৩ অক্টোবর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৯:৫৭

রোহিঙ্গা আবর্তে বাংলাদেশ দরকার সফল কূটনীতি

দেখা অদেখা

বাংলাদেশ এখন বিষম জটিল সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সরকার নানা চাপ ও সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। এমন সমস্যায় বাংলাদেশ ইতঃপূর্বে কখনো পড়েনি। লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। এ দেশ মিয়ানমারের সীমান্তসংলগ্ন হওয়ায় এবং রোহিঙ্গারা মুসলিম জনগোষ্ঠীর সদস্য হওয়ায় বাংলাদেশ নৈতিক কারণে এই দুস্থ মানুষগুলোকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু নি¤œ আয়ের একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে এ বোঝা বহন করা কষ্টকর। এর পরও রোহিঙ্গাদের পাশে এ দেশের মানুষকে দাঁড়াতে হবে। কেননা, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশীরা সংবেদনশীল এবং মানবতার প্রতি তারা শ্রদ্ধা পোষণ করে। শত কষ্টের মধ্যেও দেশের মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। দেখা যাচ্ছেÑ বহু বেসরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল তাদের সাধ্যমতো ত্রাণসামগ্রী, ওষুধপত্র নিয়ে ত্রাণতৎপরতায় নিয়োজিত হয়েছে। আগেই বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সম্পদ সীমাবদ্ধ; কিন্তু এ দেশের মানুষের হৃদয়টি বড়। তাই তারা তাদের নিজেদের আহার ভাগ করে নিচ্ছে শরণার্থীদের সাথে। মাত্র কিছু দিন আগে দেশ ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে বিপুল শস্যের হানি এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই বিরাট আঘাত সামলে ওঠার আগেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সামর্থ্যরে অভাবে তাদের অধিকাংশকেই খোলা আকাশ ভিন্ন কোনো ছাউনি দেয়া সম্ভব হয়নি। সরকারিভাবে দেয়া যায়নি প্রয়োজনমতো খাদ্য ও বস্ত্র। লাখো মানুষ বৃষ্টিতে ভিজছে, রোদে পুড়ছে। শত শত শিশু, বৃদ্ধ, নারী এমন বৈরী অবস্থার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাদের চিকিৎসাচাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশে এসে লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা পেয়েছে বটে, কিন্তু এর বাইরে বেশি কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য দেশবাসীর অনুতাপ আছে, কিন্তু কার্পণ্য নেই; অনেকটা সামর্থ্য থাকলে তারা এই দুস্থ মানুষগুলোর সেবায় আরো এগিয়ে যেতে পারত। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের পরিধিটা কত বিস্তৃত, সেটা বিশ্ববাসী অনুধাবন করে অবিলম্বে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে এখন যা লক্ষ করা যাচ্ছে, তাতে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি এর কিছু দুর্বলতাও দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কয়েকটি মুসলিম দেশের সহানুভূতি ও সহমর্মিতা এবং সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পেলেও আর কারো কাছ থেকে তেমন সাহায্য সহযোগিতার কোনো আশ্বাস এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অথচ বাংলাদেশের একার পক্ষে এই বিপুল উদ্বাস্তুকে সাহায্য ও সহযোগিতা দেয়া সম্ভব নয়। সবচেয়ে শোচনীয় যে বিষয়টি তা হলো বিশ্বের কোনো পরাশক্তি রোহিঙ্গাদের এই চরম দুর্গতির জন্য দায়ী মিয়ানমার সরকারের পাশবিক আচরণের নিন্দা ও প্রতিবাদ করেনি। এমনকি বাংলাদেশের প্রতিবেশী এবং একান্ত বন্ধু হওয়ার দাবিদার ভারতও বাংলাদেশের কষ্ট ও বেদনার সাথী হয়নি। তারা মিয়ানমারের হীন আচরণের বিরোধিতা, নিন্দা ও চাপ সৃষ্টি করেনি। অথচ তা করতে পারে। এটা বলতেই হবে যে, এতে আমাদের পররাষ্ট্রনীতির দৈন্য প্রকাশ পেয়েছে। বিপদে এখন পাশে এসে কেউ দাঁড়াচ্ছে না। সরকার এর কী জবাব দেবে। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুর্বলতা ও স্থবিরতা প্রকাশ পেয়েছে। এই সরকার ভারতের প্রতি গভীর বন্ধুত্ব দেখিয়ে আসছে। তার বিনিময়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের যে অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছে তা দুঃখজনক। