২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শুক্রবার, ১২:০৭

রোহিঙ্গা ইস্যুকে ঘোলা করার গভীর ষড়যন্ত্র

আরাকানে সেনাবাহিনীর বর্বরতা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রিত ২ হিন্দু নারীকে বাংলাদেশের কতিপয় মৌলবাদী হিন্দু যুবক ভিডিও ধারণ করার সময় মিথ্যা বলতে শিখিয়ে দেয়ার একটি ক্লিপ পাওয়া গেছে। আনকার্ট ক্লিপটিতে দেখা গেছে ওই দুই নারীকে ভিডিও ধারণকারীরা শিখিয়ে দিচ্ছিলেন “মুসলিম, মুসলিম ইয়ান দুই তিনবার হঅ! আ্ল্লাহু আকবর হইয়্যরে জবাই গরি দিয়ে হঅ”। অর্থ্যাৎ মুসলিম, মুসলিম শব্দটা দুই তিনবার করে বল। আল্লাহু আকবর বলে জবেহ করে দিয়েছে বলো। ধারনকৃত ভিডিও সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া হবে এমন প্ররোচনা দিয়ে ওই দুই হিন্দু নারীকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কথা বলতে উৎসাহ দিচ্ছিল উগ্র সাম্প্রদায়িক মহলটি। ওই দুই নারীও তাদের শিখিয়ে দেয়া বুলি আওড়াচ্ছিল ।

অথচ আরাকানে সহিংসতা শুরুর তিনদিন পর (২৭ আগস্ট) বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মংডুর ফকিরাবাজারের ৮ জন রোহিঙ্গা হিন্দু নারীর জবানবন্দিতে উঠে আসে ভিন্ন কথা। তারা জানায়, রোহিঙ্গারা নয় রাখাইন ও বর্মী সৈন্যরা তাদের উপর আক্রমণ করেছে। মগদের সাথে এক হয়ে রোহিঙ্গাদের না মারার কারণে হামলা হচ্ছে তাদের উপর। তারা আরো জানায় রোহিঙ্গা মুসলিমরা হিন্দুদের সহায়তা করেছে।

সম্প্রতি আরাকানের রোহিঙ্গা হিন্দুদের নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বার্মায় সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশের মৌলবাদী হিন্দুরা আরাকানের হিন্দুদের ব্যবহার করে রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে হত্যাকারী হিসেবে প্রমাণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আরাকানী হিন্দুদের ব্যবহার কওে রোহিঙ্গা বিরোধী প্রাথমিক ষড়যন্ত্রগুলো বিফলে যাওয়ায় এবার পাকাপোক্তভাবে মাঠে নেমেছে বার্মিজ গণমাধ্যম। আর তাদের সহায়তা করছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম।

সম্প্রতি ফকিরাবাজারের পাহাড়ের পাদদেশে সন্ধান পাওয়া তিনটি গণকবর থেকে ৪৫জন রোহিঙ্গার গলিত লাশ উত্তোলনের পর আবারো বানোয়াট গল্প তৈরি করেছে প্রশাসন। সেসব হিন্দুদের লাশ বলে প্রচার করা হচ্ছে। দু’একজন হিন্দু নারীকে চাপ প্রয়োগ করে ক্যামেরার সামনে কান্না করতে বাধ্য করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ক্যামেরার সামনে কান্নারত রোহিঙ্গা নারীর স্বজনেরা মারা যায়নি। তারা বাংলাদেশেই অবস্থান করছে।

অন্যদিকে, রোহিঙ্গারা বলছে আরাকানে এত বেশি হিন্দু মারা গেছে এমন খবর কোথাও প্রচার হয়নি। সেসব রোহিঙ্গা মুসলমানের লাশ। তারা দৃঢ়তার সাথে বলছে আরাকানে আরো অনেক গণকবর আছে। রোহিঙ্গারা বার্মিজদের চ্যালেঞ্জ দিচ্ছে, প্রয়োজনে লাশের ডিএনএ টেস্ট করা হোক, নয়তো আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দিয়ে পরীক্ষা করা হোক। তখন সত্য উৎঘাটন হবে।

বলাবাহুল্য, আরাকানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা করে অনেক লাশ গুম করেছে সৈন্যরা। গণকবর দিয়ে নিশ্চিন্ন করার উদ্দেশ্য ছিল তাদের। কিন্তু ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি গণকবরের সন্ধান রোহিঙ্গারা পেয়ে গেছে। সেসব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারের আগে “হিন্দুদের ব্যবহার” করে ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহ করছে।

http://www.dailysangram.com/post/301516