৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৮:৫৯

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের নামে প্রতারণা

শিক্ষার মানোন্নয়নে প্রত্যেক উপজেলায় একটি কলেজ ও স্কুল জাতীয়করণ করছে সরকার। সরকারের এই উদ্যোগকে বিতর্কিত করতে একটি দালাল চক্র মাঠে নেমেছে। জাতীয়করণের নামে প্রতারণায় নেমেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকার পরও জাতীয়করণ আটকে দেবে এমন হুমকি দিয়ে টাকা চাইছে চক্রটি। কখনো শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কখনো মাউশির
সরজমিনে কমিটির সদস্য বলে এই টাকা চাওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে তদন্ত আটকে দেয়া, নেতিবাচক প্রতিবেদন জমা দেয়া এমনকি তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ার হুমকিও দেয়া হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক চাঁদা তুলে প্রতারক চক্রের হাতে তুলে দিচ্ছেন। তবে এ লেনদেনে কারো সঙ্গে কারো দেখা হয় না। সবই হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিকাশের মাধ্যমে। এসব প্রতারণায় পা না দিয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি ওইসব ব্যক্তির নাম ও মোবাইল নম্বর দিয়ে পার্শ্ববর্তী থানায় জানাতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন এ সংত্রুান্ত একটি সতর্কবার্তা দিয়েছেন। এতে বলা হয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ/জতীয়করণ কার্যক্রম চলমান। এই জাতীয়করণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, এমন কিছু অসাধু প্রতারক চত্রু বা ব্যক্তি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে এই বলে হুমকি দিচ্ছেন, টাকা না দিলে আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকাভুক্তি থেকে বাদ দেয়া হবে। কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অর্থ লেনদেন করার প্রস্তাব দিলে তাতে সায় দেয় না প্রতারক চত্রু। তাদের ভাষ্য, আমাকে চেনা আপনার জরুরি না, আপনার কাজ হওয়া জরুরি। তাই যা লেনদেন হবে এটা শুধু আপনি এবং আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এক্ষেত্রে বিকাশের লেনদেনই সবচেয়ে নিরাপদ বলে জানায় প্রতারকরা। তাদের প্রতারণাকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয়করণ শাখার প্রধান কর্মকর্তার নাম, মোবাইল নম্বর, তার বাসায় ঠিকানা পর্যন্ত তাদের দেয়া হয়। মাউশির তদন্তে থাকা কর্মকর্তার নাম, মোবাইল নম্বর, কে কে থাকছেন ওই প্রতিষ্ঠানের তদন্তে তাদের নাম ঠিকানা পর্যন্ত ওই শিক্ষককে দেয়া হয় বিশ্বাসযোগ্য করতে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সতর্কবার্তার বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা চত্রু এভাবে অর্থ চায় বা হুমকি দেয়, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তার মোবাইল নম্বরসহ নিকটস্থ থানায় জানাতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, যেখানে চিনি আছে সেখানে পিঁপড়া আসবেই। জাতীরকরণের নামে আর্থিক লেনদেনের প্রতারণা হচ্ছে এটা আমরা অবগত। তবে সেই পিঁপড়া মাউশিতে ভিড়তে পারবে না। জাতীয়করণের তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সরজমিনে তদন্ত রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়াই আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। এর বাইরে জাতীয়রকরণ প্রক্রিয়ায় আমাদের আর কোনো দায়িত্ব নেই। কেউ যদি মাউশির কোনো কর্মকর্তার নামে টাকা চায়, আর সে না জেনে, না বুঝে টাকা দেয় সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার নেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয়করণ সংশ্লিষ্ট শাখার কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগ উঠেছে। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিকভাবে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে এই বলে, কারো বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের প্রমাণ মিললে তাকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এরপর ওইসব কর্মকর্তা অঞ্চলভিত্তিক দালালের মাধ্যমে সেই যোগাযোগ শুরু করেছে। দালালদের উৎপাতে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশিতে লিখিত, মৌখিকভাবে এসব অভিযোগ জানাতে শুরু করে। এরপর বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন উপজেলায় ১৪৮টি বেসরকারি হাইস্কুল জাতীয়করণের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই তালিকা প্রকাশ করেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী দু’দফায় ১২৩টি হাইস্কুল সরকারি করার ব্যাপারে নীতিগত সম্মতি দেন। ওইসব স্কুল পরিদর্শন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে মাউশিকে নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী ৪৮টির পরিদর্শন প্রতিবেদন জমা পড়ে। অর্থ মন্ত্রণালয় এর মধ্যে ৪২টির সরকারিকরণের ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে। এর আগে দেশের আরো বিভিন্ন উপজেলার ৭৩টি স্কুল জাতীয়করণের বিষয়েই প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দেয়। এসব স্কুলের জাতীয়করণের বিরুদ্ধে আদালতে কোনো মামলা আছে কি না তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে জানতে চাওয়া হয়েছে মাউশির মহাপরিচালকের কাছে। এছাড়া ২৮৩টি কলেজ জাতীয়করণের সব প্রত্রিুয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=85372