২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার, ৮:১৬

লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে দিশেহারা ক্রেতা

চালের লাগাম টেনে ধরতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে যাওয়ার পর পাইকারিভাবে দুই থেকে তিন টাকা কমলেও খুচরায় তার প্রতিফলন ঘটেনি। উল্টো চালকলে ধারাবাহিক অভিযানের ফল শুভ হবে না বলে ভীতি ছড়াচ্ছেন বিক্রেতারা। চালের দিকে সরকারের পূর্ণ মনোযোগের সুবাদে হু হু করে বাড়ছে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও। সবজির দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা। ফার্মের মুরগি বিক্রে হচ্ছে গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে। নিত্যপ্রয়োজনীয পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানে ব্যর্থ হয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছেন স্বল্প ও সীমিত আয়ের জনগণ।

রাজধানীর পুরানা পল্টনে কথা হয় রিকশাচালক আজিবরের সাথে। পল্টন মোড় থেকে শাপলা চত্বরের ভাড়া ৩০ টাকা চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, মান্ডার যে গ্যারেজে থাকি সেখানে ভাড়া বেড়েছে। রিকশার জমা আরো ২০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন গ্যারেজের মালিক। যে মহিলা খাবার সরবরাহ করেন তিনি এখন রোজ ১২০ টাকা করে নেন। এত দিন ১০০ টাকা দিয়ে তিন বেলা ভাত খেতাম। গরিব মানুষের কাছে ভাতই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে আজিবর বলেন, চালের দাম যেভাবে বাড়ছে, ভয়ে আছি মহিলা কোন দিন ভাতের দাম আরো বাড়িয়ে দেন কিনা। যানজটের কারণে সারা দিন রিকশা চালিয়েও টাকায় বরকত হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, আপনার কাছে বেশি ভাড়া মনে হলেও সব খরচ দেয়ার পর বউ-বাচ্চার জন্য তেমন কিছুই থাকে না।

রাজধানী ঢাকার বাদামতলী ও বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানোর পর থেকে পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আগে যেসব চাতালমালিক ফোন ধরতেন না এখন তারা নিজেরাই ফোন করে অনুরোধ করছেন চাল আনার জন্য। তবে পরিস্থিতি গুমোট হওয়ায় পাইকারি বাজারে ক্রেতা কম। খুচরা বিক্রেতারা বাজারে আসছেন না। দাম আরো বাড়বে এমন আশায় যারা মজুদ করেছেন, এখন তারা সে চালই বিক্রি করছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য সময় নিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা।
বাবুবাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতা মেসার্স লক্ষ্মী ভা ারের মালিক নূর মোহাম্মদ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, পাইকারি বাজারে এখন সব ধরনের চালের দামই কমতির দিকে। তবে ক্রেতা নেই, বেচাবিক্রি খুবই খারাপ। তিনি জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা কমে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৭ থেকে ৫৯ টাকায়। নাজিরশাইল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা, আটাশ ৫২ থেকে ৫৩ টাকা, ঊনত্রিশ ৫০ থেকে ৫২ টাকা ও স্বর্ণা ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে কম দামি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকায়। পাইকারি বিক্রেতারা দাম কমালেও সব চালকলের মালিক এখনো দাম কমাননি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার যেসব চালকলে বা গুদামে অভিযান চালিয়েছে তারাই কমিয়েছে। বাকিরা এখনো আগের দামেই বিক্রি করছেন।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরাবাজারে গতকালও প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৬৬ টাকায়, নাজিরশাইল ৬৬ থেকে ৭০, আটাশ ৫৫ থেকে ৫৬, ঊনত্রিশ ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায়, স্বর্ণা ৫২ থেকে ৫৪ টাকায় এবং সবচেয়ে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৬ টাকায়। দোকানে যে চাল মজুদ আছে সেগুলো অধিক দামে কেনা দাবি করে তারা জানান, বাড়তি দামে কেনা চাল বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে যখন কম দামে চাল কেনা হবে তখন খুচরা বাজারেও দাম কমবে বলে আশ্বাস দেন তারা।

এ দিকে চালের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সবধরনের সবজির দামও। দাম বাড়ার তালিকার শীর্ষে রয়েছে শিম। প্রতি কেজি শিমের দাম ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দরে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। কাঁচা মরিচের দাম ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। গত সপ্তাহে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। ৫০ টাকার কমে কোনো সবজি মিলছে না। পটোল, ঝিঙা, করলা, ঢেঁড়স, ধুন্দল, বেগুনসহ সব সবজিই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার ওপরে। প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বেগুন ও বরবটি। ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে টমেটো। উস্তের দাম ২০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।

বাজারে শীতের আগাম সবজি হিসেবে এসেছে বাঁধাকপি। তবে দাম বেশ চড়া। ছোট আকারের প্রতিটা বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে ছোট আকারের একেকটি ফুলকপি। প্রতি কেজি ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে শসা। গাজরের দাম ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১০০ ও ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহের মতোই বাজার ও মানভেদে প্রতি কেজি পটোল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে। ঝিঙা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।

বিক্রেতারা জানান, আগের সপ্তাহের মতোই বাড়তি দামে স্থিতিশীল রয়েছে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম। প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকা এবং দেশী রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। বাজারে গতকাল প্রতি কেজি সাদা বয়লার মুরগি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। আর প্রতি কেজি লাল মুরগি বিক্রি হয় ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা দরে। প্রতি কেজি গরুর গোশত ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা এবং খাসির গোশত ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/253948