২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সোমবার, ৬:৩১

কেন চালের বাজার চড়া


গৌতম দাস

বাংলাদেশে ‘চড়া চালের বাজার’ বা এর চরম অবস্থা ‘দুর্ভিক্ষ’ শব্দগুলো ব্যবহার কমবেশি লোপ পেতে শুরু করেছিল। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের পর তুলনামূলকভাবে ভালো সময় কাটলেও দাম চড়া বা চালের অভাবের মতো উল্লেখযোগ্য বছর ছিল ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম বছরে। ওই বছরের মাইলস্টোন বা রেকর্ড হলো, মোটা চালের দাম ৪২ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া। এবার ২০১৭ সালে আবার অনাকাক্সিক্ষতভাবে চালের দাম চড়া। আর এবারের নতুন রেকর্ড হলোÑ মোটা চালের দাম বেনাপোল বন্দরেই ৪৮ টাকা বা এর উপরে উঠেছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, চুয়াত্তরের চালের বাজার আর আজকের চালের বাজারের মধ্যে মৌলিক ফারাক আছে। তা হলো, সেকালে চালের বাজার ছিল কমিউনিস্ট সোভিয়েত মডেলে কথিত পরিকল্পিত অর্থনীতির আলোকে সাজানোÑ যার অর্থ আমরা তখন ‘রেশনে’ চাল পেতাম। একালের অনেকের কাছে ‘রেশন’ শব্দটা অপরিচিত হয়তো। ‘রেশন’ শব্দের অর্থ হলো, বিপুল ভর্তুকি দিয়ে সরকারের চালের দাম নামিয়ে রাখা। আর প্রত্যেক পরিবারের সদস্য গুনে সে অনুযায়ী, পরিবারের সাপ্তাহিক চাহিদার চাল নির্দিষ্ট দোকান থেকে বাজারের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি করা। কমিউনিস্ট অনুমানের অর্থনীতির জ্ঞানে তাদের বিরাট ক্ষোভ ‘বাজার’ এর উপরে, অর্থাৎ বাজারকে কার্যকর বা ফাংশনাল হতে না দেয়া। তাদের কাছে বাজার ম্যানেজেবল না। তাই বাজার ভেঙে দিয়ে তাদের কাছে বিকল্প হলো রেশনিং বা ভর্তুকিব্যবস্থা। তাদের ধারণা, ‘বাজার’ মুনাফা বা শোষণে সহায়তা করে। এটা সম্ভব হয়, কারণ মজুদদারেরা বাজারের মধ্যে ‘নোঙরা অযাচিত হাত’ ঢুকিয়ে বাজারকে স্বাভাবিক থাকতে দেয় না। অর্থাৎ চাহিদা ও জোগানে পণ্যের মূল্য থিতু হওয়ার ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণের ফ্যাক্টরগুলোকে অবজেকটিভ না থাকতে দিয়ে সাবজেকটিভ ইচ্ছার হাত ঢুকিয়ে দেয়ার সুযোগ নেয়া হয়। এটা সত্যি যে, বাজারকে অবজেকটিভ রেখে দেয়া খুবই কঠিন। কে কোথা থেকে বাজারের মূল্যকে প্রভাবিত করতে হস্তক্ষেপ করে বসে, তা ঠেকানো শক্ত আইনকানুন করেও সহজে সম্ভব হয় না। এই সমস্যা তো আছেই; কিন্তু অন্য দিকে আবার চালের মতো মানুষের প্রধান খাদ্য, মুখ্য ভোগ্যপণ্যে ভর্তুকির অর্থনীতি জারি রাখলে রাষ্ট্রকে বিপুল পরিমাণে অর্থ সংস্থান করতে হয়। তা জোগাড় করতে যেকোনো সরকারকে হিমশিম খেতে হয়। ভর্তুকি কোথা থেকে আসবে? স্বাভাবিকভাবেই এটা রাজস্ব আয়ের ওপর এক বিরাট চাপ সৃষ্টি করে। ফলে সরকারি ব্যয়ের অন্যান্য খাতকে প্রায় সময় ছেঁটে ফেলতে হয়। কারণ চালে ভর্তুকি দেয়ার অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি দরকারি। আবার, চালের মূল্যের সাথে শ্রমের ন্যূনতম মজুরি সরাসরি সম্পর্কিত। চালের মূল্য কম তো, ন্যূনতম মজুরি তুলনামূলকভাবে কম হবে। তাই সমাজে মোট উৎপাদনের বেশির ভাগ অংশই যদি বেসরকারি খাতে হয়, তাহলে চালে ভর্তুকির সুফল আসলে যাবে কারখানা মালিকের ঘরে, কম মূল্যে শ্রম কিনবেন তিনি। মানে, পাবলিক মানি যাবে ব্যক্তি মালিকের ঘরে। এ ছাড়া ভর্তুকির সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো, এর ম্যানেজমেন্ট বা ব্যবস্থাপনা। ঠিক যার ভর্তুকি দরকার তিনি ছাড়াও অজস্র লোক যাদের দরকার নেই, তারাও ভর্তুকির আওতায় এসে যায়। ফলে ভর্তুকির চাল উঠিয়ে নেয়, বাজারে বিক্রি করে, ভুয়া নামের রেশন কার্ড থাকে ইত্যাদি। ভর্তুকির বিরুদ্ধে বা পক্ষের যুক্তি আরো যাই থাক, আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশ থেকে খাদ্যে ভর্তুকি বা রেশনিং ব্যবস্থা একেবারেই উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। কারণ, সরকার চালানোর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা আনা আর সরকার চালাতে ব্যয় কমানো, এটা করতে প্রয়োজনগুলোকে সুনির্দিষ্ট আর অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করা, এভাবে ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো যাতে খরচ কম হয় আর সেই সাথে ব্যবস্থাপনা দক্ষ হয় ইত্যাদি করতে নেয়া হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের এক প্রকল্প। এর শর্ত মান্য করতে গিয়ে বাংলাদেশের রেশনিং ব্যবস্থা উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। আসলে ব্যাপারটাকে বলা যায়, চালের বাজারকে ভিন্নভাবে ম্যানেজ করার দিকে চলে যাওয়া, ঠিক রেশনিং উঠানো বা ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়া নয়। এই তত্ত্বটা হলোÑ ১. চালের বাজারকে ফাংশন করতে দেয়া। ২. সরকার হবে সিস্টেমের মনিটর আর ব্যবস্থাপক। ৩. এই মজুদদারি মোকাবেলার সবচেয়ে সহজ পথ হবে যে, সরকার নিজেই হবে এক বিরাট মজুদদার; ফলে ব্যক্তি মজুদদার হয়ে যাবে অকার্যকর ক্ষমতার চুনোপুঁটি। ছোট মজুদদারিও লাভজনক হবে কি না সে সিদ্ধান্ত ও নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে চলে আসবে। ৪. ধান ওঠার পর সংগ্রহমূল্য সরকার নিজে নির্ধারণ করে দিয়ে চালের দাম কোন সীমার মধ্যে থাকবে এর ওপর নিয়ন্ত্রণ। ৫. এটা হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ। আগে বলা ব্যবস্থাগুলো নেয়ার পরেও যদি বাজারে চালের দাম সরকারের কাক্সিক্ষত রেঞ্জের বাইরে চলে যায় তাহলে এই ব্যবস্থা নেয়া হবে। যেমন এক সপ্তাহে চালের দাম অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেলে সরকার ডিলারের মাধ্যমে ট্রাকে করে বাজারে চাল ছাড়বে। এভাবে সরাসরি চাল বেচবে। আর আগের কম দামে সে চাল বেচা শুরু করবে, চাল ছাড়তেই থাকবে যতক্ষণ বাজারে চালের দাম আগের পর্যায়ে না নেমে আসবে। এই জায়গাটায়ই হলো আসল লড়াই। বাজারের মোট মজুদের চেয়ে সরকারের মজুদ সবসময় অনেক বেশি বলে একপর্যায়ে বাজারের ব্যক্তি মজুদদার হেরে যাবে।