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এ ক্ষেত্রে যে সহানুভূতি দেখিয়েছেন তা প্রশংসা করার মতো। আরো উল্লেখ করা যেতে পারে, কোনো পরাশক্তিই এই ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষে তো নেই-ই বরং তারা মিয়ানমারের অবস্থানকে সমর্থন করে আসছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশই কোনো-না-কোনো পরাশক্তি বন্ধুত্ব অর্জন করে থাকে যারা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে। কিন্তু এবার আমরা দেখলাম, কোনো পরশক্তির সহমর্মিতা আমরা এত দিনেও অর্জন করতে পারিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আক্ষেপও প্রকাশ করেছেন। পরাশক্তিগুলোর সাথে বাংলাদেশের এই শীতল সম্পর্কের কারণ পররাষ্ট্র দফতরের মারাত্মক দুর্বলতা। বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওআইসির প্রতি বাংলাদেশের পাশে থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। দেখা যাক এই আহ্বানে কতটা সাড়া পাওয়া যায়। রোহিঙ্গা সমস্যার সূচনা থেকেই আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিভিন্ন দেশে যেখানে ছুটোছুটি করার দরকার ছিল; সেখানে তাকে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে জাতিসঙ্ঘে যাওয়া ব্যতিরেকে কোথাও যেতে দেখা যায়নি। একটি সমস্যাক্লিষ্ট দেশে যেখানে বৈদেশিক সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন ভূমিকা কোনোমতেই প্রত্যাশিত নয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্রুত তৎপর হয়ে ওঠার পর যদি বাংলাদেশ বর্তমান অবস্থার মুখোমুখি হতো তবুও একটা সান্ত্বনা পাওয়া যেতে পারত। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তৎপরতা বিচার করলে সান্ত্বনা পাওয়ার কোনো উপায় নেই। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের দুঃসহ সচিত্র কাহিনী, যা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়েছে, তার পুরো কৃতিত্ব দেশী-বিদেশেী সাংবাদিক এবং সংবাদপত্র, তথা মিডিয়া। তাদের সংবেদনশীলতা এবং সময়োপযোগী ভূমিকার কারণেই বিশ্বে জনমত তৈরি হয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রতি সহমর্মিতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কোনো অবদান নেই। অথচ তাদের এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব ছিল বিরাট।
মিয়ানমার দফায় দফায় রোহিঙ্গাদের নির্যাতন, রাষ্ট্রহীন করা, দেশত্যাগে বাধ্য করা এবং বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলার কারণ দু’টিÑ পরাশক্তির সাথে তার সখ্য এবং তার সশস্ত্রবাহিনীর শক্তি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণ শৌর্যেবীর্যে আন্তর্জাতিক মানের এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু জনসংখ্যার ও সাজসরঞ্জামের তুলনায় বাংলাদেশ মিয়ানমারের সমান নয়। জনসংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ অনেক বড় দেশ, সে তুলনায় মিয়ানমার অনেক পিছিয়ে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অনুপাতে সেনাসংখ্যায় পেছনে রয়েছে। অনেকেই খোঁড়া যুক্তি দেন বড় সেনাবাহিনী দিয়ে আমরা কার বিরুদ্ধে দাঁড়াব? এবার তো দেখা যাচ্ছে মিয়ানমার বাংলাদেশের বন্ধু নয় বরং কার্যত বৈরী দেশ। তা ছাড়া যেহেতু আমরা শান্তিকামী তাই কাউকে আক্রমণ করব না; কিন্তু আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষা করতে হবে। আর এই অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্যের জন্যও আমাদের বড় ও সুদক্ষ শক্তিশালী সেনাবাহিনী অপরিহার্য। জাতির গৌরব ও শৌর্যবীর্য তুলে ধরার জন্য একটি তুলনীয় সেনাবাহিনী বিশেষ প্রয়োজন। ধারণা দেয়া হয় যে, আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি করছি। তাহলে কেন? আজো প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকব, তা ছাড়া শুধু যুদ্ধাবস্থায় নয়, শান্তিকালীন সময়েও সেনাবাহিনীর প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ, এই দুর্যোগ দুর্বিপাকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিপুল। এই কোটি কোটি মানুষকে একটি প্রশিক্ষিত জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা এবং বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্যও সেনাবাহিনীকে সম্প্রসারিত করার বিষয়টি যুক্তিযুক্ত।

