৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৯:০৩

সবজিতে আগুন দিয়েছে ফড়িয়া ব্যাপারী দোকানি

চালের দাম বাড়তি, মাছ-মাংসও গরিবের নাগালের বাইরে। নিম্ন আয়ের মানুষ যে তিন বেলা সবজি দিয়ে ভাত খাবে, সে উপায়ও নেই।
কারণ সবজির দাম বাড়ছে লাফিয়ে। কচুর মুখি ও পেঁপে ছাড়া ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি পাওয়াই কঠিন। রাজধানী কিংবা মফস্বলের বাজার বলতে আলাদা কোনো কথা নেই, দাম সব জায়গায় সমান। বিশেষ করে ছুটির মধ্যে বাজারে ক্রেতাসমাগম বেশি হওয়ায় তরিতরকারির দাম কয়েক দফা বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো কোনো সবজি কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা বেশি দিয়েও কিনতে হয়েছে ক্রেতাদের।

দেশের সবজি চাষের প্রধান প্রধান এলাকা থেকে পাওয়া তথ্য এবং রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে উৎপাদন ও খুচরা পর্যায়ের দামের মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা গেছে। ক্রেতারা বলছে, বন্যা-বৃষ্টির অজুহাতে পকেট কাটছে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা। এ ছাড়া আছে ফড়িয়া ও ব্যাপারীদের দৌরাত্ম্য। ফলে ক্রেতার পাশাপাশি ঠকছে কৃষক।
তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছে, বন্যার কারণে পাইকারদের কাছ থেকে বাড়তি দাম দিয়ে সবজি কিনতে হচ্ছে তাদের। তা ছাড়া গত দুই-তিন দিন বৃষ্টির কারণে গ্রাম থেকে সবজি আসাও কিছুটা কমেছে। শীতের আগে সবজির দাম আর কমবে না। শীতের সবজি উঠলেই বাজারে সবজির দাম কমতে শুরু করবে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ফার্মগেট, শুক্রাবাদ, রামপুরা, গুলশান, বারিধারাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান প্রধান কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঢেঁড়স, পটল, কাঁকরোল, ঝিঙে, গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি কমপক্ষে ৬০ টাকা দরে। কচুর লতি ৬০-৭০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, ধুন্দল ৬০-৭০ টাকা, বরবটি বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। আগাম সবজি শিম বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৪০-১৮০ টাকায়, টমেটো ১০০ টাকায়। আর ছোট আকারের একটি বাঁধাকপি বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা। এ ছাড়া দেশি শসা ৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৪০-৫০ টাকা এবং চিচিঙ্গা বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকা কেজি দরে।
দেড়-দুই মাস ধরে অধিকাংশ সবজির দামই এমন চড়া। মাঝে কিছু সবজির দাম তুলনামূলক সস্তা থাকলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেগুলোর দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা। গত সপ্তাহে এক কেজি পেঁপের দাম ছিল ২০-২৫ টাকা, গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে। ২০-২৫ টাকার কচুর মুখির দাম বেড়ে হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি। কাঁচা মরিচ ১২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা কেজি।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে শুক্রাবাদ কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা সোহাগ মিয়া জানান, বন্যার কারণে পাইকারদের কাছ থেকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। দুই-তিন দিন বৃষ্টির কারণে গ্রাম থেকে সবজি আসাও কিছুটা কমেছে। শীতের সবজি উঠলে সবজির দাম কমতে শুরু করবে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজারে এক ট্রাক বাঁধাকপি বিক্রি করেন মনির হোসেন ব্যাপারী। কুষ্টিয়া থেকে আনা এসব কপির পাইকারি দর ছিল প্রতিটি ৮-১০ টাকা করে। মনির বললেন, ‘এরই মধ্যে কিছু কিছু শীতের সবজি উঠতে শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপি ও ফুলকপি। তবে পুরোপুরিভাবে শীতের সবজি বাজারে উঠতে আরো ১৫ দিন থেকে এক মাস লাগবে। তখন বাজারে সবজির দাম অনেকটা কমে আসবে। ’
মনির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ব্যাপারী কালের কণ্ঠকে জানান, কারওয়ান বাজারে ট্রাক থেকে পণ্য নামিয়ে বিক্রি করতে হয় স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে। এর জন্য দালালদের কমিশনও দিতে হয়। কমিশনের টাকা ব্যাপারীরা তুলে নেয় খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে। খুচরা বিক্রেতারা ওই দামের ওপর ৮-১০ টাকা মুনাফা ধরে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে পাইকারি বাজারে যে ধুন্দলের দাম ছিল ৪০-৪৫ টাকা, গতকাল সকালে রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে তা-ই বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০-৭০ টাকা করে। পাইকারি পর্যায়ে চিচিঙ্গার দাম পড়ে কেজিপ্রতি ৩৬-৪০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে সেই চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা করে। এর মধ্যে কৃষক পাচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা। বাকিটা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।
বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক লিমন বাসার জানান, মহাস্থানগড় বাজারে বড় আকারের শসা, সাচি লাউ এবং বাঁধাকপি বিক্রি হয় পিস বা শতক হিসাবে। অন্যান্য সবজি বিক্রি হয় মণ হিসাবে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কেজিপ্রতি নতুন বেগুন ৫০ টাকা, পুরনো বেগুন ৩৫ টাকা, ঢেঁড়শ ছয়-আট টাকা, করলা ৮-১০ টাকা, বরবটি ১০-১২ টাকা, কাঁকরোল ১০-১২ টাকা, পেঁপে পাঁচ-ছয় টাকা, কাঁচামরিচ ১০-১২ টাকা, পটল ১০-১২ টাকা, চিচিঙ্গা ৩০-৩৫ টাকা, ঝিঙে ৩০-৩৫ টাকা, কচুর লতি ৪০-৪৫ টাকা, কাঁচা কলা ৮-১০ টাকা হালি, কাগজি লেবু ৮০ টাকা শ’, বড় শসা (প্রতিটি এক থেকে দেড়/দুই কেজি ওজনের, সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়) ১০০ পিসের দাম এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি করছে কৃষক।
কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি ওই বাজারে কমিশন এজেন্ট, দালাল ও ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। কৃষকদের কাছ থেকে কেনা সবজিই আবার স্থানীয় মহাজন বা ব্যাপারীদের কাছে মণপ্রতি ৫০-৬০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করে দালাল বা ফড়িয়ারা। চোখের সামনে বাড়তি দামে বিক্রি করতে দেখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছু করার থাকে না কৃষকের।
বগুড়া অঞ্চলে মহাস্থান হাট এবং শেরপুর এখন সবজির বড় পাইকারি বাজার। শাজাহানপুরের নয়মাইল হাটও সবজি হাট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দিন-রাত পরিশ্রম করে ক্ষেতে ফলানো সবজি এসব বাজারে এনে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে কৃষকরা। অনেক এলাকায় কৃষক সবজি জমি থেকে বাজার পর্যন্ত আনতে পারে না। মধ্যস্বত্বভোগী পাইকারদের কারণে মাঠেই সবজি বিক্রি করতে হয় নামমাত্র মূল্যে। সেই সবজিই আবার কয়েক দফা হাত বদল হয়ে বিক্রি হয় পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি দামে।

