৩ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:০৭

অস্ত্র হাতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন যুবক!

এক হাতে পিস্তল, অন্য হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছেন এক যুবক। ভয়ে লোকজন কিছু বলছে না। এটি কোনো সিনেমার দৃশ্য নয়। বাস্তবেই এই ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের মসজিদঘাট এলাকায় সোমবার সকালে এবং বিকেলে এক যুবককে অস্ত্র নিয়ে এভাবেই মহড়া দিতে দেখা যায়। দিনভর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। অথচ ঘটনাস্থলের এক কিলোমিটারের মধ্যেই পুলিশ ফাঁড়ি।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, অস্ত্র হাতে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত টানা দুই ঘণ্টা মহড়া দেন ওই যুবক। যারা রাস্তায় ছিল তারা তাঁকে দেখে ভয়ে পালিয়ে যায়। আর যারা ঘরে ছিল তারা বের হওয়ার সাহস করেনি। আতঙ্কে মসজিদঘাট এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে দেন। অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার সময় স্থানীয় যুবলীগের এক নেতার বাড়ি লক্ষ্য করেও দুটি গুলি ছোড়েন তিনি। ঘটনা এখানেই শেষ নয়। বিকেলে আবারও অস্ত্র নিয়ে ওই এলাকায় হাজির হন যুবকটি। পুরো সময়টায় এলাকায় ছিল আতঙ্ক।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পুলিশকে ঘটনাটি জানালেও তারা আসেনি। স্থানীয় লোকজন বলেন, ওই যুবকের নাম মো. বাবুল (৩৩)। বোয়ালখালীর চরণদ্বীপে তাঁর বাড়ি। তাঁর বিরুদ্ধে খুনসহ চারটি মামলা রয়েছে। একসময় অটোরিকশাচালক চালাতেন তিনি। পরে এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তির অনুসারী হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু বেপরোয়া মনোভাবের কারণে কারও সঙ্গেই তাঁর তেমন ঘনিষ্ঠতা নেই। উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে সবাই তাঁকে ভয় পান।

এ বিষয়ে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, চরণদ্বীপ ইউনিয়নে পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ নিয়মিত টহল দেয়। এর মধ্যে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে কারও মহড়া দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর এ ধরনের কোনো ঘটনাও তিনি শোনেননি। অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্য মহড়া দেওয়ার ছবি রয়েছে জানালে ওসি বলেন, ওই এলাকায় দুটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় পরস্পরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। ছবির বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
স্থানীয় লোকজন বলেন, এলাকায় বালুর ব্যবসা নিয়ে বাবুলের সঙ্গে চরণদ্বীপ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহে আলমের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এই দ্বন্দ্বের জের ধরেই বাবুল পিস্তল ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আলমের বাড়ির সামনে মহড়া দেন। আলমের বাড়ি চরণদ্বীপ ইউনিয়নের মসজিদঘাটের হারভাংগিরি শাহ মাজার এলাকায়। বাবুল যখন মহড়া দিচ্ছিলেন, তখন আলম বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। আলমের বাড়ি থেকে বাবুলের বাড়ির দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার।
যুবলীগ নেতা মাহে আলম প্রথম আলোকে বলেন, বালুমহাল নিয়ে বাবুলের সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে। এ জন্যই বাবুল তাঁর ঘর লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়েন। বিষয়টি পুলিশকে ফোনে জানান তিনি। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নাছের প্রথম আলোকে বলেন, বাবুল সকাল নয়টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকায় আসেন এবং দুটি গুলি ছোড়েন। বাবুলের টানা অবস্থানের কারণে বিকেলে দোকানপাট বন্ধ করে দেন তাঁরা। চরণদ্বীপ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ জাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র নিয়ে বাবুলের মহড়ার বিষয়টি থানা এবং পুলিশ ফাঁড়িকে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1336241