বাংলাদেশের অভিজ্ঞতার হিসাবে দশ-চৌদ্দ লাখ (দশ লাখের নিচে নয়) টনের খাদ্য মজুদ থাকলে ব্যক্তি মজুদদার সরকারের কাছে হারবেই। এই ব্যবস্থাপনার নিয়ম ও মাপকাঠিই সাব্যস্ত হয়েছিল আশির দশকের প্রথমার্ধ থেকে। কোনো বড় ধরনের বিপর্যয় ছাড়াই তা চলেছিল ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত। এই হিসাবে বলা যায় পুরনো রেশনিং ব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়ে বাস্তবায়িত, বিকল্প পরিকল্পনা ছিল সফল। কিন্তু ব্যাপারটার তাৎপর্য কী? একবাক্যে বললে, কমিউনিস্টরা বাজার ম্যানেজেবল নয় সিদ্ধান্তে গিয়ে বাজারকে অকেজো করে দিয়েছেন, ভর্তুকির এক রেশনিং ব্যবস্থা চালু করে। এর বিকল্প হলো, বাজার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। আর চাহিদা-জোগানোর খেলায় সরকার নিজেই বাজারের সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় হিসেবে নেমে সব ছোট খেলোয়াড়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এটাকে আমরা এখন থেকে ‘বিকল্প বাজার ব্যবস্থা’ নামে অভিহিত করব।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বর্তমান চালের বাজারের হাল এটা প্রমাণ করে যে, বিশ্বব্যাংকের প্রতিষ্ঠিত এবং প্রমাণিতভাবে কার্যকর ‘বিকল্প বাজারব্যবস্থা’ আবার পরাজিত হয়েছে ব্যক্তি মজুদদারদের কাছে। এটা ঠিক যেমন ২০০৭ সালে পরাজিত হয়েছিল। কিন্তু কেন এটা হলো?

