২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:২৮

তবুও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্র¯Íাব করল আরইবি

অন্ধকারে গ্রামের মানুষ

বাংলাদেশের গ্রামে বাস করেন এমন কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না, যারা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা পান। তবে অন্ধকারে থেকেই অভ্য¯Í এসব মানুষের কাছে লোডশেডিং তেমন কিছু মনে হয় না। বিদ্যুৎ এলেই তারা কেবল মনে করেন বিদ্যুতের কথা। কিন্তু চাকরি বা কর্মস্থলের সুবাদে যারা ঢাকায় থাকেন কেবল তারাই বোঝেন গ্রাম ও শহরের বিদ্যুৎ সুবিধার পার্থক্য। ঈদ বা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানের সুবাদে আত্মীয়পরিজনের সাথে কাটানোর জন্য রাজধানী ঢাকা থেকে গ্রামে গেলেই হারে হারে টের পান বিদ্যুৎ সুবিধার কথা। এমনও স্থান আছে যেখানে মাইলের পর মাইল বিদ্যুতের খুঁটি রয়েছে। তাতে তার টানানো আছে। কিন্তু দিনে রাতে পাঁচ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়া যায় না। গ্রামে বিদ্যুতের এ সার্বিক পরিস্থিতি উন্নতি না করলেও দুই কোটি এক লাখ গ্রাহকের ওপর আরেক দফা বিদ্যুতের দাম চাপাতে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্র¯Íাব করেছে পলøী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। তারা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্র¯Íাব করেছে পৌনে ১১ শতাংশ। এর সাথে ডিমান্ড ও সার্ভিস চার্জ বাড়ানোরও প্র¯Íাব করা হয়েছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটারি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বিদ্যুতের সাত দশমিক ১৯ শতাংশ বাড়ানোর পে মত দিয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে ৪৪ পয়সা দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।

গতকাল কাওরান বাজারে বিইআরসির কার্যালয়ে আরইবির দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে সভাপতিত্ব করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য রহমান মুরশেদ, মাহমুদউল হক ভুইয়া, আব্দুল আজিজ খান ও মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
গণশুনানিতে আরইবি আবাসিকে ন্যূনতম বিলও ৬৫ টাকা থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫ টাকা করার প্র¯Íাব করেছে। এ ছাড়া সার্ভিস চার্জ ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করার আবেদন জানিয়েছে। আবাসিকে সর্বনি¤œ এক দশমিক ৫৬ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির প¯Íাব করেছে আরইবি। সর্বোচ্চ বৃদ্ধির প্র¯Íাব এসেছে ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট ব্যবহারকারী গ্রাহকদের। এই ধাপে বর্তমানে ইউনিট প্রতি দাম পাঁচ টাকা ৬৩ পয়সা। আরইবির প্র¯Íাব ছয় টাকা ৩৩ পয়সা। অন্যান্য শ্রেণীর গ্রাহকদের েেত্রও সার্ভিস চার্জ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।

জানা গেছে, আরইবির সারা দেশে দুই কোটি এক লাখ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ গ্রাহকই আবাসিক। আরইবির গ্রাহকের জন্য বিদ্যুৎ পরিস্থিতি তেমন উন্নতি করতে পারেনি। শহরের চেয়ে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ এক তৃতীয়াংশও করা হয় না। গত ঈদে বা ঈদের পরে যারা ঢাকা থেকে গ্রামে গিয়েছেন কেবল তারাই বুঝতে পেরেছেন শহর গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের পার্থক্য। দিনে রাতে পাঁচ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না গ্রামে। গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি তাই উন্নতি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন গ্রাহকরা। কিন্তু তা না করে বরং আরেক দফা বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্র¯Íাব করেছে আরইবি।
দাম বৃদ্ধির পেছনে নিজের যুক্তি তুলে ধরে আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, জনবল খরচ, অবকাঠামোগত খরচ, অবচয় খরচ বৃদ্ধি,পরিচালনা ও রণাবেণ খরচ বেড়েছে। চেয়ারম্যান জানান, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে নিট খুচরা সরবরাহ ব্যয় ইউনিট প্রতি ছয় টাকা ৭০ পয়সা। বিদ্যমান খুচরা ট্যারিফ ইউনিট প্রতি ছয় টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ ইউনিট প্রতি ঘাটতি ৬৫ পয়সা। গত অর্থবছরে আরইবি ৮০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। ৭৯টি পলøী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে মাত্র ১১টি আর্থিকভাবে সচ্ছল। অসচ্ছল সমিতিগুলো তাদের ঋণের কি¯িÍ পরিশোধ করতে পারছে না। ঋণ ও সুদের কি¯িÍ বকেয়া পড়েছে ছয় হাজার ২০০ কোটি টাকা।

তাদের প্র¯Íাব বিবেচনা করে মূল্যায়ন কমিটি জানিয়েছে অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে কম দামে পাইকারি বিদ্যুৎ কেনায় বছরে আরইবি প্রায় তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকার মতো সাশ্রয় হয়। এরপর বিতরণ ব্যয় বাড়ায় গ্রাহকপর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত। কমিটি কমিশনের কাছে ইউনিট প্রতি গড়ে ৪৪ পায়সা বৃদ্ধির সুপারিশ রেখেছে।

দাম বাড়ানোর সরাসরি বিরোধিতা করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, রাজধানী ও শহরের মানুষ ভালো মানের বিদ্যুৎ সেবা পেলেও গ্রামের জনগণ তা থেকে বঞ্চিত। নিজের উদাহারণ টেনে তিনি বলেন, তারা বাসা সেগুনবাগিচায় রোডশেডিং প্রায় হয় না। মাঝে মাঝে কুষ্টিয়া জেলা শহরে গেলেও সহনীয় লোডশেড চোখে পড়েছে। কিন্তু তার গ্রামের বাড়িতে বিদ্যুৎ কখন আসে সেটাই বলা মুশকিল। এমন অবস্থায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্র¯Íাব যৌক্তিক নয়। তিনি আরো বলেন, আরইবির জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুতের সংস্থান রাখতে হবে। বিশেষ করে রাতে তাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন বেশি। এ জন্য কমিশনের বিশেষ নির্দেশনার আবেদন জানান তিনি।

এ দিকে গতকাল বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনও দাম বৃদ্ধির সরাসরি বিরোধিতা করে। শুনানিতে অংশ নিয়ে গ্রাহক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং রাজনীতিবিদরা বলেছেন, গ্রামে মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন আট থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। মাসিক বিল, মিটার সংযোগসহ প্রতি সেবার জন্য হয়রানির শিকার হন সাধারণ গ্রাহক। যেখানে বিদ্যুতই থাকে না সেখানে মূল্যবৃদ্ধির প্রশ্নই আসে না। তারা বলেছেন, পলøী অর্থনীতির বিকাশের জন্য মানসম্মত বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সরকারকে সরাসরি ভর্তুকি দিতে হবে। কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানো যাবে না।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/255440