এখন রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা বিধানের জন্য সেনাবাহিনী নিয়োগ করতে হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, সেনাবাহিনীর পক্ষে ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা বিধান করা সহজ হবে। আমরা এরই মধ্যে জানতে পেরেছি যে, ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার অভাব ঘটেছিল; যে ত্রাণটুকু সেখানে পৌঁছেছে তা বেহাতে গিয়ে পড়েছিল। শরণার্থীদের হাতে না গিয়ে অন্য লোকজন কৌশলে তা হস্তগত করেছে। ত্রাণ বিতরণ নিয়ে অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। সব সময় এ ক্ষেত্রে নানা অব্যবস্থা ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাত্র কিছুকাল আগে সরকার দুস্থদের জন্য ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছেÑ দুস্থরা নয়, অবস্থাপন্ন ব্যক্তিদের ঘরেই উঠেছে সেই স্বল্পমূল্যে দেয়া চাল। রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে ত্রাণসম্ভার আসছে। এই ত্রাণ বিলিবণ্টনে অনিয়ম হলে ত্রাণ আসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাতে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হবে। আর দুস্থ রোহিঙ্গারা কষ্টে পড়বে। তা ছাড়া তাদের ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত জরুরি প্রয়োজনগুলো সাধ্যমতো মেটানোর জন্য একটি সুষ্ঠু এবং বাস্তবসম্মত চাহিদার তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। এই দায়িত্ব সেনাসদস্যরা সঠিকভাবে পালন করতে পারবেন। খবর পাওয়া গেছে, সেনাবাহিনী এরই মধ্যে ত্রাণ বিতরণের একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পেরেছে।
মিয়ানমার বিশেষ করে তাদের সেনাবাহিনীর কারণে রোহিঙ্গাদের সাথে অমানবিক আচরণ করছে এবং সে দেশে গণমানুষের মানবিক অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। মিয়ানমারের সেই সামরিক বাহিনীর শক্তি সামর্থ্য নিয়ে আলোচনা করা হলে তা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। মিয়ানমারের সামরিক শক্তির যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়, তার আলোকেই আলোচনা করা যেতে পারে। এখানে মনে করা যেতে পারে, সামরিক শক্তি ও আন্তর্জাতিক মদদেই দেশটি অত্যাচার-নিপীড়ন ঘটিয়ে চলেছে। দেশটি সামরিক জান্তা বারবার সেনা-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সামরিক শাসন চালিয়ে এসেছে। পরিস্থিতিও অনেকটা সেনাশাসনের মতো। মিয়ানমারে গণতন্ত্র বিভিন্ন সময়ে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে জনপ্রতিনিধিত্বশীল শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়নি। মিয়ানমারের জনগোষ্ঠী যেমন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত, সে দেশের সংখ্যালঘু মানুষের নির্যাতন যেমন চলমানÑ তেমনি এর ইতিহাসও অনেক পুরাতন। তাদের এই যুদ্ধংদেহী অবস্থানকে সমর্থন দিয়ে ১৯৯০ সাল থেকে চীন, রাশিয়া ও ইউক্রেনসহ বেশ কিছু দেশ মিয়ানমারকে বিপুল অস্ত্র দিয়েছে। ‘স্টকহোম ইান্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ ও ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ডট কম’ সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা পাঁচ লাখ ১৬ হাজার। এর মধ্যে চার লাখ ছয় হাজার নিয়মিত এবং এক লাখ ১০ হাজার রিজার্ভ সেনা রয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের রয়েছে ১২৭টি যুদ্ধবিমানসহ মোট ২৬৪টি সামরিক বিমান, ৯টি অ্যাটাকিং হেলিকপ্টারসহ ৮৬টি হেলিকপ্টার, ৮৮৬টি আধুনিক ট্যাংক, চার হাজার ২১২টি বিভিন্ন ধরনের মিসাইল, এক হাজার ২০০টি সাঁজোয়া সামরিক যান, আকাশ প্রতিরক্ষায় অন্তত ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র, ৩৯২টি গান সিস্টেম, ১২০০ অ্যান্টি ট্যাংক অস্ত্র, ২৭টি নেভাল ফ্রিগেট, ৪০টি প্যাট্রল ক্রাফটসহ মোট ১৫৫টি রণতরী। বিশ্বে সামরিক শক্তিধর দেশের তালিকায় ৩১ নম্বরে রয়েছে মিয়ানমার।

