৩ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:০৫

লাগামহীন চালের দাম

মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা

খাদ্য মূল্যস্ফীতি হিসাবে সবচেয়ে বেশি অংশ চালের

চালের দামের ধাক্কায় দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। কেননা খাদ্য পণ্যের দাম বাড়লে সাধারণত তা সার্বিক মূল্যস্ফীতিতে বেশি প্রভাব ফেলে। আবার খাদ্য পণ্যের ক্ষেত্রে যে কয়েকটির হিসাব করা হয় তার মধ্যে প্রধান ওয়েট (অংশ) হচ্ছে চালের। সেক্ষেত্রে এ আশংকা জোরালো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশংকা জানিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, এ কথা ঠিক যে চালের দাম বাড়ছে। ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশংকা রয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে যেহেতু অনেক পণ্যের দাম কমতির দিকে তাই খুব বেশি প্রভাব হয়তো পড়বে না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি বলেন, সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির হিসাবে খাদ্যের ওয়েটটা বেশি। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী খাদ্য ক্রয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে। খাদ্যের মধ্যে আবার চালের পরিমাণটা বেশি। তাই চালের দাম বাড়ায় গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। কেননা তারা বেশি ভাত খায়। তাই চালের দাম বাড়ায় গ্রামের মানুষের লিভিং ইনডেক্স বাড়ছে। তবে সাধারণত একটা পণ্যের দাম বাড়লে অন্য দশটার যদি কমে সেক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতিতে হয়ত প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বর্তমানে দেশে অন্যান্য পণ্যের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী পাশাপাশি বেড়েছে চালের দাম। তাই স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কা করা যায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি হিসাব করার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহর মিলে মোট ৭৪০টি পণ্যের (আইটেম) দাম ধরা হয়। এর মধ্যে গ্রামের ৩১৮টি এবং শহরের ৪২২টি রয়েছে। মোট মূল্যস্ফীতির হিসাব করার ক্ষেত্রে খাদ্য পণ্যের ওয়েট হচ্ছে গ্রামে ১০০ তে ৬১ দশমিক ৪১ এবং শহরে ৪৬। খাদ্য পণ্যের মধ্যে চালের ওয়েট রয়েছে একটি বড় অংশ। এক্ষেত্রে শহরে পাঁচ ধরনের চালের (মোটা, চিকন, মাঝারি, পোলাও ইত্যাদি) ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ। এর মধ্যে আবার মোটা চালের ওয়েট ৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রামের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। গ্রামে পাঁচ ধরনের চালের ওয়েট হচ্ছে ২৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এর মধ্যে মোটা চালের ওয়েট ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এক্ষেত্রে দেখা যায়, শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষ চাল কিনতে বেশি অর্থ ব্যয় করে থাকে। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত জুলাইয়ে পয়েন্ট টু পয়েন্টে খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশে। গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গ্রামেও বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। এ হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। পাশাপাশি শহরের চিত্রও একই। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে বিপরীত চিত্র খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে। জুলাইয়ে এসে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, মূল্যস্ফীতির হ্রাস বৃদ্ধি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, চাল, মাছ-মাংস, শাক-সবজি, ফল, মসলা, দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যাদিসহ অন্যান্য খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে জুলাইয়ে খাদ্য পণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. আমীর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা হিসাব করছি। তার আগে আগাম কিছু বলা ঠিক হবে না। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকও বলেছে, চলতি অর্থবছর দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে চালের দাম বৃদ্ধি। বুধবার সংস্থাটির ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট : টুয়ার্ডস মোর, বেটার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ জবস’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় এ তথ্য জানানো হয়। এ সময় বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ অর্জন নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ হতে পারে। কেননা চালের দাম বৃদ্ধি একটি অন্যতম কারণ।

https://www.jugantor.com/industry-trade/2017/10/03/160285