২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, রবিবার, ৮:৩২

পাইকারিতে মোটা চালের দাম কমলেও খুচরা বাজারে প্রভাব নেই

পাইকারি বাজারে মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা কমলেও খুচরায় কোন প্রভাব নেই। পাইকারি বাজারে যে চালের দাম ৬০ টাকা কেজি, সেই চাল খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৬ থেকে ৬৭ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি, আগে যে চাল বেশি দামে কেনা আছে তা কম দামে বিক্রির কোনও সুযোগ নেই। তবে খুচরা বাজারে চালের দাম কমতে আরও সাত দিনের মতো লাগবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে ৫০ কেজি ওজনের প্রতিটি চালের বস্তায় দাম কমেছে একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা। ক্ষেত্র বিশেষে এখন অনেকেই বস্তাপ্রতি এ টাকা লোকসান দিয়ে চাল বিক্রি করছেন বলেও দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল শনিবার রাজধানীর কাওরান বাজার ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে কাওরান বাজারের জনতা রাইস এজেন্সির মালিক মো. আবু ওসমান ও চাঁদপুর রাইস এজেন্সির মালিক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, মোকামে আজ ৫০ কেজির সরু চালের বস্তার বাজার দর দুই হাজার নয়শ’ ৫০ টাকা, প্রতি বস্তায় পরিবহন ও অন্যান্য খরচ পড়ে প্রায় ৩০ টাকা। সবসহ বস্তাপ্রতি মোট দাম পড়ছে দুই হাজার নয়শ’ ৮০ টাকা। পাইকাররা বিক্রি করবে তিন হাজার টাকা বস্তা। সেই হিসেবে কেজি প্রতি দাম পড়ে ৬০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে কেজিপ্রতি ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হবে এই চাল। কাওরান বাজারের পাইকার ব্যবসায়ীদের দোকানে টাঙানো চালের দর।
এ দুই ব্যবসায়ী আরও জানান, রশিদের কাছ থেকে যে চাল গতকাল শনিবার পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনছেন দুই হাজার নয়শ’ ৫০ টাকায়, সেই চাল ১৫ দিন আগে বিক্রি হয়েছে দুই হাজার আটশ টাকায়। তবে মাঝখানে দাম বাড়ানোর পর সেই চালই তিন হাজার একশ’ ৫০ টাকা বস্তা দরে কিনতে হয়েছে।

অন্যদিকে, মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি কমেছে প্রায় আড়াইশ’ টাকা। আগে যে চাল পাইকারদের কাছ থেকে দুই হাজার ছয়শ’ ৫০ টাকায় কিনতে হয়েছে, সেই চাল এখন পাইকারি দোকানে বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার চারশ’ ৪০ টাকায়। সেই হিসেবে মোটা চাল এখন পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ৪৯ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে এ চালের দাম ৫২ থেকে ৫৩ টাকা।
কাওরান বাজারের রাসেল স্টোরের মালিক মনোয়ার হোসেন বলেন,রশিদ ও কিবরিয়ার সরু চালের বস্তার দাম মোকামে দুই হাজার নয়শ’ ৫০ টাকা। বস্তাপ্রতি দাম কমেছে দেড়শ’ টাকা। তবে পাইজাম ও ভারতীয় চাল বিক্রি করছি দুই হাজার চারশ’ টাকা বস্তা। পাইকারি বাজারে মোটা চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা। খুচরা বাজারে এই চাল বিক্রি হবে ৫১ থেকে ৫২ টাকায়।

মোটা চালের দামের ব্যাপারে পাইকার ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, দু’দিন আগেও প্রতি বস্তা বিক্রি করেছি দুই হাজার পাঁচশ’ ৫০ টাকায়। এখন বস্তাপ্রতি দেড়শ’ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করছি। সেই হিসেবে মোটা চালের দাম কমেছে কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা।
খুচরা বিক্রেতা জনি স্টোরের মালিক মো. শহীদুল্লাহ বলেন, যারা বেশি লাভ করার জন্য বেশি করে চাল কিনেছে তারা এখন কম দামে বিক্রি করবে। পাইকারি বাজারে চালের দাম কমেছে কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা। কিন্তু খোলা বাজারে এর তেমন প্রভাব নাই। মোটা চাল কেউ কেউ কিছু কমেও বিক্রি করছে, তবে খুচরা বাজারে সরু চালের দাম কমতে সময় লাগবে। এখনও আগের দামে বিক্রি হচ্ছে সরু চাল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে নাজির স্পেশাল এখনও বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা। আর বাছাই করা নাজির বিক্রি হচ্ছে ৭৬-৭৮ টাকায়। এদিকে বাংলামতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। আর কাটারিভোগ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়। অথাৎ সরু চালের দাম এখনও বার্তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, মোটা চালের দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে যে রকম চাপ রয়েছে সরু চালের ব্যাপারে ততটা চাপ নেই। আর এ কারনেই সরু চালের দাম কমেনি। ঢাকাসহ সব শহরের ৬০ ভাগের উপর মানুষই সরু চাল খেয়ে থাকেন। অথচ এ চাল নিয়ে সরকারের তেমন মাথা ব্যথা নেই। এ চালের দাম আদৌ কমবে কিনা কেউ বলতে পারে না।
সরেজমিনে পাইকারি বাজারের তালিকায় দেখা যায়, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৩ ও ৬৫ টাকা কেজি। বিআর-২৮ চালের দাম রকমভেদে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। স্বর্ণাপারি ৫০-৫২ টাকায়। মোটা আতপ চাল ৪২-৪৪ টাকায়, চিনিগুড়া ৮০-৮২ টাকায়।
মোটা চালের দাম কমলেও আটার দাম এখনও কমেনি। চালের দাম বৃদ্ধির কারনে বেড়েছে আটার দামও। কিন্তু চালের দাম কিছুটা কমলেও কমেনি আটার দাম। সরকার আটার দাম নিয়ে কোন কথা বলছে না। ব্যান্ডের সব ধরনের আটার কোম্পানিগুলো আটার গায়ের মূল্য ৬-৮ টাকা বাড়িয়ে ৩৫-৩৬ টাকায় বিক্রি করছে। কি কারনে আটার দাম বৃদ্ধির কথা হলো তা জানার কেউ নেই। আর এখন চালের দাম কমেছে কেন আটার দাম কমছে না তাও বলার কেউ নেই।
জানা গেছে, বিশ্ব বাজারে এখনও আটার দাম সবচেয়ে কম। তারপরেও কোন কারন ছাড়াই আটার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সারা দেশে অভিযান চালালেও আটার দাম নিয়ন্ত্রনে কোন পদক্ষেপ নেই। এতে করে ভোক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

গেন্ডারিয়ার রিকশা চালক আমিন বলেন,চালের দাম বেশি হওয়ার কারণে আটা খাওয়ার চিন্তা করছি। এখন থেকে খাদ্যভ্যার পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। কিন্তু তাতে কোন লাভ নেই। কোন কারন ছাড়াই আটার দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। অথচ সরকার নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। তাহলে আমরা গরিবরা আসলে যাব কোথায়। আর আমরা খাবই বা কি? আসলে ঢাকা শহরে আমাদের থাকারই অধিকার নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খোলা বাজারে ওএমএস’র মাধ্যমে মোটা আতপ চাল বিক্রি করলেও আটা তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। আর যে আটা পাওয়া যাচ্ছে তাও খাবার উপযোগী না। আর এ কারণে আটার দাম কমছে না।

http://www.dailysangram.com/post/300861