আগারগাঁও এলাকার বেশির ভাগ রাস্তার চিত্রই এমন
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৭:০৩

খোঁড়াখুঁড়িতে সড়ক বেহাল বিপর্যস্ত জনজীবন

মহসীন আলী চাকরি করেন রাজধানীর মগবাজারের একটি বেসরকারি ব্যাংকে। ছেলে মিরপুরের মনিপুর স্কুলের প্রধান শাখায় পড়ে।
তাই ছেলের কথা বিবেচনা করে বাসা নিয়েছেন পূর্ব মনিপুরে। কিন্তু তিন মাস ধরে বাসে করে অফিসে যাওয়া-আসার সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁকে। আগে স্বাভাবিকভাবে এই পথটুকু যাওয়া-আসা করতে এক থেকে সোয়া ঘণ্টা সময় লাগলেও এখন লাগছে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। এর প্রধান কারণ মিরপুরের প্রধান সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি।
গতকাল রবিবার সকাল সোয়া ৮টায় তাঁর সঙ্গে কথা হয় শেওড়াপাড়ার বাটা শোরুমের সামনের রাস্তায়। স্বাধীন এক্সপ্রেসের একটি বাসে বসে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে ৮টার সময় বাসা থেকে বের হলে সহজেই অফিসে যেতে পারতাম। কিন্তু তিন মাস ধরে সাড়ে ৭টার সময় বের হচ্ছি। এই যে দেখেন আধাঘণ্টারও বেশি সময়ে মাত্র মিরপুর ১০ নম্বর থেকে শেওড়াপাড়ায় পৌঁছেছি। আবার ফেরার সময় পরিকল্পনা কমিশন পার হলেই শুরু হয় দীর্ঘ যানজট, যা কখনো কখনো মিরপুর ১০ নম্বরে গিয়েও ঠেকে।
আসলে সড়কে খোঁড়াখুঁড়িতে আমাদের মিরপুরবাসীর জীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। ’
মনিপুর স্কুলের শেওড়াপাড়া শাখার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অভিভাবক সিন্ধা ভৌমিক বলেন, ‘বাচ্চাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। একেকবার একেক সংস্থা রাস্তা কাটছে। দুই মাস এই শেওড়াপাড়া-কাজীপাড়ার রাস্তা কাটা অবস্থায় থাকার পর অবশেষে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এখন পিচ ঢালাই করতে আরো কয় মাস লাগবে কে জানে! কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করতে সমস্যাটা কোথায় বুঝতে পারছি না। ’

গতকাল সকাল ৯টায় আগারগাঁওয়ের বিমান জাদুঘরের সামনে দেখা গেল উল্টো পথে চলছে বাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা। পাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও উল্টো পথে চলা যানবাহনকে তারা বাধা দিচ্ছে না, বরং অনেক সময় সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে পরিকল্পনা কমিশনের সামনে দিয়ে আসা মিরপুরগামী যানবাহনগুলো আগারগাঁও মোড়ে এসে উল্টো রাস্তায় ঢুকে যাচ্ছে। তারা তালতলা দিয়ে আবার সঠিক রাস্তায় ফিরছে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগারগাঁও মোড় থেকে তালতলা মাত্র তিন মিনিটের দূরত্ব। অথচ আমি ওই রাস্তায় গাড়ি ঢোকালে কমপক্ষে আধাঘণ্টা লাগত। কারণ তিন ভাগের দুই ভাগ রাস্তাই কাটা। তাই উল্টো পথে এলাম। যখন আবার এই পাশে গাড়ির চাপ থাকে তখন যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। ’
সরেজমিন মিরপুরের প্রধান সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর ১২ থেকে ১০ নম্বর পর্যন্ত রাস্তায় এখন খোঁড়াখুঁড়ি না থাকলেও গাড়ি চলছে ধীরে ধীরে। তবে পপুলার ডায়াগনস্টিক-২-এর সামনে মেট্রো রেলের কাজের কারণে রাস্তার অর্ধেক ঘিরে রাখায় গাড়িগুলো থমকে যাচ্ছে। এ ছাড়া পুরো রাস্তায়ই এলোপাতাড়ি বাসগুলো দাঁড়িয়ে থাকায় সৃষ্টি হয় যানজটের। তবে মিরপুর ১০ থেকে ১২ নম্বরে যেতে নগরবাসীকে পড়তে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে। মিরপুর ১০ নম্বরে ফায়ার সার্ভিসের সামনে কয়েক মাস আগে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হলেও তা এখনো মেরামত হয়নি। এরপর মিরপুর ১১ থেকে সাড়ে ১১ পর্যন্ত সব সময়ই লেগে থাকে যানজট। কারণ পুরবী সিনেমা হলের সামনে রাস্তা কাটা হলেও এখনো তা পড়ে আছে একই অবস্থায়।

