২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৯:১৬

বেড়েছে আটার দামও

চালের বাজারে অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে আটা-ময়দার দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি চালের দাম বৃদ্ধির পরে সব কোম্পানির খোলা ও প্যাকেটজাত আটা-ময়দার দাম বেড়েছে। এই সময়ে আটা ও ময়দার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বিভিম্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব কোম্পানির আটা ও ময়দার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বাজারে তীর, বসুন্ধরা, ফ্রেশ ও এসিআইসহ বিভিম্ন ব্র্যান্ডের আটা-ময়দা বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানের খোলা আটা প্রতি কেজি ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এ মাসের শুরুতে ছিল ২৩ থেকে ২৫ টাকা। বিভিন্ন কোল্ফপানির প্যাকেটজাত আটা ২৯ থেকে ৩০ টাকা ছিল। তা এখন বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকায়। এ ছাড়া তীর ব্র্যান্ডের লাল আটার কেজি এখন ৪২ টাকা।

একইভাবে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকার খোলা ময়দা এখন ৩৮ থেকে ৪০ টাকা হয়েছে। কোম্পানিগুলোর বিভিম্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, এক মাসে আটার দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশ। সংশিল্গষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, গম আমদানি বাড়লেও আটার দাম কমেনি উল্টো বেড়েছে। চালের দাম বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে আটা ও ময়দার দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

টাউন হলের তাহের স্টোরের খুচরা ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির পরে আটার বেচাকেনা কিছুটা বেড়ে ছিল। এর পরপরই কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে দেয়। চালের দাম বৃদ্ধির কারণেই আটা ও ময়দার দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে চালের বাজারে অস্থিরতার সুযোগে গমের দামও বেড়েছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে আমদানিকারক ও পাইকারি পর্যায়ে পণ্যটির দাম মণপ্রতি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গমের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে আটা-ময়দারও দাম বেড়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত এক পণ্যের দরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের গড় দর ছিল ২০২ ডলার। গত আগস্টে তা ৩১ ডলার কমে ১৭১ ডলারে লেনদেন হয়েছে। যেখানে ২০১৪ সালে দর ছিল ২৪৫ ডলার থেকে ২৮৪ ডলার। এর পরের বছরগুলো থেকে এ পর্যন্ত ২০০ ডলারের কাছাকাছি ছিল।

মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মনির হোসেন জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কম থাকলেও দেশে চালের দর বৃদ্ধিতে গমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। গমের দর মণে ৫০ টাকা বাড়লেও কোম্পানিগুলো খোলা আটা ও ময়দার দাম বস্তাপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে। এ কারণে পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে।

আটা তৈরির উপযোগী আগে প্রতি মণ গমের দাম ছিল ৭৬০ থেকে ৭৭০ টাকা। বর্তমানে তা ৮১৫ থেকে ৮২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ময়দা তৈরির গমের দাম ছিল ৯৬৫ থেকে ৯৭০ টাকা। বর্তমানে তা ১ হাজার ১৫ থেকে ১ হাজার ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বাজারে গমের কোনো সংকট না থাকলেও আমদানিকারকরা নানা অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

আটা-ময়দার পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা আটার দাম ছিল ১ হাজার ৫০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ২১ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ২৬ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ৫০ কেজি ওজনের এক বস্তা ময়দার দাম ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকা। এ হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ২৬ টাকা। বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৮০ টাকায়। এ হিসাবে প্রতি কেজি ময়দার দাম পড়ছে প্রায় ৩২ টাকা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৬ আগস্ট থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ এক মাসে পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টনের বেশি গম বিশ্বের বিভিম্ন অঞ্চল থেকে দেশে এসেছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা ১০ লাখ ৪৭ হাজার টন গম আমদানি করেছেন।

http://www.samakal.com/economics/article/17091469