১৯৯০-পরবর্তী সময়েই অস্ত্র কেনা বাড়িয়ে দেয় মিয়ানমার। এর মধ্যে তাদের কাছে বিপুল অস্ত্র বিক্রি করেছে রাশিয়া, চীন, ইসরাইল, ইউক্রেন, ভারত, বেলারুশ, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, পোলান্ডসহ কয়েকটি দেশ। চীন সবচেয়ে বেশি যুদ্ধবিমান, রণতরী ও গোলাবারুদ বিক্রি করেছে মিয়ানমারের কাছে। এ ছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেন মিয়ানমারের কাছে বিপুল যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করেছে। রাশিয়া মিয়ানমারের কাছে মাটি থেকে ছোড়ার উপযোগী মিসাইল বিক্রি করেছে। ইউক্রেন বিক্রি করেছে রণতরী। ইহুদিবাদী ইসরাইল বিক্রি করেছে ট্যাংক ও অস্ত্রবাহী যুদ্ধযান। অন্যান্য সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুসারে, মিয়ানমার বিমান কিনছে চীন থেকে ১২০টি, রাশিয়া থেকে ৬৪টি, পোল্যান্ড থেকে ১৩৫টি। মিয়ানমারের কাছে সবচেয়ে বেশি মিসাইল বিক্রি করেছে রাশিয়া। সংখ্যা ২৯৭১টি; চীন ১০২৯টি, বেলারুশ ১০২টি। মিয়ানমারের কাছে নৌবাহিনীর ২১ রণতরী বিক্রি করেছে চীন, ভারত তিনটি, সাবেক যুগোস্লাভিয়া তিনটি। অর্থাৎ এই অঞ্চলের সামরিক ভারসাম্যের বিচারে মিয়ানমারের বিরাট গুরুত্ব রয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য উদ্যোগী হতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে এবং এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান চায় বাংলাদেশ। এই বক্তব্যের পর তা বাস্তবায়নের জন্য কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। এ জন্য প্রথমে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থবিরতা কাটিয়ে কার্যকর তৎপরতা চালাতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের আগে পর্যন্ত বর্তমান আন্তর্জাতিক সমর্থন ও মিডিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা যাতে অব্যাহত থাকে সে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা দরকার। ত্রাণের বিষয়ে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়ায় আশা করা যায় যে, একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধান এবং সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে সরকারকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। আশ্রয়গ্রহণকারীরা স্বদেশে ফিরে গিয়েও যাতে মনে রাখতে পারে বাংলাদেশ বিপদে তাদের শুধু আশ্রয় দেয়নি, সাধ্যমতো সেবাশুশ্রƒষাও দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আমাদের খাদ্য ভাগ করে খাবো, এই মনোভাব মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।

রোহিঙ্গা সমস্যার দুটো দিক রয়েছে : তাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া এবং যে সময় পর্যন্ত তারা এখানে থাকবে, তত দিন পর্যন্ত তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করা। এই দুই বিষয়েই আন্তর্জাতিক সহায়তার বিশেষ প্রয়োজন। এই দুই সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের খাদ্য, বস্ত্র এবং মাথার ওপর ছাউনির জন্য বাইরের প্রচুর সহায়তা অবশ্যই দরকার। আর শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়া এবং স্বদেশে নিরাপদে বসবাসের জন্য মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে সরকারকেÑ বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত পরিকল্পিত কূটনৈতিক পরিকল্পনা নিতে হবে। তাদের তৎপরতা লক্ষণীয় হতে হবে। জোর কূটনৈতিক প্রয়াস চালাতে না পারলে এই সমস্যা দেশের ঘাড় থেকে নামানো যাবে না।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/256610