২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৯:১৮

বিদ্যুৎ রফতানিতে কর বসাচ্ছে ভারত

বাংলাদেশে দাম বাড়বে


বিদ্যুৎ রফতানির ক্ষেত্রে কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। বর্তমানে বাংলাদেশ ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে ভারত থেকে। ভবিষ্যতে ভারত থেকে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। ভারত বিদ্যুৎ রফতানিতে কর বসালে বাংলাদেশকে বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কিনতে হবে। ফলে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে।
বিদ্যুৎ রফতানির ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা করেছে ভারত। এ নীতিমালায় বিদ্যুৎ রফতানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ করারোপের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশে আদানির বিদ্যুৎ রফতানি বেলায় নতুন এ নিয়ম প্রয়োগ করা হতে পারে। তবে বর্তমানে যে ৬৪০ মেগাওয়াট আমদানি
হচ্ছে, এখানে এই কর কার্যকর হবে না।
এই কর নীতিমালা আমদানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ সরকার। কারণ, এখন ভারত থেকে যে বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে, তার ওপর কোনো কর দিতে হয় না। ফলে কিছুটা হলেও কম দামে এটা কেনা যায়। নীতিমালা কার্যকর হলে ভবিষ্যতে সব কাস্টমস ডিউটি, ভ্যাট ও কর দিতে হবে। বাংলাদেশে ভারতের যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেগুলো ভারতীয় কোম্পানি ও সংস্থাগুলো কর অবকাশ সুবিধা ভোগ করছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় দুই দেশের বিদ্যুৎ সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ওই বৈঠকে ভারতের বিদ্যুৎ রফতানি নীতিমালা সংশোধন করে কর মওকুফের দাবি তোলা হবে।
ভারতের বড় শিল্প গ্রুপ আদানি ঝাড়খন্ডে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। সেখান থেকে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট আমদানি করবে। সম্প্রতি মন্ত্রিসভা কমিটি আদানির এই বিদ্যুৎ আমদানির প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। বিদ্যুৎ কেনার দামও চূড়ান্ত। প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ছয় টাকা ৮৯ পয়সা ধরে বাংলাদেশ ২৫ বছর আদানির বিদ্যুৎ কিনবে। বিদ্যুতের এই দর ভারতের সরকারি-বেসরকারি খাতের আমদানি করা বিদ্যুতের চেয়ে বেশি। এর ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক্ককর যুক্ত হলে ইউনিটপ্রতি ১ দশমিক ০৩৯ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হবে। এতে করে বিদ্যুতের দাম বেড়ে ইউনিটপ্রতি দাঁড়াবে ৭ দশমিক ৯৭ পয়সা।
এদিকে, বিদ্যুৎ উম্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভারতের আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বাণিজ্যের নতুন নীতিমালার কারণে দেশটির খোলাবাজার থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার দরপত্রের খোলার তারিখ সাতবার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ভারতের সরকারি মালিকানাধীন এনটিপিসি ও বাংলাদেশের পিডিবির বাস্তবায়নাধীন রামপাল প্রকল্প, ভারতীয় গ্রুপ রিলায়েন্সের এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনাল এবং শাপুরজি পালনজির ভোলা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দেশটির বেসরকারি সংস্থাগুলোর একাধিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সব সম্পূরক শুল্ক্ক ও অন্যান্য শুল্ক্ক থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। শুধু তাই নয়, রামপাল প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত এনটিপিসির লভ্যাংশ বিনা মাশুলে নিজ দেশে ফেরত নিতে পারবে এনটিপিসি।

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সার্ক এনার্জি কোঅপারেশন ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি ও বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক গ্রিড সংযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তিতে এ অঞ্চলের বিদ্যুতের মুক্ত বিনিময়ের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভারত তার বিদ্যুৎ রফতানির ক্ষেত্রে কর-শুল্ক্ক আরোপের নীতিমালা করেছে, যা আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে।

http://www.samakal.com/todays-print-edition/tp-last-page/article/17094071