২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৮:৪৮

আতপ চালে ক্রেতার সাড়া কম

 ট্রাকভর্তি পণ্য থাকলেও ক্রেতাদের ভিড় নেই। ছবিটি সূত্রাপুর কাঠেরপুল এলাকা থেকে তোলা। ছবি: লুৎফরজামানকোথাও আগের মতো ক্রেতাদের ভিড় নেই। কিছু ট্রাকে চাল-আটা প্রায় পুরোটা রয়ে গেছে। এ ছাড়া যেখানে নিয়মিত খোলাবাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) করার ট্রাক দেখা যেত, সেখানেও দেখা মেলেনি এসব ট্রাকের। এর কারণ ডিলারদের চাল বিক্রিতে অনীহা এবং আতপ চালের কারণে ক্রেতাদের অনাগ্রহ।
আজ শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ওএমএস কার্যক্রম ঘুরে দেখা গেছে, ডিলাররা দিনের শুরুতে যে পরিমাণ চাল ও আটা এনেছিলেন, এর অর্ধেকেরও বেশি রয়ে গেছে। ক্রেতাদের ভিড় নেই। কিছু ট্রাকে নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে, তা হলো শুধু চাল বিক্রি করা হবে না। অর্থাৎ চাল কিনতে চাইলে আটাও কিনতে হবে। এর কারণেও বিক্রির পরিমাণ কমেছে। অথচ এমন কোনো নিয়ম নেই।

জুরাইন বাজার এলাকার ডিলার সায়েম খন্দকার। তাঁর ওএমএস কার্যক্রম খাদ্য অধিদপ্তরের ঢাকা-২ (ডি-২) অঞ্চলের আওতাভুক্ত। তাঁর ট্রাকে শুধু চাল মেলে না। অর্থাৎ পাঁচ কেজি চাল কিনলে পাঁচ কেজি আটা কিনতে হবে। এই শর্তের কারণে অনেক ক্রেতাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তার প্রমাণ পাওয়া গেল তাঁদের বেচাকেনার হিসাবের ওপর। তাঁরা সারা দিনে ১১০ জন ক্রেতার কাছে ৮০০ কেজি চাল বিক্রি করেছেন। আর ১০০ জন ক্রেতার কাছে আটা বিক্রি করেছেন ৮০০ কেজি। এই শর্ত না হলে তাঁদের পণ্য বিক্রি হয়ে যেত আরও আগে।
এই ট্রাকের সামনে অবস্থান করার সময় একজন ক্রেতা এলেন পাঁচ কেজি আটা কিনতে। ট্রাকের একজন কর্মচারী বললেন, শুধু আটা বিক্রি করা যাবে না। এর কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকার থেকে এক টন চাল ও এক টন আটা দেওয়া হয়। শুধু আটা বিক্রি করলে চাল থেকে যায়। এ কারণে একটি পণ্য বিক্রি করা হয় না।
শর্ত দেওয়ার কারণে এবং আতপ চালের কারণে মানুষ ওএমএস চাল কিনছে না। সূত্রাপুর কাঠেরপুল এলাকার ওএমএস ট্রাকের সামনে কথা হয় রাজিয়া বেগম নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এমনিতে পাবলিক আতপ চাউল খায় না। তার ওপর আবার দাম বাড়ছে। চাউল বিক্রি হইব কেমনে?’
গত রোববার খোলাবাজারে প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু হয়। এর আগে প্রতি কেজি চালের দাম ছিল ১৫ টাকা এবং আটার কেজি ছিল ১৭ টাকা। আটার দাম অপরিবর্তিত থাকলেও চালের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ওএমএস ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা একসঙ্গে পাঁচ কেজি চাল ও পাঁচ কেজি আটা কিনতে পারবেন। আর প্রত্যেক ডিলার প্রতিদিন এক টন চাল ও এক টন আটা কিনতে পারবেন।

খোলাবাজারে চাল বিক্রি ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলমগীর সৈকত বলেন, আজ ঢাকা শহরে ওএমএস ট্রাকের চাহিদা ছিল ১৩১টি। ক্রেতাদের অনাগ্রহের কারণে চাল বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে। এতে ডিলাররা ট্রাকের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। আজ ঢাকা শহরে ৪০টি ট্রাকে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়েছে।

মানুষ কেন চাল কিনছে না—এ প্রশ্নের উত্তরে আলমগীর সৈকত বলেন, প্রথমত চালের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে এবং ঢাকার লোকজন আতপ চাল খাওয়ায় অভ্যস্ত না হওয়ায় সাড়া কম পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া যে চাল বিক্রি করা হচ্ছে, তা অনেক পুরোনো চাল।
সূত্রাপুর কাঠেরপুল ও পোস্তগোলা ব্রিজ এলাকার ওএমএস ট্রাকেও ক্রেতাদের ভিড় কম ছিল। শুধু দয়াগঞ্জ জেলেপাড়া এলাকার ট্রাকে চাল বিক্রি ভালো হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার অনেক জায়গায় যেসব ট্রাক নিয়মিত চাল-আটা বিক্রি করে, সেসব স্থানে ট্রাক পাওয়া যায়নি। কাঁঠালবাগান ঢাল, তেজগাঁও এবং বাদামতলী এলাকায় কোনো ট্রাক পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া যেসব বিক্রেতা চাল-আটা বিক্রি করছেন, ক্রেতাদের চাহিদা না থাকার কারণে তাঁদের বেশির ভাগের মধ্যে অসন্তুষ্টি লক্ষ করা গেছে।

 

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1330156