২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:৪৮

নন-সিডিউল ওভার ফ্লাইং ও ফ্লাইট পরিচালনা

অটোমেশনের নামে লুটপাটের পাঁয়তারা

দরপত্র স্থগিত করে তদন্তের নির্দেশ বিমানমন্ত্রীর * মন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করে আজ দরপত্র খোলার দিন ধার্য
নন-সিডিউল ওভার ফ্লাইং ও ফ্লাইট পরিচালনা কার্যক্রম অটোমেশন করার নামে লুটপাটের পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট অটোমেশনের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে ইতিমধ্যে দরপত্র আহ্বান করেছে। আজ দরপত্র খোলার দিন। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লাইসেন্সধারী ৮টি কোম্পানি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননের কাছে চিঠি দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিমানমন্ত্রী বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দরপত্রের কার্যক্রমও স্থগিত করতে বলেছেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বেবিচকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ওই চিঠি তার টেবিলে ফাইলবন্দি করে রেখেছেন। একইসঙ্গে সিন্ডিকেটের পছন্দের একটি কোম্পানিকে এ অটোমেশনের কার্যাদেশ দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছেন।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে পরিচালিত আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের নন-সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনায় সেবা প্রদানের জন্য ৮টি কোম্পানিকে অপারেশনাল সার্ভিস প্রোভাইডার লাইসেন্স (্ওএসপিএল) প্রদান করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। ওই সময় থেকেই কোম্পানিগুলো নন-সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি সংগ্রহ, বিভিন্ন কাগজপত্র ও ডকুমেন্ট সংগ্রহ, ফ্লাইট প্ল্যান তৈরি, সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটের বৈমানিক ও যাত্রীদের পরিবহন, অতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করা, বৈমানিক ও যাত্রীদের কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন করা, ক্লিয়ারেন্স নেয়া, বিদেশি এয়ারলাইন্সের এরোনটিক্যাল, নন এরোনটিক্যাল চার্জ প্রদানের ব্যবস্থা করা ও নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে আসছে। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে নন-সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনায় তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের কঠিন কাজটি ৫ বছর ধরে লাইসেন্সধারী ৮টি বাংলাদেশি কোম্পানি পরিচালনা দক্ষতার সঙ্গে পালন করছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে- এক্সক্লুসিভ ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল, শাফায়েত এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট, ভয়েজার এভিয়েশন সার্ভিসেস, রূপসা এয়ার সার্ভিস, ব্যান এয়ার লিমিটেড ও এয়ার লিংক ইন্টারন্যাশনাল অন্যতম। ‘ওএসপিএল’ কোম্পানি গঠনের আগে বেবিচক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিদেশি বিমান সংস্থার কাছ থেকে ওভারফ্লাইং চার্জ বাবদ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পেত না। লাইসেন্স প্রদানের পর এ খাত থেকে প্রতি বছর গড়ে ১০০ কোটি টাকার বেশি আয় করছে বেবিচক। আগে বিপুল অংকের টাকা বকেয়া থাকলেও বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করতে পারত না বেবিচক। বর্তমানে বকেয়ার পরিমাণ নেই বললেই চলে। অভিযোগে আরও জানা যায়, দিন দিন যখন বেবিচকের আয় বাড়ছে তখন একাধিক বিদেশি কোম্পানি এ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চক্রান্তে নেমেছে। এরই অংশ হিসেবে ওএসপিএল কার্যক্রম অটোমেশন করার পাঁয়তারা চলছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেবিচকের হিসাব শাখার এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, নন-সিডিউল ফ্লাইট পরিচালনার জন্য নির্দিষ্ট কোনো কার্যক্রম নেই যে এটি অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব। প্রতিদিনই এ প্রক্রিয়ায় নতুন নতুন খাত যুক্ত হচ্ছে। কাজেই অটোমেশন করলে এ খাত থেকে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এ অবস্থায় এই প্রক্রিয়া বন্ধ করে ওএসপিএল লাইসেন্সধারীদের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করলে বেবিচক কর্তৃপক্ষ অনেক বেশি লাভবান হবে।

এদিকে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে দেয়া ৮টি কোম্পানির এক চিঠিতে বলা হয়েছে, তারা প্রত্যেক কোম্পানি এ লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ব্যাংক সিকিউরিটি ডিপোজিট হিসেবে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, লাইসেন্স সিকিউরিটি ডিপোজিট বাবদ ২৫ হাজার মার্কিন ডলারসহ মোট ৭৫ হাজার মার্কির ডলার বেবিচককে প্রদান করেছেন। কিন্তু তাদের কিছুই না জানিয়ে বেবিচক কর্তৃপক্ষ ২১ আগস্ট ওভারফ্লাইট/ল্যান্ডিং পারমিশন পদ্ধতি অটোমেশন করার জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে। এতে তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। চিঠিতে তারা অভিযোগ করেছেন, বেবিচকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার পছন্দের একটি কোম্পানিকে কার্যাদেশ দেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ দরপত্রের স্পেসিফিকেশন, অভিজ্ঞতা ও অন্যান্য শর্তাবলী একতরফাভাবে তৈরি করেছে। চিঠিতে তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের আকাশসীমায় যে কোনো ধরনের বিমান চলাচলের অনুমতি ও নিয়ন্ত্রণের জন্য বেবিচকই একমাত্র কর্তৃপক্ষ। বেবিচক জাতীয় স্বার্থে যে কোনো কাজ অটোমেশন পদ্ধতিতে করতে পারে। তারা অটোমেশনের বিরুদ্ধেও নন। অটোমেশন প্রক্রিয়া স্থাপনের পর এর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় দায়িত্বও নিয়ম অনুযায়ী বেবিচকের হাতে থাকার কথা। কিন্তু ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে অটোমেশনের নামে বর্তমানে তৃতীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করার যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে তাতে এ প্রক্রিয়ায় বেবিচক তাদের একক নিয়ন্ত্রণ হারাবে। এতে অটোমেশন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে তাদের ইচ্ছামতো অনুমতি প্রদান করলে ও নির্দিষ্ট সময়ে অনুমতি না পেলে ওএসপিএল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বিদেশি অপারেটরের আস্থার সংকট তৈরি হবে। এতে অনেকে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চাইবে না। এর ফলে প্রতিবছর বেবিচক বিপুল পরিমাণ অর্থ হারাতে পারে।

https://www.jugantor.com/last-page/2017/09/28/159095