১ অক্টোবর ২০১৭, রবিবার, ১২:১৮

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে’ ৯ মাসে মৃত্যু ১২৫ -আসক

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে’ ১২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে ৫০ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে সাতজন ফিরে আসেন স্বজনদের কাছে। দুই জনের গুলীবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার দেখিয়েছে। গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছে ৪০ জন। উল্লেখিত সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এ সব তথ্য জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

গতকাল শনিবার আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত নয় মাসে র্যা বের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ২০ জন, পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ৬৪ জন, গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ১২ জন, র্যা ব ও পুলিশের ক্রসফায়ারে ১ জন, পুলিশের নির্যাতনে ৬ জন, র্যা বের নির্যাতনে ১ জন, পুলিশের গুলীতে ১৩ জন, র্যা বের গুলীতে ১ জন, র্যা ব ও পুলিশের গুলীতে ১জন মারা গেছেন। বান্দরবানের লামায় সেনাবাহিনীর গুলীতে ১ জন, র্যা ব হেফাজতে হার্ট অ্যাটাকে ১ জন, পুলিশ হেফাজতে অসুস্থ হয়ে ২ জন, পুলিশ হেফাজতে আত্মহত্যা করেছেন ১ জন, পুলিশ হেফাজতে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে আটক হওয়ার পর একজন অসুস্থ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগ অনুযায়ী, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ৫০ জনকে আটক করেছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে সাত জন ফেরত এলেও ২ জনের গুলীবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তী সময় ৩ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে।

এদিকে একই সময়ে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৩৮ জন। তাদের মধ্যে কয়েদি ১৪ জন, হাজতি ২৪ জন। রাজনৈতিক সংঘাতের ২৫৬টি ঘটনায় গত নয় মাসে নিহত হয়েছেন ৪৪ জন এবং আহত হয়েছেন তিন হাজার ৫০৬ জন। দেশের ৮টি বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ৩৫ বার ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন।
চলতি বছরের নয় মাসে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন, এসিড নিক্ষেপ, সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনসহ নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১১৪ নারী। এ কারণে চার জন আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ২ জন নারী ও ৮ জন পুরুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন আরও ১০৫ নারী-পুরুষ। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৮৮ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৩ নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন নারী। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ৭৭ নারীর ওপর।

পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৩৪৬ নারী। এরমধ্যে ২৪২ নারীকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩৯ নারী। এছাড়া শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আরও ৬৫ নারী। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২২১ নারী। এরমধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৭ জন। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে ১০৭ জনকে। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন সাত জন। এছাড়া স্বামীর ঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছেন ২০জন। সালিশ ও ফতোয়ার মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আট জন নারী। এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন মোট ২৭ নারী।

বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৫ গৃহকর্মী। এরমধ্যে শারীরিক নির্যাতনের পর চারজন মারা গেছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে একজনকে। এছাড়া রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।
দেশের বিভিন্নস্থানে শিশুদের হত্যা ও নির্যাতনের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক বলেও আসকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত নয় মাসে এক হাজার ২১৭ জন শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এরমধ্যে ২৫২ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। ৭৭ শিশু আত্মহত্যা করেছে। নিখোঁজের পর ২৬ জন শিশু এবং বিভিন্ন সময়ে ৬৭ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে ২৪ শিশুর।

হিন্দু সম্প্রদায়ের ২৬টি বাসস্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, ১৬৬টি প্রতিমা ভাঙচুর, মন্দির ও পূজামন্ডপে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছেন।
এ সময়ের মধ্যে ৮৩ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এছাড়া সমকালের স্থানীয় প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মেয়রের গুলীতে নিহত হন।
সীমান্তে বিএসএফের গুলীতে ১০ জন ও শারীরিক নির্যাতনে ৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২৬ জন। অপহরণের শিকার হয়েছেন ৩৭ জন। এছাড়া অপহরণের পর বিজিবির মধ্যস্থতায় ফেরত এসেছেন ১৩ জন।

http://www.dailysangram.com/post/301865