২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৮:২৪

নিখোঁজ চারজনেরই খোঁজ পাওয়া যায়নি

উদ্বেগের জীবনে কষ্টের পার্বণ

পূজা এসে গেছে। অন্যবার এ সময়ে কেনাকাটা নিয়ে ব্যস্ত থাকত পরিবারের লোকজন। কিন্তু এবার বাড়িতে আনন্দের লেশমাত্র নেই। কারণ এক মাস হতে চলল বাড়ির গৃহকর্তা অনিরুদ্ধ রায় অপহৃত হয়েছেন, এখনো তাঁর কোনো খোঁজ মেলেনি।
গত ২৭ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর গুলশানে সবার সামনে থেকেই তাঁকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন লোক। সিসি ক্যামেরায়ও সে দৃশ্য ধরা পড়েছে। এ রকম যানজটের শহরে জলজ্যান্ত মানুষটিকে ধরে নিয়ে মাইক্রোবাসটি কোথায় উধাও হয়ে গেল সে খবর এখনো বের করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরিবারটির দিন কাটছে ভয়ে আর আতঙ্কে।
গত মাসে রাজধানী থেকে নিখোঁজ চারজনেরই কোনো খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ এই চারজন হলেন বাংলাদেশে বেলারুশের অনারারি কনসাল ও ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়, বিএনপির নেতা ও ব্যবসায়ী সৈয়দ সাদাত, ২০-দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান এবং কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র ইশরাক আহমেদ। তাঁদের মধ্যে অনিরুদ্ধ ও সৈয়দ সাদাতকে মাইক্রোবাসে করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

পূজা শুরু হতে আর মাত্র তিন দিন। কিন্তু ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ রায়ের বাড়িতে নেই কোনো আনন্দ। অনিরুদ্ধর স্ত্রী শাশ্বতী রায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা এখন একরকম গৃহবন্দী। ওরা কোথাও খেলতেও যাচ্ছে না। বাড়ির আসল লোকটাই নেই, এখানে পূজার আর কী আয়োজন থাকবে বলুন।’
২৭ আগস্ট নিখোঁজ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুরেরও খোঁজ নেই। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হক বলেন, পুলিশ কাজ করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ছুটিতে কানাডা থেকে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে এসে ২৬ আগস্ট নিখোঁজ হন ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ২১ বছরের ইশরাক আহমেদ। এখনো তাঁর কোনো খোঁজ নেই। পরিবারটির ঈদ কেটেছে ভয়াবহ কষ্ট আর উদ্বেগ নিয়ে। ইশরাকের বাবা ব্যবসায়ী জামালউদ্দীন প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো না কোনো কার্যালয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি এখনো।

জামালউদ্দীন বলেন, ‘সবার কাছে যাচ্ছি। পুলিশের লোকেরা ওর ল্যাপটপসহ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছিল। তারা সব ফিরিয়ে দিয়ে বলছে ও খুব ভালো ছেলে। কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারছে না।’
এদিকে কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে মাত্র ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে একটি দলের মহাসচিবকে নিয়ে গেল, কে নিল আমরা কিছু জানি না।’
কল্যাণ পার্টি এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে এর জন্য সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে। কিসের ভিত্তিতে সরকারের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে জানতে চাইলে মেজর জেনারেল ইব্রাহিম বলেন, ‘এ রকম লোককে কে নেবে। আবার কেউ কোনো মুক্তিপণও দাবি করেনি। তাহলে বাকি থাকে একমাত্র রাজনৈতিক কারণ। কিন্তু আমাদের পক্ষে এসব বিষয়ে কোনো তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। কারণ কেউ দেখেনি কোত্থেকে আমিনুরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’
নিখোঁজ বিএনপির নেতা সৈয়দ সাদাতের পরিবারের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে মেজর জেনারেল ইব্রাহিমের। সৈয়দ সাদাতের বাবাও একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা। এ বিষয়ে মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘সাদাতকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আমি সবার আগে র্যা বের অফিসে গেলাম। কিন্তু কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না। কোনো দপ্তরে গেলে তারা কেবল বলে জানি না। এ কারণে আমিনুরের জন্য আমি কোনো দপ্তরে বা কারও কাছে যাইনি। বিষয়টি আমরা রাজনৈতিকভাবে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছি। ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে এ জন্য সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। আমরা কল্যাণ পার্টির পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি।’

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1329701