২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৮:৫৯

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি

কাল থেকে গণশুনানি

আবারো বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। আগামীকাল ২৫শে সেপ্টেম্বর থেকে দাম বাড়াতে কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি শুরু হবে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ইতিমধ্যে কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষ করেছে। পাইকারিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৬ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। এদিকে গত ৬ই সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের দাম ৩০ থেকে ৩৫ পয়সা বাড়তে পারে। তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ। বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে আগামী এক বছরে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। জুন থেকে এই ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু হবে। বিইআরসি আইন, ২০০৩ অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে বিইআরসি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে। ২০১০ সালের ১লা মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ১লা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে পাঁচবার এবং খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।

আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, দাম বাড়ানোর বর্তমান প্রক্রিয়া অযৌক্তিক। আমরা গণশুনানিতে দাম কমানোর প্রস্তাব নিয়ে যাচ্ছি। কারণ, বিইআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথ অনুসরণ করছে না, বরং বেশি দামের তেলভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফার্নেস তেলের দাম বাজারদর অনুযায়ী করে দিলেও উৎপাদন ব্যয় অনেকখানি কমত। তবুও করা হচ্ছে না। পদ্ধতিগত লোকসান কমিয়ে মুনাফা বাড়ানোর কার্যক্রমও যথেষ্ট সফল নয়। এগুলো করা হলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না, বরং কমানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীতে যেখানে দাম কমানোর কৌশল নেয়া হয়, সেখানে আমাদের দেশে সবকিছুতেই দাম বাড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করা হয়। ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

সূত্র জানায়, এবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পাইকারি বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭২ পয়সা (প্রায় ১৫ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। আর বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে ৬ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলোর দাবি, প্রতিবারই পাইকারির তুলনায় খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হয়েছে কম। ফলে তাদের পক্ষে কোম্পানি চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বিইআরসিতে ২৫শে সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় পিডিবির প্রস্তাবের উপর পাইকারি (বাল্ক) মূল্য পরিবর্তনের গণশুনানি এবং ২৬শে সেপ্টেম্বর খুচরা মূল্যহার পরিবর্তনের ওপর গণশুনানি হবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)-এর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি ২৭শে সেপ্টেম্বর, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) ২৮শে সেপ্টেম্বর, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটডের (ডেসকো) ২রা অক্টোবর, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) ৩রা অক্টোবর এবং নর্থ ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (নওজোপাডিকো) ৪ঠা অক্টোবর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে কাওরান বাজার টিসিবি মিলনায়তনে। পাইকারি দাম বাড়ানোর জন্য পিডিবির দেয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে সরবরাহ করতে গড়ে ব্যয় হয় ৫ টাকা ৫৯ পয়সা। কিন্তু বর্তমানে প্রতি ইউনিটের দাম নির্ধারিত আছে ৪ টাকা ৮৭ পয়সা। এখন দাম বাড়িয়ে এই ৭২ পয়সার ব্যবধান ঘোচানো দরকার। না হলে পিডিবির পক্ষে এই অর্থের সংস্থান সম্ভব নয়। গ্রাহক পর্যায়ে ডিপিডিসি ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ, ডেসকো ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ওজোপাডিকো ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ, আরইবি ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং পিডিবি ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া দু-একটি বিতরণ কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে ডিমান্ড চার্জ ও সার্ভিস চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বলে বিইআরসির সূত্র জানায়। বর্তমানে কোম্পানিভেদে প্রতিটি মিটারে প্রতি মাসে ৩০ টাকা পর্যন্ত ডিমান্ড চার্জ ও ২০ টাকা পর্যন্ত সার্ভিস চার্জ ধার্য আছে। পিডিবির সূত্র বলেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে তেলও (ফার্নেস অয়েল) কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য বিক্রয়মূল্যের চেয়ে বেশি পড়ছে। তাই দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই।
http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=84470