৩ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ১০:০৩

গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৬.৩৪ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব ডেসকোর

দাম বৃদ্ধির আবেদন দুঃখজনক : ক্যাব

গত অর্থবছরে ডেসকোর বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এটি ইতিবাচক। কিন্তু চলতি ২০১৭-১৮ বছরে এটি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২১ শতাংশ, যা প্রকৌশলগত বিবেচনায় অবাস্তব। বাস্তবতাবিবর্জিত প্রাক্কলন করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আবেদন করা দুঃখজনক।

গতকাল কাওরান বাজারের বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো নিয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে এ কথা বলেন ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।
ঢাকার মিরপুর, গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ডেসকো গতকালের গণশুনানিতে গ্রাহক পর্যায়ে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সংস্থাটি নতুন বেতন কাঠামোর কারণে ব্যয়বৃদ্ধি, উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়, পরিচালন খরচ বৃদ্ধি এবং পাইকারি মূল্যের আনুপাতিক হারে খুচরা মূল্যের বৃদ্ধি না পাওয়ার যুক্তি তুলে ধরেন।

গতকাল গণশুনানিতে ডেসকোর পক্ষে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তার তুলে ধরেন ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাঈদ সারোয়ার। তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ বিতরণে ৭ টাকা ৭২ পয়সা খরচ হলেও বিক্রয়মূল্য ৭ টাকা ২০ পয়সা। ঘাটতি ৫২ পয়সা। তবে ইউনিটপ্রতি অন্যান্য আয় ৩২ পয়সা। ফলে প্রকৃত ঘাটতির পরিমাণ ২০ পয়সা বাড়ানোর আবেদন করে ঢাকার উত্তরাঞ্চল ও গাজীপুরের একাংশে বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানিটি। তবে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলে, বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ৭ টাকা ১৯ পয়সা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এটি দাঁড়াবে ৭ টাকা ২৭ পয়সা। অর্থাৎ ঘাটতি ৮ পয়সা। এ ঘাটতি দূর করে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ২৭ পয়সা অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের দাম ১ দশমিক ১১ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে কমিটি। এ দিকে কৃষি ছাড়া সব ধরনের গ্রাহকের বিদ্যুৎসেবার জন্য সার্ভিস চার্জ ও ডিমান্ড চার্জও বৃদ্ধির সুপারিশ করে ডেসকো। এর সঙ্গে একমত পোষণ করে কারিগরি কমিটি। তবে এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সব কোম্পানির জন্য একক হার অনুসরণের সুপারিশ করা হয়।

ডেসকোর প্রস্তাবে বলা হয়, গত ৮ বছরে ৯ দফায় বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছে ২০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। একই সময়ে খুচরা দাম বাড়ানো হয়েছে ৯০ দশমিক ৬০ শতাংশ। ফলে বিতরণ ব্যয়সহ ইউনিটপ্রতি ঘাটতি ৫২ পয়সা।
গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান ও সাবেক বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম। শুনানিতে আরো উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য রহমান মুরশেদ, মাহমুদউল হক ভুইয়া, আব্দুল আজিজ খান ও মিজানুর রহমান।
ক্যাবের উপদেষ্টা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে আরো জানান, অন্য বিতরণকারী সংগঠনগুলোর চেয়ে ডেসকোতে সিস্টেম লস কম। কিন্তু উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগ্রহণের মাধ্যমে অহেতুক খরচ বাড়ানো হচ্ছে। এ দায় গ্রাহকদের ওপর পড়ছে। আবার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির বিনিয়োগে শুধু সরকারি কর্মকর্তারা লাভবান হচ্ছেন। কোম্পানি বা গ্রাহকদের লাভ নেই। ওই অর্থ উন্নয়ন প্রকল্পে সরাসরি বিনিয়োগ করার বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/256670