২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৬:৫৪

ভারতে পাটপণ্য রপ্তানিতে ধস

ভারত অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপের পর দেশটিতে বাংলাদেশি পাটপণ্য রপ্তানি আয় ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় পাট ও পাটপণ্য। পাটপণ্যের রপ্তানি কমে যাওয়ায় প্রতিবেশী দেশটিতে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ও কমেছে।

বাংলাদেশি পাটপণ্যের দ্বিতীয় বড় বাজার ভারত। গত জানুয়ারি মাসে দেশটি বাংলাদেশি পাটসুতা, চট ও চটের বস্তা রপ্তানির ওপর প্রতিষ্ঠানভেদে মেট্রিক টনপ্রতি ১৯ থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে। এরপরই রপ্তানি আয় কমতে শুরু করে বলে জানিয়েছেন পাটকলের মালিকেরা।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভারতে পাটসুতা, চট ওৎ বস্তা রপ্তানি করে সাড়ে ৮ কোটি ডলার আয় হয়, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪১ শতাংশ কম। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে পাটপণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল ১৪ কোটি ৪১ লাখ ডলার। সব দেশ মিলিয়ে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের পাট ও পাটপণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে ৯৬ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।
ভারতে রপ্তানি আয় কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বেশ কিছু পাটকল, যারা রপ্তানির ক্ষেত্রে অনেকাংশে ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান তাঁর কার্যালয়ের মাধ্যমে দেওয়া বক্তবে্য প্রথম আলোকে বলেন, এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা উদ্বেগজনক। যাঁরা রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, তাঁরা খুব হতাশ ও ব্যবসায়িকভাবে দুর্দশাগ্রস্ত। তিনি বলেন, পাটকলগুলো এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু ধাক্কা এত বড় যে তা সামাল দেওয়া অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
স্বাভাবিক দামের চেয়ে কম দামে পণ্য রপ্তানি করলে আমদানিকারক দেশ রপ্তানিকারকদের ওপর অ্যান্টিডাম্পিং নামে সুরক্ষা শুল্ক আরোপ করতে পারে। ভারতের পাটকলমালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির সংশ্লিষ্ট সংস্থা ডিরেক্টর জেনারেল অব অ্যান্টিডাম্পিং অ্যান্ড অ্যালাইড ডিউটিজ (ডিজিএডি) এ বিষয়ে তদন্ত করে শুল্ক আরোপের সুপারিশ করে। সংস্থাটির সুপারিশে গত ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশি পাটসুতায় টনপ্রতি ৯৭ থেকে ১৬২ ডলার, চটে ৩৫২ ডলার ও বস্তায় ১২৫ থেকে ১৩৯ ডলার শুল্ক আরোপের গেজেট জারি করে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়।

শুল্ক আরোপের পর সবচেয়ে বেশি কমেছে পাটের বস্তা ও চট রপ্তানি। গত অর্থবছর ভারতে ১ কোটি ৮১ লাখ ডলারের চট ও বস্তা রপ্তানি হয়, যা আগের বছরের চেয়ে ৬৮ শতাংশ কম। অন্যদিকে পাটসুতা রপ্তানি কমেছে ২৩ শতাংশ। গত বছর পাটসুতা রপ্তানি হয়েছে ৬ দশমিক ৬৯ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ২ কোটি ডলার কম।
বিএস জুট মিলের মোট রপ্তানি আয়ের ২৫ শতাংশ যেত ভারতে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো. জহুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ভারতে তাঁর প্রতিষ্ঠানের পণ্য রপ্তানি আয় অনেক কমে গেছে। এখন তিনি মূলত চীন ও ইরানে পণ্য রপ্তানি করছেন। তিনি দাবি করেন, সাম্প্রতিক কালে প্রতিটি রপ্তানি বাজারেই পাটপণ্যের চাহিদা কম। ফলে প্রতিটি মিলই উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে। ভারতের বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে এখন দাম কমিয়ে দিতে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানি আয় ছিল প্রায় ৬৭ কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ কম। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের, যা ভারতের অনুকূলে। ভারত বাংলাদেশি হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ও মাছ ধরা জালেও অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপের বিষয়ে তদন্ত করছে।
ভারতে পাটসুতা, চট ও বস্তা রপ্তানিতে আয়
অর্থবছর রপ্তানি
২০১৪-১৫ ৮.৮১ কোটি ডলার
২০১৫-১৬ ১৪.৪১ কোটি ডলার
২০১৬-১৭ ৮.৫ কোটি ডলার
সূত্র: রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)

http://www.prothom-alo.com/economy/article/1331051