০ টন কাগজের ছাড়পত্র দিচ্ছে। এতে কাগজের ছাড়পত্রের কারণে বই ছাপা বন্ধ থাকছে। এ কারণে প্রাথমিকে বই ছাপা ও পৌঁছানোর কাজে ধীরগতি নেমে এসেছে। এ জন্য এনসিটিবিকে দায়ী করছে মুদ্রণ শিল্প সমিতির নেতারা।
এ ব্যাপারে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান মানবজমিনকে বলেন, এনসিটিবি’র আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেই জটিলতা জিইয়ে রেখেছে এনসিটিবি। সুখপাঠ্য বই নিয়ে এনসিটিবি যা ইচ্ছে তা করছে। প্রাইমারি কাগজে ছাড়পত্রে নতুন ইন্সপেকশন কোম্পানি নতুন জটিলতা তৈরি করেছে। আমাদের চাহিদা অনুযায়ী কাগজের ছাড়পত্র দিচ্ছে না। এতে করে অনেক প্রেসে বই ছাপা বন্ধ থাকছে। এসব জটিলতা দ্রুত সমাধান না করলে বই দেরি হওয়ার সব দায়-দায়িত্ব এনসিটিবিকে নিতে হবে বলে আমরা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি।