২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৯:০৬

ফুটওভার ব্রিজের এস্কেলেটর বন্ধ দুর্ভোগে পথচারীরা

রাজধানীতে পথচারীদের সুবিধার্থে ফুটওভার ব্রিজে বসানো হয়েছিল এস্কেলেটর বা চলন্ত সিঁড়ি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই চলন্ত সিঁড়ি আর চলে না। যেখানে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের আগ্রহী করে তুলতে এ উদ্যোগ সেখানে বন্ধ হয়ে পড়ায় আগ্রহেও পড়েছে ভাটা। ফলে অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখন রাস্তা দিয়েই পার হচ্ছেন। চলন্ত সিঁড়ির দুই পাশের গেটই তালাবদ্ধ। বসছে ভবঘুরে ও হকারদের আড্ডার আসর। সন্ধ্যা নামলেই মাদকসেবী ও পতিতাদের আনাগোনা বেড়ে যায় বহুগুণ। একদিকে এস্কেলেটর বন্ধ অন্যদিকে ব্রিজের মধ্যে হকার ও ভিক্ষুকদের উৎপাতে সাধারণ পথচারীদের পড়তে হচ্ছে চরম বিড়ম্বনায়। অন্যদিকে এস্কেলেটর বন্ধ থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এর বিভিন্ন পার্টস। ক্ষতি হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদের। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বনানী সৈনিক ক্লাব এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দুটি ফুটওভার ব্রিজে সংযুক্ত করে কোটি টাকার এস্কেলেটর। ওভারব্রিজে এস্কেলেটর বসানো হয়েছিল পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে আগ্রহ, সচেতনতা বৃদ্ধি, বয়স্কদের কষ্ট লাঘব করার লক্ষ্যে। সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর ফুটওভার ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ির সামনের গেট বন্ধ। গেট টপকিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা যায় সেখানে কয়েকজন গল্প করছেন। অনেক পথচারী চলন্ত সিঁড়ির সামনে এসে বন্ধ দেখে বিপরীত পাশের পায়ে ওঠার সিঁড়ি ব্যবহার করছেন। অনেকে আবার রাস্তা দিয়েই পার হচ্ছেন। একই অবস্থা বনানী সৈনিক ক্লাব ফুটওভার ব্রিজের চলন্ত সিঁড়ির। এটি বন্ধ চালুর কিছুদিন পর থেকেই। এয়ারপোর্টের ওভারব্রিজ থেকে এখানে পথচারী চলাচল তুলনামূলক কম। মাঝে একবার চালু হলেও তা আবার বন্ধ করে দেয়া হয়। বিমানবন্দর ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন আবুল নামের এক দোকাদার জানান, এ ব্রিজটি নতুন করে তৈরি করা হয়। চালুর কিছু দিন পর বন্ধ করে দেয়া হয়। রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার ব্যয় বহন করতে না পেরে নাকি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিমানন্দর ফুটওভার ব্রিজের নিচেই সিগন্যালে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন হাবিব নামে এক ট্রাফিক পুলিশ। তিনি মানবজমিনকে বলেন, চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ থাকায় পথচারীরা বেশিরভাগ সময় রাস্তা দিয়ে পার হন। আগের থেকে এ সিগন্যালে জ্যাম বহুগুণে বেড়ে গেছে। চলন্ত সিঁড়ি বন্ধ না হলে পথচারীদের চাপ কম থাকত রাস্তায়। ফুটওভার ব্রিজের গেট বন্ধ দেখে বিরক্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছিলেন এক পথচারী। তিনি মানবজমিনকে জানান, পথচারীদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এত টাকা ব্যয় করছে যা কোনো কাজে আসছে না। দেখেন আগের ব্রিজ ভেঙে ডিজিটাল করলো, তা আবার চালুর পর থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে। একদল অসাধু কর্মকর্তা সরকারকে ভুলভাল বুঝিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের তো কোনো উপকারে আসেনি বরং কোটি কোটি টাকা সরকারের লস। বনানীর এস্কেলেটর বন্ধ দেখে বাবুল নামে এক পথচারী হেঁটে ওঠার সিঁড়ি দিয়ে পার হচ্ছিলেন। তিনি বলেন, এখানে কী দরকার ছিল এমন ডিজিটাল ওভারব্রিজ যা চালু রাখতে পারবে না। বিমানবন্দর ওভারব্রিজে এস্কেলেটর সরবরাহ করে হরিজন টেকনো লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি। এর সহকারী ব্যবস্থাপক আহসান হাবীব জানান, এয়ারপোর্টের ফুটওভার ব্রিজের এস্কেলেটর তারা আটলান্টিক মেরিন নামে একটি এজেন্টের মাধ্যমে সরবরাহ করেছেন। সে হিসেবে একবছর ফ্রি সার্ভিস দেয়ার কথা ছিল তা শেষ হয়েছে গত ১৭ই আগস্ট। তবে রক্ষণাবেক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তাদের ছিল না। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটা বন্ধ রয়েছে। তাদের সঙ্গে নতুন করে কোনো চুক্তিও হয়নি। তাদের সঙ্গে যে মেয়াদ শেষ হয়েছে তা আটলান্টিক মেরিনের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনকে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে বনানীর ফুটওভার ব্রিজের এস্কেলেটর সরবরাহ করেছে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান। তবে এস্কেলেটর সার্ভিসের দায়িত্ব তারা একবছর ছিলেন। কিন্তু ওই এক বছরের বিল এখনো পাননি বলে জানান। তিনি জানান, বনানী ব্রিজের ‘হ্যান্ডেল ড্রাইভ’ পার্টস নষ্ট হয়ে আছে। ৫০ হাজার টাকা দামের দুটি নতুন পার্টস আমরা লাগালেও তার বিল সিটি করপোরেশন এ পর্যন্ত দেয়নি। যে কারণে বাকি পার্টসগুলো লাগাতে পারছেন না। ফুটওভার ব্রিজ দুটির এস্কেলেটর দায়িত্বে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আরিফকে বার বার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=84378