২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার, ৭:০২

রোহিঙ্গা প্রশ্নে কূটনৈতিক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ

সুশাসন

ইকতেদার আহমেদ

বাংলাদেশ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়’ এ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলার সময় আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়া বাংলাদেশের সপক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেয়। সে সময় নিরাপত্তা পরিষদের অবশিষ্ট চার সদস্যের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের অবস্থান অনেকটা নিরপেক্ষ হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের অবস্থান ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপক্ষে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী স্বল্প সময়ের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচটি সদস্যের মধ্যে চারটি সদস্যরাষ্ট্র রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলেও চীন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। চীনের স্বীকৃতি দেয়ার বিপক্ষে যে যুক্তি ছিল, সেটি হলো বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে জাতিসঙ্ঘের সদস্যভুক্ত একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতির ক্ষেত্রে এটি ভারতের আজ্ঞাবহ ও অধীন।

২৬ মার্চ, ১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হলেও বস্তুত ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ প্রদান-পরবর্তী বাঙালি জাতি স্বাধীনতার দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন শুরুর মধ্য দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চললেও এর পরিসমাপ্তির পূর্বক্ষণে ভারত ও পাকিস্তান সর্বাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ যুদ্ধ শুরু হলেও মাঝপথে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপিত হলে রাশিয়া বাংলাদেশ সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানের দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ভেটো দেয়া অব্যাহত রাখে। সে সময় রাশিয়া ভেটো না দিলে এবং জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে বাধ্য হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ব্যাপ্তিকাল যে প্রলম্বিত হতো অথবা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ত, ঘটনাপ্রবাহ থেকে এমনই ধারণা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পূর্ববর্তী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে ভারতের কোনোরূপ বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল না। স্বাধীনতার আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বস্ত্রের চাহিদার বড় অংশের জোগান আসত পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। তা ছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের জনমানুষের নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রীর বড় অংশের জোগানও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসত। স্বাধীনতা-পরবর্তী পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্যে সম্পূর্ণ ছেদ পড়ে এবং বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের স্থান ভারতের দখলে চলে যায়। বাংলাদেশ বরাবরই ভারতকে বাংলাদেশের নিকটতম বন্ধুরাষ্ট্র মনে করে থাকে। বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়-পরবর্তী প্রতি বছরই বাংলাদেশে ভারতের রফতানি বাড়ছে, কিন্তু সে অনুপাতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রফতানি বাড়ছে না। বিগত বছরে ভারত বাংলাদেশে ৪৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য রফতানি করে। অপর দিকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রফতানির পরিমাণ ছিল চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মে বিশেষজ্ঞ নামধারী যেসব ভারতীয় নিয়োজিত রয়েছেন, তারা এ দেশ থেকে বিগত বছরে যে পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন, এর পরিমাণ ২৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতি বছর চোরাচালানের মাধ্যমে যে পরিমাণ ভারতীয় পণ্যসামগ্রী বাংলাদেশে প্রবেশ করে, গবেষকদের অভিমতÑ তার মূল্যমান দেশটির রফতানি বাণিজ্যের প্রায় চার গুণ। তা ছাড়া প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ভ্রমণ, চিকিৎসা, কেনাকাটা ও শিক্ষায় যে পরিমাণ অর্থ এ দেশবাসী ভারতে গিয়ে ব্যয় করে তা এ দেশ থেকে ভারতীয়দের সামগ্রিক রফতানি আয়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