তবে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে আগারগাঁওয়ের দিকে এগোতেই কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার রাস্তার একাংশ খোঁড়াখুঁড়ি হলেও তা শুধু মাটি ও খোয়া দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। ফলে রাস্তার একাংশে কোথাও নিচু, আবার কোথাও উঁচু। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে রাস্তার কিছু অংশে পিচ উঠে গর্ত হয়ে যাওয়ায় গাড়িগুলো বিপদে পড়ছে। তবে এ রাস্তায় এখন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর যেতে। পরিকল্পনা কমিশনের পর থেকে বিসিএস আগারগাঁও মোড় পর্যন্ত রাস্তার অর্ধেকটা কাটা। কোনো রকমে মাটি দিয়ে ভরাট করা হলেও কোথাও অনেক উঁচু মাটির ঢিবি, আবার কোথাও বড় গর্ত। ফলে এক লাইন করে গাড়িগুলোকে ধীরে ধীরে চলতে হচ্ছে।

আর আগারগাঁও মোড় থেকে বিসিএস কম্পিউটার সিটির সামনে দিয়ে আগারগাঁও তালতলা পর্যন্ত রাস্তার অর্ধেকটা কাটা। তবে সেই কাটা রাস্তায় প্রায় তিন মাসেও মাটি ভরাট হয়নি। ফলে এক লাইনে খুবই ধীরে যানবাহন চলে। এতে সন্ধ্যা থেকেই যানজট চন্দ্রিমা উদ্যান পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে। এই কোয়ার্টার কিলোমিটার রাস্তা পার হতেই যানবাহনগুলোকে আধাঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়। তবে এর পরে এগোলেও নিস্তার নেই। মিরপুর ১০ নম্বরে যেতে শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়ার কিছু অংশ খোঁড়া হলেও তা কোনোমতে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে, যেখান দিয়ে যানবাহন চলা কষ্টকর। ফলে গাড়ির একটু চাপ বাড়লেই বড় ধরনের যানজট লেগে যায়।

কারওয়ান বাজারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমার বাসা মিরপুর ১১ নম্বরে। অফিস থেকে ফেরার সময় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আগারগাঁও মোড়ে এলেই মহাযন্ত্রণায় পড়ি। গাড়ি নড়তেই চায় না। কোনো রকমে টিপে টিপে এক লাইনে গাড়িগুলো যায়। আসলে মিরপুরে থাকাটা সব সময়ই যন্ত্রণার। বৃষ্টি হলেই শেওড়াপাড়া-কাজীপাড়ায় কোমর পানি হয়ে যায়। আশপাশের ছোট ছোট রাস্তাও ডুবে যায়। আর এখন বৃষ্টি না থাকলেও খোঁড়াখুঁড়িতে নাকাল হয়ে পড়েছি। ’
মিরপুরবাসীর যাতায়াতের জন্য আরেকটি রাস্তা হলো ৬০ ফিট সড়ক, যা মিরপুর ২ নম্বর থেকে আগারগাঁওয়ে এসে ঠেকেছে। এখন অনেকেই এই বিকল্প পথ ব্যবহার করে। কিন্তু আগারগাঁও মোড়ে যানজট থাকায় অনেকেই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা দিয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সামনে গিয়ে ওঠে। কিন্তু ছয় মাস ধরে রাস্তাটির ভয়াবহ অবস্থা। রাস্তায় কোনো পিচের চিহ্ন নেই। বড় বড় গর্তে পুরো রাস্তা ভরা। রিকশা চলতে গেলে প্রায়ই উল্টে পড়ছে। আবার বৃষ্টিতে কিছু কিছু জায়গায় মাটিগুলো উঁচু হয়ে রয়েছে। ফলে এ রাস্তায় চলতে গেলে অনেক চড়াই-উতরাই পার হতে হয়। এতে মিরপুরবাসী বিকল্প সড়কটির সুফলও ঠিকমতো পাচ্ছে না।

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/09/25/546620