৩ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:০৩

৯ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ১১৭ জন : অধিকার

গত ৯ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ১১৭ জন। এই সময়ে গুম হয়েছেন ৬৭ জন। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার বিষয় নিয়েও কথা বলেছে অধিকার।

গত ১ অক্টোবর অধিকার তার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ১১৭ জনের মধ্যে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে ১০৭ জন। গুলিতে নিহত হয়েছে একজন। নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে আটজনের। পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে একজনকে। এই সময়ে গুমের শিকার হয়েছে ৬৭ জন। জানুয়ারি মাসে গুম হয়েছে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে একজন, মার্চে ২১ জন, এপ্রিল মাসে দুইজন, মে মাসে ২০ জন, জুনে সাতজন, জুলাইয়ে তিনজন, আগস্টে ছয়জন ও সেপ্টেম্বরে গুম হয়েছে একজন। এই সময়ে কারাগারে মারা গেছে ৪১ জন।
গত ৯ মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে নিহত হয়েছে ১৫ জন বাংলাদেশী, আহত হয়েছে ২৮ জন, আর বিএসএফের হাতে অপহরণের শিকার হয়েছে ২৫ জন। গত ৯ মাসে একজন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৩ জন। লাঞ্ছিত হয়েছেন ছয়জন। আর হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ১০ জন সাংবাদিক।
গত ৯ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে তিন হাজার ৫১৮টি। রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৬২ জন। আহত হয়েছেন তিন হাজার ৪৫৬ জন।

গত ৯ মাসে দেশে ৬১৬ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে জানুয়ারি মাসে ৪৪, ফেব্রুয়ারিতে ৫১, মার্চে ৬৯, এপ্রিলে ৫৪, মে মাসে ৮৩, জুনে ৭৯, জুলাইয়ে ৭৩, আগস্টে ৮৮ ও সেপ্টেম্বরে ৭৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই সময় নারীর ওপর যৌতুক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ১৮৯টি। যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ১৭৯ জন, এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছে ৪৫ জন। গত ৯ মাসে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে ৩৮ জন।

মিয়ানমারে গণহত্যার ব্যাপারে অধিকার বলেছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর জাতিগত নিপীড়ন ও তাদের মিয়ানমার থেকে উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া নতুন নয়। অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকার বড় ধরনের কয়েকটি অভিযান চালিয়েছে। এই অভিযানগুলোতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা গণহত্যা, গুম, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হন। অধিকার বলেছে, গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এই রিপোর্ট প্রকাশ পর্যন্ত সময়ে সামরিক অভিযানের কারণে পাঁচ লাখের ওপর রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। অধিকার রোহিঙ্গা ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে যে, এই অভিযানে গণধর্ষণ, নির্যাতন, শিশুসহ নারী-পুরুষদের গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা, গুম এবং শিশু ও নারীদের ধরে নিয়ে যাওয়াসহ মিলিটারি কর্তৃক গ্রামের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া ও রাস্তাগুলোতে মাইন পুঁতে রাখে। অধিকার বলেছে, বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটা বড় অংশ হচ্ছে শিশু; যাদের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। এদের মধ্যে কারো বাবা-মা, কারো ভাইবোনকে হত্যা করেছে মিয়ানমারের মিলিটারি ও চরমপন্থী বৌদ্ধরা। এদের মধ্যে এমন শিশুও রয়েছে যারা বাবা-মা দু’জনকেই হারিয়েছে। যাদের সংখ্যা ১৩ শ’র বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, বিভিন্ন শরণার্থীশিবির থেকে রোহিঙ্গা শিশু ও একা আসা নারীদের মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/256666