২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ৯:১২

৬০ টাকা কেজির নিচে সবজি মেলে না

রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে সবজিতে ঠাসা বিক্রেতার ঝুড়ি। সকালে তো বটেই, সন্ধ্যার পরও পাওয়া যায় টাটকা শাকসবজি।
এই চিত্র পর্যাপ্ত সরবরাহের সাক্ষ্য দিলেও দামে ভিন্ন বাস্তবতা। বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিপ্রতি ৬০ টাকা। সবজির বাজারে ‘৬০ টাকা’ যেন গড়পড়তা সাধারণ দরে পরিণত হয়েছে। একটু অভিজাত এলাকাগুলোতে ওই সব সবজির দর আরো ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি। প্রায় দেড়-দুই মাস ধরেই সবজির দর এমন চড়া। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় করতে গিয়ে অনেকেই কমিয়ে দিয়েছেন সবজি কেনা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর প্রধান প্রধান বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। কারওয়ান বাজারে খুচরা পর্যায়ে সবুজ রঙের গোল বেগুন, করলা, চিচিঙ্গা, ঝিঙে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
লম্বা বেগুন ৭০, উচ্ছে ৬০ থেকে ৭০, দেড় কেজি থেকে দুই কেজি ওজনের একটি লাউ ৬০ টাকা। চালকুমড়া, কচুর লতিও তা-ই। ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি।
সবজির মধ্যে তুলনামূলক সস্তা পেঁপে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি। পটোল ৪০ টাকা কেজি। ধনেপাতা, কাগজি লেবু, চালতা, আমড়াও কিছুটা সস্তায় মিলছে। তবে দেশি শসা এখনো ৬০ থেকে ৭০ ও হাইব্রিড শসা ৫০ টাকা কেজি। হিমাগারে সংরক্ষণ করা টমেটো ও আমদানি করা গাজরের কেজি ১০০ টাকা।
কোরবানির ঈদের আগেই রাজধানীর বাজারে সবজির দাম বেড়ে যায়। ওই সময় দেশের উত্তরাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে বন্যাকে মূল্যবৃদ্ধির একটা কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। তবে ঈদের পরও দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। কোনো কোনো সবজির দাম উল্টো আরো বেড়েছে। গাঢ় সবুজ রঙের কাঁচামরিচ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। হালকা সবুজ রঙের কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি।
অসময়ের কিছু সবজিও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এগুলোর অন্যতম শিম, বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি। ছোট আকারের ফুলকপি এবং বাঁধাকপিও পাওয়া যাচ্ছে, প্রতিটি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।

শাক এখন যেন শাঁখের করাত। আঁটির আকার ছোট হয়েছে, আবার দাম বেশি। আগে লালশাকের এক আঁটি ১০ টাকা, তিন আঁটি কিনলে ২০ থেকে ২৫ টাকা নিত বিক্রেতারা। এখন ছোট আকারের এক আঁটি লালশাক কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। পুঁইশাক ও ডাঁটাশাক কিছুটা সস্তা, ২০ থেকে ২৫ টাকা আঁটি। কলমিশাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা। তিন আঁটি কিনলে এখন আর আগের মতো ছাড় দিতে চায় না বিক্রেতারা।
দীর্ঘদিন ধরে সবজির দাম বাড়তির ধারায় থাকার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা এখনো বন্যার দোহাই দেন। কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা শেখ সোহেল বলেন, ‘বন্যার সময় তরকারির দাম যে বেড়েছে তা আর কমে নাই। আমরা কী করমু। যে দামে আনি তার থেকে ২-৫ টাকা লাভে ছাইড়া দেই। এমনিতেই আমদানি (সরবরাহ) একটু কম। ’ চার বছর ধরে সবজি ব্যবসায় জড়িত সোহেল আরো বলেন, ‘এখন যে সবজিগুলান পাওয়া যাইতাছে সেগুলান বাসাবাড়িতে, নইলে উঁচা জায়গায় চাষ হয়। দাম বেশি দিয়া কিনন লাগে। তয় সামনে শীতে নতুন শাকসবজি উঠলেই দাম কইমা যাইবো। ’ অনেক দিন পর পটোল তুলনামূলক সস্তা হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ওই সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘ফলন ভালো। গত সপ্তাহেও ৪৫ টাকা ছিল। দুই-তিন দিন ধইরা ৪০ টাকা বেচতাছি। ’ পটোলগুলো যশোর থেকে আনা বলে জানান সোহেল।
তবে কারওয়ান বাজারের সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার কাঁচাবাজারে তরিতরকারির দরে ব্যবধান রয়েছে। পাড়া-মহল্লার ছোট ছোট দোকান বা ভ্যানে করে বিক্রি করা সবজির দামও কিছুটা বেশি। খিলগাঁও রেলগেটসংলগ্ন কাঁচাবাজার ও ফুটপাত, রামপুরা কাঁচাবাজার, নর্দা মোড়ল কাঁচাবাজার, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ছায়েদ আলী সুপার মার্কেট ও কাঁচাবাজারে বেগুন ৭০, উচ্ছে ৮০, করলা ৭০, পেঁপে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। পটোল ও ঢেঁড়স ৫০ টাকা করে কেজি।

এদিকে বাজারে নতুন সবজি যেমন আসতে শুরু করেছে, তেমনি মৌসুমি কিছু সবজি বিদায়ও নিচ্ছে। এমন একটি সবজি কাঁকরোল। সব দোকানে এই সবজি এখন পাওয়া যাচ্ছে না। তা ছাড়া প্রথম প্রথম যখন কাঁকরোল ওঠে তখন বিক্রি ভালো ছিল। এখন ক্রেতা কিছুটা কমে গেছে বলে জানালেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিক্রেতা রোমান।
বারোমাসি কাঁচকলা পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা হালি। সবুজ রঙের মিষ্টি কুমড়া প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। দাম নির্ভর করে আকারের ওপর। এসব তরিতরকারির পাশাপাশি ক্যাপসিকাম, আমলকী, কাঁচা হলুদ, কাগজি লেবু ছাড়াও আরো দুই ধরনের লেবু পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে।
পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে তরিতরকারির দামের ব্যবধান অনেক বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তবে খুচরা বিক্রেতারা দাবি করেছেন, তাঁরা কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা করে মুনাফা করছেন।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/09/27/547467