আব্দুল আজিজ (বামে) ও জাহিদ (ডানে)
১ অক্টোবর ২০১৭, রবিবার, ১২:০৯

ন্যায়বিচারের স্বার্থেই বার্মিজ সেনাদের বিচার জরুরি

আব্দুল আজিজের বয়স মাত্রই নয় বছর। কিন্তু তার দুর্দশাগ্রস্ত দৃষ্টিভঙ্গি এবং কঠোর বাহ্যিক আচরণ তাকে অনেক বেশি বয়স্ক বানিয়ে দিয়েছে।
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে-তিন সপ্তাহ আগে বার্মিজ সৈন্যদের হাতে সে তার বাবা-মা, ভাইবোনদের খুন হতে দেখেছে এবং এখন তাকে তার ছয় বছর বয়সী ভাই জাহিদকে দেখাশোনা করতে হচ্ছে। সাত সদস্যের পরিবার এই দুই ভাই কেবল জীবিত আছে।
গত ৩০ আগস্ট বার্মিজ সৈন্যরা তাদের ‘তুলারতুলি’ গ্রামে শত শত রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর হামলা করলে আব্দুল আজিজ তার ভাই জাহিদকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার জন্য পার্শ্ববর্তী নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এসময় সৈন্যরা তাদের উপর গুলী ছুঁড়লে তাদের সঙ্গে সাঁতাররত কয়েকজন নিহত হয়।

নদী পার হওয়ার আগে পাশের জঙ্গল থেকে তারা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে তাদের বাবা-মা ভাইবোন হত্যার দৃশ্য। তাদের ঘরের পাশেই সৈন্যরা প্রথম তাদের পিতা মুফিজকে (৩৫) গুলী করে হত্যা করে এবং তারপর একে একে তাদের মা রাবু (৩০), তাদের ভাই জানাতুল্লাহ (১০) এবং শাবুল্লাহ (৫) ও তাদের বোন মমতাজ (৩)। তাদের সবাইকে হত্যার পর বাড়িটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

বাংলাদেশের কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল প্রায় ১০ বছর বযসী আলী। আলীর বাবা ও তিন ভাইবোন বার্মিজ সামরিক বাহিনীর গণহত্যার শিকার হয়েছে। এই হত্যার দৃশ্য দেখার পর থেকে আলী আর কোনো কথা বলেনি বলে তার আত্মীয়রা জানান। পৈশাচিক নিষ্ঠুরতা তাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।

গত ২৪ আগস্ট কয়েকটি পুলিশ পোস্টে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা হামলার পর থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন চালাচ্ছে বার্মিজ সৈন্যরা। ইউনিফর্ম পরিহিত এ সৈন্যরা অগণিত শিশুকে নির্মমভাবে বিভিন্ন কায়দায় হত্যা করেছে।
ইউনিসেফের তথ্যানুযাযী, প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে এবং তাদের অধিকাংশই শিশু। এই শিশুরা মানসিকভাবে গভীর আঘাতপ্রাপ্ত এবং তাদের এসব ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তাদের জীবনকে বিষাদগ্রস্ত করে তুলেছে।
আব্দুল আজিজ ও তার ভাই জাহিদের মত প্রতিটি শরণার্থীর জন্য প্রয়োজন-নিরাপদ আশ্রয়, খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানি, মানসিক যন্ত্রণা মোকাবিলা করার জন্য মনোসামাজিক কাউন্সিলিং এবং জরুরিভাবে শিক্ষা প্রদান; যেটি তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা বুঝতে সাহায্য করবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শিক্ষার জন্য তহবিল প্রদানের জরুরি অনুরোধ জাতিসংঘ কানে তুলছে না।
এই অপরাধের জন্য দায়ীদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। যারা তাদের পরিবারের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন; তাদের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য এই বিচার অপরিহার্য। ন্যায়বিচারের অনুভূতি কিছুটা হলেও তাদের গভীর ক্ষতকে নিরাময় করবে। সূত্র : আরটিএনএন।
লেখক: পিটার বাউকার্ট
পরিচালক, ইমার্জেন্সি (হিউম্যান রাইট ওয়াচ)

http://www.dailysangram.com/post/301853