ধানমণ্ডি পুরাতন ১৫ নম্বর সড়কের এমনই দশা।
২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৯:১২

গর্ত কাদাপানিতে চরম ভোগান্তি

পশ্চিম ধানমণ্ডি নিবাসীদের এখন চরম দুর্ভোগ চলছে। কারণ পুরো এলাকার মানুষের চলাচলের প্রধান রাস্তাগুলো কেটে ফেলা হয়েছে।
গর্ত আর কাদাপানিতে একেবারে নাজেহাল অবস্থা সবার। স্থানীয় বাসিন্দা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা নিলুফার জেসমিন জানালেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় তাঁর গাড়ি প্রায় ৩০ মিনিট একচুলও নড়েনি জিগাতলা পোস্ট অফিসের সামনে থেকে। সম্প্রতি জিগাতলা নতুন সড়ক ও পোস্ট অফিস থেকে যে রাস্তাটি জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের দিকে গেছে সেটিতে অসহ্য যানজটে পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। এর কারণ হলো ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কটি কেটে ফেলা হয়েছে। পয়োনিষ্কাশনের জন্য মোটা পাইপ বসাতে প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ব্যস্ততম রাস্তাটি কেটে ফেলার কারণে পশ্চিম ধানমণ্ডির মানুষ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।

গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ধানমণ্ডি ১৫ বাসস্ট্যান্ড, রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, শেরেবাংলা রোড হয়ে ট্যানারি মোড়, জিগাতলা নতুন রাস্তা, জিগাতলা পোস্ট অফিস ও বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার মানুষ দুটি সড়ক কাটার কারণে ভয়াবহ যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকছে গাড়ি বা রিকশাতে। এর একটি হলো ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর থেকে রায়েরবাজার শেরেবাংলা সড়ক অন্যটি মিতালি রোড। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার থেকে কাটা শুরু হয়েছে ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর সড়কটি। আর তিন মাস আগে ওয়াসার কাজ শেষ হলেও মিতালি রোডটি এখনো মেরামত না করায় সেটি ব্যবহার করতে পারছে না এলাকাবাসী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক্সকাভেটর দিয়ে ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কেয়ারি প্লাজা থেকে রাস্তাটি কাটার কাজ চলছে। গতকাল পর্যন্ত এই খোঁড়াখুঁড়ি গিয়ে পৌঁছেছে নর্দান মেডিক্যাল কলেজের সামনে পর্যন্ত। গত বৃহস্পতিবার থেকে পশ্চিম ধানমণ্ডির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক কাটা হয়েছে মাত্র শ-তিনেক গজের মতো। এই সড়কটি রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় পর্যন্ত আরো অন্তত তিন হাজার গজ কাটতে হবে। এ কাজে ওয়াসার ঠিকাদারদের কত দিন লাগবে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। আর কাটার পর পয়োনিষ্কাশনের লাইন বসানোর কাজ শেষ হলে রাস্তাটি ঠিক হবে কত দিনে সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই।
শেরেবাংলা রোডের মদিনা মসজিদের সামনের বাসিন্দা আকমল মৃধা জানান, ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর দিয়ে প্রতিদিন তাঁর মতো হাজারো মানুষকে চলাচল করতে হয়। এ অঞ্চলের মানুষ সাতমসজিদ রোডে যেতে এই সড়ক ব্যবহার করে। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবাই এখন জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড হয়ে যাতায়াত করছে। এ কারণে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড পৌঁছতে কখনো কখনো এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগছে। সকাল থেকে শুরু হওয়া যানজট লেগে থাকে রাত ১২টা পর্যন্ত। ওয়াসা খুব ধীরগতিতে রাস্তাটি কাটছে, ফলে অনেক দিন লেগে যেতে পারে কাজ শেষ হতে।

গতকাল সরকারি ছুটির দিনে গিয়ে জিগাতলা পোস্ট অফিস থেকে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড এবং গাবতলা মসজিদ রোড ও নতুন রাস্তা থেকে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গলির মধ্যে কায়সার সুইটমিটের মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই রায়েরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থেকে জিগাতলা নতুন সড়ক ও সিকদার বাড়ি পর্যন্ত কোমরসমান পানি জমে। এতে এলাকাবাসীর ভোগান্তির সীমা থাকে না। এলাকার প্রতিটি সড়কের ৮০ শতাংশই ভাঙা। কোথাও কোথাও বিটুমিন ও ইটের খোয়ার অস্তিত্ব নেই। এ পরিস্থিতিতে ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর সড়কটি ওয়াসা কেটে ফেলায় এলাকার মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. তাহের খান বলেন, ‘এই সড়ক দীর্ঘদিন ধরে মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই কোমরপানি জমে যায়। এখন নতুন করে উন্নয়নকাজের ফলে ভোগান্তির মাত্রা বেড়েছে। এই সড়ক উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মধ্য পড়ায় কাজের সমন্বয়েও কিছুটা ঘাটতি আছে। তবে আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। ’
তিন মাস হলো রাস্তা কাটাই পড়ে আছে : তিন মাস আগে ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন লাইনের কাজ শেষ হলেও মিতালি রোডটি এখনো মেরামত করা হয়নি। মাত্র ৫০০ গজের এই সড়কের দুই পাশের বাসিন্দারা গাড়ি ব্যবহার করতে পারছে না। বৃষ্টি হলে হেঁটেও এই সড়কে চলাচল করা যায় না।
তিন বছর ধরে সড়কে পানি : বৃষ্টি এমনকি শীতকালেও জিগাতলা নতুন সড়কের অর্ধেকই থাকে জলমগ্ন। তিন বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। গতকাল সকালে নতুন সড়কের বাসিন্দা আসিফ হাসানের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, পশ্চিম ধানমণ্ডির সব রাস্তারই বেহাল। জিগাতলা নতুন রাস্তায় তিন বছর ধরে হাঁটুপানি জমে থাকে, কিন্তু ওয়াসা এর কোনো সুরাহা করেনি। দুর্গন্ধযুক্ত এই পানির মধ্যেই এলাকার মানুষকে বসবাস করতে হচ্ছে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/09/24/546276