দুইবারের পরাজয়ে একটা অভিন্ন বিষয় আছে। তা হলো, সরকারি চালের মজুদ ১০ লাখ টনের অনেক নিচে নেমে যাওয়া; ২০০৭ সালে আইলা ঘূর্ণিঝড়ের পর এটা মাত্র দেড় লাখ টনে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু এর আগেই চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের উপদেষ্টা প্রকাশ্যে টিভিতে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন যে, সরকারি গুদামে মজুদের পরিমাণ মাত্র দেড় লাখ টন। আর সাথে এটাও বলা হয়েছিল, এখন সরকারের কিছু করার নেই।

আর এবারো সরকারের চাল মজুদের পরিমাণ তিন লাখ টনের নিচে নেমে গেছে। এর অর্থ ব্যক্তি মজুদদারেরা বাজারের ডমিনেটিং কর্তা হয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে আরো কারণ আছে। ২০০৭ সালে বাজারে হেরে যাওয়ার পরে রিকভারি করে বাজারে ফিরে আসার জন্য সরকার কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ও সফল হয়েছিল, যা বেঞ্চমার্ক হয়ে আছে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে, সেসব বেঞ্চমার্ক বা অভিজ্ঞতা থেকে এবার শিক্ষা নেয়া হয়নি।

সেটা হলো, চাল আমদানির এলসি উন্মুক্ত করে দেয়া। কিন্তু তা করতে পারার পেছনে আরেক শর্ত মানতে হয়। তা হলো, সরকারের হাতে যথেষ্ট বিদেশী মুদ্রা থাকতে হবে। এর ঘাটতি থাকলে হবে না। ব্যাপারটা আমরা তুলনা করতে পারি চুয়াত্তর সালের সাথে। সেবার দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ, কোষাগারে বিদেশী মুদ্রা ছিল না। কমিউনিস্ট পরিকল্পিত অর্থনীতির আরেক সাধারণ বৈশিষ্ট্য যে, তারা সবসময় বিদেশী মুদ্রার বিপুল অভাবে থাকে। ফলে সে সময় খাদ্য আমদানি উন্মুক্ত হওয়া দূরে থাক, আমদানির এলসি পর্যন্ত খুলতে দেয়া যায়নি। এখানে ‘উন্মুক্ত’ বলতে যে নিয়মিত চাল আমদানিকারক নয় তাকেও আমদানির এলসি খুলতে দেয়া। যে-ই আগ্রহী তাকেই এলসি খুলতে দেয়া হয়েছিলÑ এটাই ছিল ক্রাইটেরিয়া। কেন? তাতে কী সুবিধা পাওয়া গিয়েছিল?

যখনই আমাদের দেশে চালের অভাব হয় তখন পড়শি রাষ্ট্রগুলো সরকারি পর্যায়ে চাল বেচতে আর দরদাম ঠিক করতে নানা গড়িমসি করে, সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি করে থাকে। আর এসব বাধা উপেক্ষা করার ভালো উপায় হলো, আমাদের ব্যক্তি ব্যবসায়ীদের দিয়ে ওদের ব্যক্তি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দ্রুত চাল কিনে আনা। এ ছাড়া কম দামে তারা চাল আমদানি করতে পারেন। ব্যক্তি ব্যবসায়ীরা যদি প্রতি টন ৩৮৪ ডলারে আনেন, তবে সরকারি পর্যায়ে এর দাম ৪৫০ ডলারের কম হবে না। এসব বাধা টপকানোর সবচেয়ে ভালো মেকানিজম হলো, চাল আমদানির এলসি উন্মুক্ত করে দেয়া। ২০০৭ সালে তো ভারতের সরকারি পর্যায়ে প্রতিশ্রুতি দেয়া পাঁচ লাখ টন চাল আজও আনতে দেয়া হয়নি। সব চালই আনা সম্ভব হয়েছিল ব্যক্তিপর্যায়ে। সেটাও ভারত সরকার একপর্যায়ে বন্ধ করে দিয়েছিল কাস্টমসের নতুন আরোপিত নিষেধাজ্ঞায় যে সার্কুলারে বলা হয়েছিল, ১০০০ ডলারের নিচে কোনো এলসির রফতানি ছাড়পত্র থাকবে না।

২০০৭ সালের দ্বিতীয় বেঞ্চমার্ক সিদ্ধান্ত ছিল নতুন চালের সংগ্রহমূল্য প্রসঙ্গে। এর আগে বোরো ধানের সরকারি সংগ্রহ মূল্য ২১-২২ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। চার মাসের মধ্যে বোরো ধান উঠতে শুরু করে। আর ওইবারই প্রথম থেকেই কোনো দ্বিধা না রেখে সংগ্রহমূল্য এক লাফে ২৮ টাকা করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য একই। মজুদদার বা চালের মিলারদের চেয়ে বড় ক্রেতা হিসেবে বাজারে প্রবেশ করা এবং তাদের হারিয়ে দিয়ে মুখ্য ক্রেতা হওয়া। একটা তুলনা করা যাক। এবারের বোরো চাল ক্রয় শুরু হয়েছিল বিগত মে মাসের শুরু থেকে, লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত লাখ টন। ২৫ জুন পত্রিকার রিপোর্ট হলো, সংগ্রহ অভিযান শুরুর পর এক মাস ২৫ দিন পার হয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার এক শতাংশ চালও সংগ্রহ করা যায়নি। কেন? কারণ, ধানের সংগ্রহমূল্য করা হয়েছিল ২৪ টাকা। এটা খুব কম। আসলে সংগ্রহমূল্য কম না বেশি, তা অনুমানের পেছনে আরেকটা ফ্যাক্টর আছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেশের উৎপাদিত চালের কম দাম পড়ে আমদানি চালের চেয়ে। কিন্তু আমাদের চালের ‘বিকল্প বাজারব্যবস্থা’ কোনো বছর ফেল করার অর্থ হলো, ওই বছর ব্যক্তিপর্যায়ে চাল আমদানি করতে দেয়া হয়েছে। এর ফলে ওই বছর স্থানীয় উৎপাদন খরচ নয়, বরং আমদানির মূল্যই নির্ধারক হয়ে যায় স্থানীয় চাল-ধান কী দামে বেচাকেনা হবে, তার অর্থাৎ তখন গত বছরের দামের চেয়ে বেশি হয়ে যায় চালের দাম। এই বিচারে ৩৪ টাকা চালের সংগ্রহমূল্য কম বলে বিবেচিত হয়েছে। এটা সম্ভবত কমপক্ষে ৩৬ টাকা হওয়া উচিত ছিল। অর্থাৎ সরকারের গুদামে মজুদ কম বলে আগ্রাসী দাম অফার করে বাজারে ঢুকতে হবেÑ এই নীতি সরকার অনুসরণ করেনি। এমনকি স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করতে অক্ষম হলে তো তাকে নিজ সংগ্রহমূল্যের চেয়েও বেশি দামে আমদানি করতে হবে চাল। এই বিচারে আগেই সংগ্রহমূল্য বেশি অফার করে রাখাটাই স্বাভাবিক হতো। অথচ সেটা সরকার করেনি।

তৃতীয়ত, এর আগে কখনো চালের আমদানি শুল্ক কার্যকর ছিল বলে জানা যায় না। তবে অযথা ব্যক্তির আমদানি ঠেকাতে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রাখা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যখন আমদানি ছাড়া উপায়হীন অবস্থা হয়ে গেছে, তখন শুল্ক কমাতে দ্বিধা ও দেরি করানো অদক্ষতা ও অযোগ্যতার প্রমাণ। এটাও এবার চালের দাম বাড়ার একটা কারণ।
চাল ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম দাবি করেছেন দেশে চালের কোনো সঙ্কট নেই এবং সারা দেশে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রায় এক কোটি টন চাল আছে। অবশ্য চালের সঙ্কট আছে। কারণ ব্যবসায়ীদের কাছে যে পরিমাণই থাকুক, সরকারের গুদামে ১০-১৪ লাখ টন খাদ্য মজুদ থাকতে হয়। আর একমাত্র তাতেই এই ‘বিকল্প বাজারব্যবস্থা’ কার্যকর থাকার কথা। কিন্তু তা রাখতে মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতা, এই সঙ্কটের দায় মন্ত্রণালয় নিতে হবে।
এই বিচারে আমাদের চালের ‘বিকল্প বাজারব্যবস্থা’ চালানোর ক্ষেত্রে বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী ব্যর্থ ও অযোগ্য। সে তুলনায় আগের খাদ্যমন্ত্রী (হাসিনার প্রথম পাঁচ বছরের) ড. আবদুর রাজ্জাক সফল ছিলেন। কারণ তিনি সিস্টেমটা বুঝেছিলেন।
লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas1958@hotmail.com

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/254562