বগুড়ার শেরপুরের সবজিগ্রাম ফুলবাড়ী, চকপাথালিয়া, কালসিমাটি, গাড়িদহ, রামেশ্বরপুর, শিবপুর, দড়িপাড়া, বাংড়া, বোংগা, চণ্ডীযান, দামুয়া, রানীনগর, জয়নগর, মহিপুর, রামনগর, কানুপুর এবং মহাস্থানগড়ের সাতশিমুলিয়া, জোগারপুর, নন্দীপাড়া, লক্ষ্মীপুর, জয়লাবাদ গ্রাম ঘুরে কৃষকের এমন অসহায়ত্বের কথা জানা গেছে। এ সময় কথা হয়েছে প্রায় অর্ধশত সবজি চাষির সঙ্গে। তাদের চোখে-মুখে ছিল হতাশার ছায়া।
মহাস্থান বাজারের মহাজন কবির হোসেন জানান, ২০ বছর ধরে সবজির বাজারটি জমজমাট হলেও পাঁচ-সাত বছর ধরে কৃষকদের উৎপাদন কমে গেছে। আগে এ বাজার থেকে প্রতিদিন ৭০-৮০টি ট্রাক যেত ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লাসহ অন্যান্য শহরে। এখন ৩০-৪০ ট্রাক পণ্যই হয় না। শুধু সপ্তাহের দুটি হাটের দিন গড়ে ৫০ ট্রাক কাঁচামাল যায় এখান থেকে। তিনি জানান, গাড়ি ভাড়া বাড়ায় তারাও এখান থেকে পণ্য ঢাকা বা অন্যান্য শহরে নিয়ে গিয়ে তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। আবহাওয়া ভালো থাকলে মহাজনরা রাতেই ট্রাকে করে কাঁচামাল পৌঁছে দেয় ঢাকার কারওয়ান বাজারে। সেখানেও স্থানীয় দালাল ও কমিশন এজেন্টদের মাধ্যমে সবজি বিক্রি করতে কেজিপ্রতি তাদের ২০ থেকে ৫০ পয়সা বাড়তি খরচ হয়। কখনো কখনো কেজিপ্রতি এক টাকাও দিতে হয় দালালদের।