বাংলাদেশের সাথে বরাবরই রাশিয়ার সম্পর্ক বন্ধুভাবাপন্ন। সম্প্রতি বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে এক বিলিয়ন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এর আগেও বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে প্রায় সমপরিমাণ মূল্যের বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করে। বাংলাদেশের রূপপুুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বিষয়ে রাশিয়ার সাথে ১৩ বিলিয়ন ডলারের যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে, এটি কোনো বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ প্রকল্প।
চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও ১৯৭৫ সালের পর চীনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে; যা বর্তমানেও অব্যাহত আছে। বর্তমানে বাংলাদেশ চীন থেকে সর্বাধিক পণ্য আমদানিকারক দেশ। চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশের বহু সড়ক ও সেতু নির্মিত হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন বেশির ভাগ বড় প্রকল্প চীনের অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পদ্মা সেতু প্রকল্প। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের জন্য চীন বাংলাদেশের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ও গোলাবারুদের বড় অংশের চাহিদা চীন থেকে আমদানির মাধ্যমে মেটানো হয়। বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর কর্মকর্তারা নিয়মিত চীনের কাছ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে আসছেন। চীনের প্রেসিডেন্ট গেল বছর বাংলাদেশ সফরকালীন সরকারি ও বেসরকারিভাবে বাংলাদেশে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের যে প্রস্তাব দেয় তা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাবে, এ বিষয়টি এ দেশের মানুষ অনুধাবন করতে সক্ষম।

রোহিঙ্গারা বার্মা রাষ্ট্রের আরাকানে বসবাসরত মুসলিম জনগোষ্ঠী। তারা বার্মা রাষ্ট্রে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অপরাপর ১৪টি প্রধান ও প্রায় দেড় শ’-এর কাছাকাছি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মতো একটি পৃথক জাতিসত্তা। রোহিঙ্গারা সেই সপ্তম শতাব্দী থেকে বংশপরম্পরায় আরাকানে বসবাস করে আসছে। ব্রিটিশ কর্তৃক ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভের সময় আরাকান একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ ছিল। সে সময় বার্মায় বসবাসরত ৭০ লাখ মুসলমানের প্রায় অর্ধেক আরাকানে বসবাস করত। বার্মার প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান বিশ্বব্যাপী ধিকৃত তথাকথিত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সু চির পিতা অং সান রোহিঙ্গাদের বার্মার নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। অং সানকে হত্যা-পরবর্তী উনু ক্ষমতাসীন হলে তিনিও রোহিঙ্গাদের বার্মার নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেন। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় সামরিক শাসক নেউইনের আমলে। এ ব্যক্তি অভিনব আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে দাবি করতে থাকেন, ১৮২৩ সালের আগে যারা বার্মার নাগরিক ছিল তাদের বংশধররাই বার্মার নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত হবে। নেউইনের এ অভিনব নাগরিকত্ব আইন সেথায় হাজার বছর ধরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের তথাকার নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে দেখা না দিলেও অনেকটা জোর-জবরদস্তিমূলক তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। ১৯৬২ সাল থেকে তথা হতে বিতাড়নের প্রক্রিয়ার সূচনা করে। অতঃপর বিতাড়ন প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন থেমে থাকলেও আবার ১৯৭৮ সালে তা শুরু হয় এবং এরপর ১৯৯২, ২০১২ ও ২০১৬ সালে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে তাদের মাতৃভূমি আরাকান থেকে বিতাড়নপূর্বক বাংলাদেশে প্রবেশে বাধ্য করা হয়। আরাকানে বসবাসরত রোহিঙ্গারা দীর্ঘ দিন ধরে সব ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এমনকি তাদের আরাকানবহির্ভূত বার্মার অন্য কোনো অঞ্চলে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রেও তারা সম্পূর্ণরূপে বঞ্চনার শিকার। বার্মার সামরিক শাসকেরা আরাকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের সম্পূর্ণরূপে নির্মূলে যে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের নাগরিকত্বের অস্বীকৃতি ও সেখান থেকে বিতাড়ন এরই অংশ। এ বিতাড়ন প্রক্রিয়াকে সম্পন্ন করার প্রয়াসে বর্তমানে তারা যে নির্মমতা ও নৃশংসতায় রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ, বাসগৃহে অগ্নিসংযোগ ও সম্পদ লুণ্ঠন করছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ নির্মমতা ও নৃশংসতার মাত্রা সম্প্রতি এতই ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রায় চার লাখ নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ নিদারুণ কষ্ট ভোগ করে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধ্য হয়। এ প্রবেশপ্রক্রিয়া এখনো অব্যাহত আছে এবং এটিতে ছেদ না ঘটলে অচিরেই যে আরাকান রোহিঙ্গাশূন্য প্রদেশে পরিণত হবে তা অনেকটা নিশ্চিত।
বার্মার সামরিক শাসকদের পক্ষ থেকে যদিও দাবি করা হচ্ছে, আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) নামক একটি সশস্ত্র সংগঠন বার্মার পুলিশ ও সেনাচৌকিতে আক্রমণ ও হত্যার ঘটনা ঘটানোর কারণেই এ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, কিন্তু সেখান থেকে আগত রোহিঙ্গাদের ভাষ্যে জানা যায়, সেখানে আরসার কোনো ধরনের সশস্ত্র কার্যক্রমের অস্তিত্ব নেই এবং আরসার সশস্ত্র কার্যক্রমের কাহিনী রোহিঙ্গাদের আরাকান থেকে বিতাড়নের উদ্দেশ্যে বার্মার সামরিক শাসকদের সৃষ্ট।
রোহিঙ্গাদের ওপর সু চির নেতৃত্বে বার্মার সামরিক শাসকেরা যে অমানুষিক ও অবর্ণনীয় অত্যাচার ও নিষ্পেষণ চালাচ্ছে তাকে ভারত, রাশিয়া ও চীন ছাড়া জাতিসঙ্ঘের সদস্যভুক্ত অন্য সব রাষ্ট্র ও জাতিসঙ্ঘ এবং এর অধীনস্থ সংস্থাগুলো নৃশংসতা ও নির্মমতার বহিঃপ্রকাশে মানবতার চরম লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পৃথিবীর সব স্বনামধন্য মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের প্রতি নির্মমতা ও নৃশংসতার অবসান ঘটিয়ে এর সাথে জড়িতদের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি তোলা হয়েছে।

বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে জনসংখ্যার ভারে জর্জরিত। বাংলাদেশের পক্ষে দীর্ঘকাল ধরে আরাকান থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে লালনপালন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আরাকানে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নিরাপদ অঞ্চল (সেফ জোন) গঠন করে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে যেন সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন কার্যক্রম শুরু হয়। এ ক্ষেত্রে বার্মার সামরিক শাসকেরা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হলে তথা জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষীদের দিয়ে যেভাবে পৃথিবীর অন্যান্য দুর্ভোগকবলিত অঞ্চলে শান্তি রক্ষার কার্যক্রম চলছে, সেভাবে যেন এখানেও তা করা হয়। বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে দুই দফায় বিষয়টি যুক্তরাজ্য ও অপর কয়েকটি রাষ্ট্র জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপন করলেও চীনের ভ্যাটোর কারণে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। বাংলাদেশ কখনো বিশ্বসংস্থায় ভারত, রাশিয়া ও চীনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়নি। ভারত, রাশিয়া ও চীন আরাকানে রোহিঙ্গাদের ওপর তথাকার সেনা শাসকদের অত্যাচার ও নিপীড়নকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে আখ্যা দিয়ে অমানবিক কাজের সপক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশের কাছ থেকে বিপুলভাবে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান রাষ্ট্র হিসেবে ভারত, রাশিয়া ও চীনের জন্য বাংলাদেশের স্বার্থের প্রতিকূলে বার্মার সামরিক শাসকদের পক্ষে অবস্থান নেয়া অনাকাক্সিক্ষত, অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত। তা ছাড়া মানবিকতাকে সর্বাগ্রে অবস্থান দেয়, এমন কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে বার্মায় রোহিঙ্গাদের ওপর যে অত্যাচার ও নিষ্পেষণ চলছে তা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ভারত, রাশিয়া ও চীন বাংলাদেশের জনমানুষকে এবং বিশ্ববিবেককে বিস্মিত করে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িত রাষ্ট্রটির সেনাশাসকদের পক্ষাবলম্বন করে পৈশাচিকতা ও বর্বরতাকে এড়িয়ে চলার পথ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বন্ধুভাবাপন্ন এ তিনটি রাষ্ট্রের বাংলাদেশের দুর্দিনে পাশে না দাঁড়ানোয় দেশবাসী ব্যথিত ও মর্মাহত, যা দেশটির মানুষের কাছে কূটনৈতিক বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিয়েছে।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/254859