জানা গেছে, সবজি চাষাবাদের এলাকাগুলোর হাট-বাজারে পাইকার ও মহাজনদের কমিশন এজেন্ট ও ফড়িয়াদের প্রভাব এতটাই প্রবল যে কোনো চাষি ইচ্ছা করলেই তার জমির উৎপাদিত সবজি সরাসরি বড় মহাজন বা সাধারণ ক্রেতার কাছে বিক্রি করতে পারবে না। কৃষকরা দূর-দূরান্ত থেকে শত কষ্টের উৎপাদিত সবজি স্থানীয় বাজারে তোলার পর সেখানে প্রথমেই তাদের কমিশন এজেন্ট বা ফড়িয়ার খপ্পরে পড়তে হয়। এই কমিশন এজেন্ট ও ফড়িয়ারা কৃষকদের কাছ থেকে অত্যন্ত কম দামে সবজি কিনে নেয়। পরে তারা এ সবজি ওই বাজারেই নিজ নিজ মহাজনের কাছে মণপ্রতি ৫০-৬০ টাকা লাভে বিক্রি করে। মহাজনরা সবজি ট্রাকে করে সুবিধামতো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় কাঁচাবাজারে নিয়ে যায়। মহাজনরা ওই সবজির দামের সঙ্গে ট্রাক ভাড়া যোগ করে সেগুলো কেনা দামের চেয়ে মণপ্রতি ৩০-৪০ টাকা লাভে বড় পাইকারের কাছে বিক্রি করে। বড় কাঁচাবাজারের এসব পাইকার আবার সেগুলো মণপ্রতি ২৫-৩০ টাকা লাভে ওই বাজারের মহাজনদের কাছেই বিক্রি করে। তারপর সেই সবজি যায় খুচরা দোকানদারদের কাছে।
উত্তরাঞ্চলের শত শত চাষির উৎপাদিত সবজি এভাবেই বহু হাত ঘুরে রাজধানী ঢাকার ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে। সেখানে প্রতিটি কৃষিপণ্য কৃষকদের বিক্রি দামের চেয়ে প্রায় দুই-তিন গুণ বেশি দামে সাধারণ ক্রেতাদের কিনতে হয়।
মহাস্থান বাজারের কমিশন এজেন্ট আকরাম হোসেন প্রায় ১৫ বছর ধরে স্থানীয় মহাজনদের ক্রেতা হিসেবে কাজ করছেন। প্রতি মণ সবজি কিনে দেওয়ার জন্য তিনি পান ১০-১৫ টাকা। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এ বাজারে সবজি বেচাকেনা করেন তাঁর মতো আরো অনেক এজেন্ট। এ ছাড়া স্থানীয় মহাজনদের নিয়োগকৃত ফড়িয়াও আছে অনেক। প্রতিদিন সকালে বাজার বসে। তবে বুধ ও শনিবার হাটের দিন সবজির আমদানি হয় প্রচুর। বাকি পাঁচ দিনও সবজি আসে, তবে কম।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক চণ্ডিদাস কুণ্ডু জানান, কৃষক মাঠে যে সবজি উৎপাদন করে তার সঠিক বাজারমূল্য পেলে তারা সবজি উৎপাদনে আরো আগ্রহী হতো। ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় প্রতিবছর সবজি আবাদের জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

যশোর থেকে বিশেষ প্রতিনিধি ফখরে আলম জানান, প্রতি কেজি সবজিতে ব্যাপারী মুনাফা করে আট থেকে ১০ টাকা। আড়তদার কমিশন পায় গড়ে দুই টাকা। খুচরা বিক্রেতা লাভ করে কেজিতে আট থেকে ১০ টাকা। এভাবেই হাতবদলের মাধ্যমে এক কেজি সবজিতে ২০ টাকা বেড়ে যায়।
সবজি ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত যশোরের সবজি ক্ষেত থেকে স্থানীয় কাঁচাবাজারে ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, যশোরে প্রতিবছর ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। উৎপাদিত হয় পাঁচ লাখ টন সবজি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত দুই লাখ টন সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। যশোরের সবচেয়ে বড় সবজির পাইকারি হাট সাতমাইল হাট। গত বৃহস্পতিবার হাটে পটল বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২২ থেকে ২৪ টাকা, বেগুন বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, শিম বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা, মুলা বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা কেজি দরে। একই দিন যশোর বড় বাজারে সবজির আড়তে পাইকারি সবজি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি করলা ৪৫ টাকা, মুলা ৩৫-৩৭ টাকা, বেগুন ৪৫-৫০ টাকা, কচুর মুখি ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং বরবটি ৪৫ টাকায়।

সবজির ব্যাপারী জাকির হোসেন বললেন, ‘আমি চৌগাছা উপজেলার ছুটিপুরের কৃষকদের কাছ থেকে সবজি কিনে আড়তে নিয়ে আসি। সবজি আনতে বেশ খরচ হয়। এ কারণে আমরা প্রতি কেজি সবজিতে ৮-১০ টাকা হাতে রাখি। ’
সাতমাইল হাট ঘুরে জানা গেছে, এই হাট থেকে সবজি স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকা, খুলনাসহ অন্যান্য জেলায় যায়। পাইকারি ব্যবসায়ী শাহবাজপুর গ্রামের রেজাউল ইসলাম বললেন, ‘আমরা ট্রাকে পাঁচ-ছয় টন সবজি ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে যাই। ট্রাক ভাড়া ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া রাস্তায় পুলিশ বাবদ ও ফেরিঘাটের খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে এক ট্রাক সবজিতে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। তাতে কেনা দামের চেয়ে ৫-১০ টাকা বেশি দামে সবজি বিক্রি করতে না পারলে আমাদের লোকসান হয়। ’
নরসিংদী থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন বর্মণ জানান, গতকাল স্থানীয় হাটে বৃষ্টির কারণে সবজি উঠেছিল কম। দামও ছিল একটু বেশি। এদিন প্রতি মণ পেঁপে বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকায়। সেই হিসাবে এক কেজি পেঁপের দাম পড়ে সাড়ে ১২ টাকা। একইভাবে বরবটি প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁকরোল ৪০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৩০ টাকা, ঝিঙে ৪৮ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। লাউ আকারভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা পাইকারি বিক্রি হয়েছে।
ধুন্দল নিয়ে ওই হাটে এসেছিলেন উপজেলার বাঘাব গ্রামের কৃষক কাজল মিয়া। তিনি চার গণ্ডা ক্ষেতে ধুন্দলের চাষ করেছিলেন। ঝড়ে ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। গতকাল ১১ কেজি ধুন্দল বিক্রি করেছেন ৩০০ টাকায়। বললেন, ‘বৃষ্টির কারণে মাঠে ফলন নাই, তাই হাটেও লোক নাই। ’
স্থানীয় সবজি বিক্রেতা রিপন মিয়া বলেন, ‘বাজারে এখন সবজির সংকট চলছে। বৃষ্টিতে সবজির জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখনো শীতের সবজি উঠে নাই। আগে নরসিংদী থেকে যেখানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সবজি সরবরাহ করা হতো এখন উল্টো উত্তরবঙ্গের সবজি দিয়ে আমরা চলছি। ’
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক লতাফত হোসেন বলেন, বৃষ্টিতে আগাম শীতকালীন সবজির জমি নষ্ট হয়েছে। কৃষকরা নতুন করে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শিম, লাউসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির বীজ বপন করেছে। আশা করছি, আগামী এক মাসের মধ্যেই বাজারে শীতকালীন সবজি উঠবে। তখন সবজির দামও কমে যাবে। ’
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি সাব্বিরুল ইসলাম সাবু জানান, শাকসবজি উৎপাদনে মানিকগঞ্জের নাম প্রথম দিকে থাকলেও এ বছর স্থানীয় চাহিদা মেটাতে নির্ভর করতে হচ্ছে অন্যান্য জেলার ওপর। বন্যা আর অতিবৃষ্টিতে এ বছর সবজি চাষ করতে পারেনি কৃষকরা। নতুন সবজি পেতে হলে নিদেনপক্ষে আরো এক মাস অপেক্ষা করতে হবে।
মানিকগঞ্জ সদর, সাটুরিয়া, সিংগাইর ও ঘিওর উপজেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সবজির চাষ হয়ে থাকে। কিন্তু এই মুহূর্তে মানিকগঞ্জের অধিকাংশ সবজি ক্ষেত পতিত পড়ে আছে। প্রায় ২০ দিন আগে বন্যার পানি নেমে গেলেও বৃষ্টির কারণে কৃষকরা পূর্ণোদ্যমে মাঠে নামতে পারছে না।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/09/30/548504